ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ছোট ঋণগ্রহীতারাও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৪ মে ২০১৫

ছোট ঋণগ্রহীতারাও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন

রহিম শেখ ॥ এবার ছোট ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক সুবিধা দিতে নীতিমালা পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নীতিমালায় এক বা একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে দায়গ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের ঋণের বকেয়া অঙ্ক কমপক্ষে ৫ কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে। আর এ পুনর্গঠনের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ১২ বছর। একই সঙ্গে প্রতারণা কিংবা জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোন ঋণগ্রহীতা এ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করেছে। আর এই প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রী আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রে আরও জানা যায়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে বেগবান করার পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণ আদায়ের বিষয়টি আগামী বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যে কারণে সঠিক সময়ে যারা ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি, এমন সব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের সহায়তার জন্য নীতিমালা পুনর্গঠন করা হচ্ছে। আর এ পুনর্গঠনের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ১২ বছর। অর্থাৎ মেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ বছর আর চলমান ও তলবি ঋণের ক্ষেত্রে ৬ বছর। পুনর্গঠিত নীতিমালায় ব্যাংকের ঘোষণা করা সুদ হার থেকে রেয়াত দিয়ে পুনর্গঠিত ঋণের সুদের হার আরোপ হবে। কোন অবস্থাতেই এই সুদ হার তহবিল ব্যয় অপেক্ষা কম হবে না। একই সঙ্গে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনা করে সুদ মওকুফের সুবিধা দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বড় ঋণগ্রহীতাদের পাশাপাশি এবার ছোট ঋণগ্রহীতাদের আর্থিক সুবিধা দিতে নীতিমালা পুনর্গঠন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের সামর্থ্যরে বিষয়টি বিবেচনা করে সুদ মওকুফের সুবিধা দেয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তবে প্রতারণা কিংবা জাল-জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোন ঋণগ্রহীতা এ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন না। পুনর্গঠন নীতিমালাটি প্রতিবেদন আকারে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ব্যাংক খাতে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়েছে এমন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপের ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ রেখে নীতিমালা অনুমোদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নামমাত্র ডাউন পেমেন্টে (এককালীন পরিশোধ) ১২ বছর মেয়াদে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ রাখা হয়। এতে বলা হয়, পুনর্গঠন সুবিধা নেয়ার পর কোন গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক দেউলিয়া আইনে মামলা করে সমুদয় টাকা আদায় করতে পারবে। কিন্তু প্রতারণা এবং জাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কোন ঋণগ্রহীতা এ পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন না। এসব ঋণের কিস্তি ও সুদের হার নির্ধারণের ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক নির্ধারণ করবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থেই এ নীতিমালা। এ নীতিমালা নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা ঠিক নয় বলে তিনি জানান। এদিকে গত মার্চ মাসে ব্যাংকের ঋণ আদায় ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী ভাল গ্রাহকদের জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আদায়যোগ্য সুদ বা মুনাফার ১০ শতাংশ মওকুফ (রিবেট) সুবিধা ঘোষণা করে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, চলমান ঋণের ক্ষেত্রে ৩ বছর একাধিক্রমে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে ৩য় বছরান্তে ভাল ঋণগ্রহীতার হিসেবের বিপরীতে উক্ত বছরে আদায়কৃত সুদ বা মুনাফার কমপক্ষে ১০ শতাংশ অব্যাহতি (রিবেট) দিতে হবে। পরবর্তী বছরগুলোতে ভালগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত থাকলে এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে হবে। একইভাবে তলবি ও মেয়াদী ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রেও এসব সুবিধা দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলো বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাল ঋণগ্রহীতাদের পুরস্কৃত করে সামাজিকভাবে মর্যাদা সম্পন্ন বিবেচনা করার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে। সার্কুলারে ‘ভাল গ্রাহক’র সংজ্ঞাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। চলমান, তলবি ও মেয়াদী ঋণের গ্রাহকরা পরপর ৩ বছর ভালভাবে ঋণ পরিশোধ করেছেন, যাদের কোন ঋণ শ্রেণীকৃত করা হয়নি এবং তিন বছরের মধ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকৃত হয়নি তারা ‘ভাল ঋণগ্রহীতা’ বলে বিবেচিত হবেন। তবে তিন বছর হিসাবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান গ্রাহকের চলতি বছর শেষের লেনদেনের সঙ্গে আগের দুই বছরের লেনদেন বিবেচনায় নিতে হবে।
×