ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানিকগঞ্জে বজ্রপাতে স্কুল ছাত্র নিহত, মুন্সীগঞ্জে আহত ১ শিক্ষার্থী

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি ও কালবৈশাখী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১২ মে ২০১৫

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি ও কালবৈশাখী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সোমবার সকালের শুরুটা ছিল অন্য দিনের মতোই। সকাল হতে রাজধানীর কর্মব্যস্ত হতে শুরু করেছে। সবাই ছুটে চলছে অফিসের পথে। কিন্তু হঠাৎ করেই চিরচেনা পরিবেশ যেন বদলে যেতে থকে। আচমকা ঘনকালো মেঘে চারদিক হয়ে ওঠে অন্ধকার। পরিবেশটাই যেন অচেনা। রাত কি সন্ধ্যা বোঝার উপায় নেই। হঠাৎ মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি। পথচারী ও অফিসগামীরা যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খুঁজতে থাকে আশ্রয়ের সন্ধানে। সকালে ধূসর মেঘ ও বৃষ্টি কারণে রাজধানীতে ক্ষণিকের জন্য এমনি পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। এমনি অন্ধকার পরিবেশের সৃষ্টি হয় যে সকাল সাতটা থেকে ৮টা পর্যন্ত সব বাসাবাড়িতেই আলো ফুটে ওঠে। রাস্তায় গাড়িগুলোকে হেড লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়ে যায় রাস্তায় বের হওয়া মানুষগুলো। ছাতা নিয়ে বের না হওয়ার কারণে অনেকে ভিজে একাকার হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা। সড়কে পানি জমে যাওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। সৃষ্টি হয় ব্যাপক যানজটের। এদিকে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে সকালে বয়ে যায় কালবৈশাখী। ফলে ক্ষণিকের জন্য স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষতি হওয়ার কারণে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বজ্রপাতের কারণে মানিকগঞ্জে এক স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৫ জন স্কুল শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে সকালে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর বিজয়নগরে নির্মাণাধীন স্থাপনার দেয়াল ও রাস্তার কিছু অংশ ধসে পড়েছে। এছাড়া আশপাশের বেশ কিছু জায়গায় ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির তোড়ে মাটি সরে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রাস্তা ধসে তিতাস গ্যাস সরবরাহের পাইপ ফেটে গেছে। তবে তা দ্রুত মেরামত করায় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার ভোর চারটা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে ভারি বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর মাদারীপুরের ওপর দিয়ে ভোর থেকেই কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। একই সঙ্গে এসব এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাতও রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে রাজধানীতে সকাল ৭টা থেকে ৮টা মধ্যে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত বয়ে যাওয়ায় ভারি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকায় আধাঘণ্টায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও রাঙ্গামাটিতে ৫ মিলিমিটার, সীতাকু-ে ১৩, সন্দ্বীপে ১৮, সিলেটে ১৭, শ্রীমঙ্গলে ৩, ফেনীতে ২৫, মাইজদীকোর্টে ৩২, হাতিয়ায় ২০, কুমিল্লায় ২১, চাঁদপুরে ৪৪, ময়মনসিংহে ১৩, টাঙ্গাইলে ১৯, ফরিদপুরে ১৮, মাদারীপুরে ৩০, বরিশালে ১৫, ভোলায় ১৫, পটুয়াখালীতে ১, যশোরে ৫, চুয়াডাঙ্গায় ৬, ঈশ্বদীতে ১০, রাজশাহীতে ১, বগুড়ায় ১৮, রংপুরে ৪, শরীয়তপুরে ২ এবং সৈয়দপুরে ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় আজও বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাতে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও বৃষ্টির কারণে জনজীবনের কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে। দেশের ভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রও অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মংলায় ৩৬.৫ ডিগ্রী। অপর দিকে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৪ ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সোমবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া ময়মনসিংহে ৩০.৮, টাঙ্গাইলে ৩১.২, ফরিদপুরে ৩৪.৬, মাদারীপুরে ৩৪.৮, চট্টগ্রামে ৩৪.৫, সন্দ্বীপে ৩৪.১ সীতাকু-ে ৩৩.৫, রাঙামাটিতে ২৬, কুমিল্লায় ৩১, চাঁদপুরে ৩৩, মাইজদী কোর্টে ৩৩.৫, ফেনীতে ৩২.২, হাতিয়ায় ৩৪.২, কক্সবাজারের ৩৪.৫, কুতুবদিয়ায় ৩৩, টেকনাফে ৩৩, সিলেটে ৩২.৪, শ্রীমঙ্গলে ৩১.৪, রাজশাহীতে ৩৪.৪, ঈশ্বরদীতে ৩৪, বগুড়ায় ৩১.৬, রংপুরে ৩১, দিনাজপুরে ৩১.৮, খুলনায় ৩৬.২, মংলায় ৩৬.৫, সাতক্ষীরায় ৩৬, যশোরে ৩৫.৮, চুয়াডাঙ্গায় ৩৫.৮, বরিশালে ৩৪.৬, পটুয়াখালীতে ৩৫.৫, খেপুপাড়ায় ৩৪.৫, এবং ভোলায় ৩৪.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারি বৃষ্টির কারণে সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর স্কাউট মার্কেটের পাশে ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের নির্মাণাধীন ৭১ নম্বর বহুতল ভবনের প্রায় একশ ফুট সীমানা প্রাচীর ও সমপরিমাণ রাস্তা ধসে পড়ার ঘটনা ঘটে। বৃষ্টির পানির তোড়ে স্কাউট মার্কেটের পাশে ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের প্রাচীর দেয়ালের প্রায় একশ ফুট ধসে পড়ে। সেইসঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ রাস্তা ধসে যায়। রাস্তা ধসে পড়ে নিচু হয়ে গেলে আশপাশের সব পানি প্রচ- গতিতে সেই গর্তে পড়তে থাকে। পানির তোড়ে রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় ফাটল ও গর্তের সৃষ্টি হয়। এমন গর্ত আর ছোট বড় ফাটল দেখা দেয় আশপাশের এলাকার ছোট ছোট রাস্তায়ও। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত সেখানে গিয়ে ধসে পড়া রাস্তা ও দেয়ালের আশপাশের সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পানির তোড়ে মাটি, ইট, বালু সিমেন্টের ধাক্কায় রাস্তার নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাস সরবরাহের পাইপ ফেটে যায়। সেখান দিয়ে গ্যাস বের হতে থাকে। খবর পেয়ে তিতাস গ্যাসের লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাইপের ফাটল মেরামত করে। ফলে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। মানিকগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে সকাল ৬টার দিকে জেলার পৌর এলাকাসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যালয়, ৫০/৬০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অসংখ্য গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুত লাইনে গাছ উপড়ে পড়ায় অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে পাকা ধানের। ঝড়ের সময় বজ্রপাতে একজন স্কুল ছাতের মৃত্যুও খবর পাওয়া গেছে। মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, ঝড়ে বজ্রপাতের কারণে সদর উপজেলার বাংলাবাজার বানিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। চাঁদপুর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২শতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা ভেঙ্গে পড়ায় মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ফরিদগঞ্জ, ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় সোমবার সকাল ৮টার পর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বজ্রপাতের কারণে ফরিদগঞ্জে দু’জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভোলা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বৈশাখী ঝড়ের কারণে সদর উপজেলার ইলিশা ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যাত্রীদের ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ভোলার মনপুরার মেঘনায় ঝড়ের কবলে পড়ে একটি কার্গোবাহী জাহাজ ডুবে গেছে। দৌলতখান উপজেলার লঞ্চঘাটের পল্টুন ঘূর্ণিঝড়ে ঘাট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
×