ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক নায়েক সাসপেন্ড

ছাত্র ইউনিয়নের ঘেরাওয়ে পুলিশী নিপীড়নের তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১২ মে ২০১৫

ছাত্র ইউনিয়নের ঘেরাওয়ে পুলিশী নিপীড়নের তদন্ত শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বর্ষবরণে নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশী হামলায় ছাত্র ইউনিয়নের এক নারী নেত্রীর ওপর ঘটনায় পুলিশের নায়েক মোঃ আনিসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতরের তরফ থেকে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ডিএমপির গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের এক নারী কর্মীর ওপর পুলিশের নিপীড়নের ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলে। পুলিশের মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ডিসি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সোমবার বিকেলে সংবাদ মাধ্যমকে পুলিশের নায়েক আনিসকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশের নায়েক আনিস মিরপুর পিওএম এ (পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট) কর্তব্যরত ছিলেন। সোমবার তাকে অতিরিক্ত ফোর্সের সঙ্গে তাকে আনা হয়েছিল। ছাত্র ইউনিয়নের নারী নেত্রীদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করেন বরখাস্তকৃত এই পুলিশের নায়েক আনিস। নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচারের দাবিতে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করতে আসা আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটার ঘটনায় নায়েব আনিসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে জানিয়ে পুলিশের মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত ডিসি জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচারের দাবিতে রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয় ঘেরাও করতে যান ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাদের ওপরই লাঠিচার্জ ও হামলা চালায়। পুরুষ পুলিশের টানা হ্যাঁচড়া ও লাথি-ঘুষি খেয়ে কয়েকজন ছাত্রীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মী ৩০ জন ও পুলিশের ৬ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশত জন আহত হন। এর মধ্যে ১০ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ঘেরাও কর্মসূচী থেকে ছাত্র ইউনিয়নের ৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠন ॥ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচীতে পুলিশী হামলার ঘটনায় পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের নায়েক আনিসকে বরখাস্ত করা ছাড়াও ডিএমপির যুগ্ম-পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমানকে প্রধান করে সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলি। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা রবিবারের কর্মসূচীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে পুলিশের কয়েকটি ব্যারিকেড পেরিয়ে কীভাবে মিন্টো রোডে মন্ত্রিপাড়ায় পৌঁছল তাও খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। রবিবার ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচীতে পুলিশের লাঠিপেটার প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য মঙ্গলবার সারাদেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট ডেকেছে। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি ॥ এদিকে সোমবার রাতে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশনস) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর দফতর) আনোয়ার হোসেনকে। আর কমিটির অপর সদস্য হচ্ছেন পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ক্রাইম-মেট্রো) কাজী জিয়া উদ্দিন। আজ সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক ॥ গত ১০ মে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশের নৃশংস হামলা, পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে সংগঠিত যৌন নিপীড়নের ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার, ঘটনাস্থলের নিষ্ক্রিয় পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবং সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ডাকা সারাদেশের সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘটের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ মে দুপুর ১২টায় মিছিল-সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন, সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্ত্তী রিন্টু, দফতর সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, সাধারণ সম্পাদক ইভা মজুমদার। নেতৃবৃন্দ বলেন, নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনে গত রবিবার ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেকসহ ৩৪ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করা হয়েছে, ৫ জনকে পুলিশ আটক করেছে। এই সময় অনেক নারী কর্মী পুলিশের বর্বর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। নারী লাঞ্ছনার বিচার করতে পারেনি যে পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের হাতেই লাঞ্ছিত হয়েছে আমাদের বোনেরা। এ ঘটনা প্রমাণ করেছে পুলিশ হলো নারী লাঞ্ছনাকারীদের মদদদাতা এবং নিজেরাও এই কর্মকা-ে যুক্ত। আমরা সংবাদ সম্মেলন থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। নেতৃবৃন্দ সারাদেশের ছাত্রসমাজের প্রতি ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে ধর্মঘটের প্রচার করতে গিয়ে সংগঠনের খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক সুজয় সাম্যকে হামলার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসির রাস্তায় ভিড়ের সুযোগে একদল সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়ক পরিকল্পিতভাবে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার ২৮ দিন অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন দোষীদের রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করেছে।
×