ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন সনৎকুমার সাহা ও সাদী মহম্মদ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১১ মে ২০১৫

রবীন্দ্র পুরস্কার পেলেন সনৎকুমার সাহা ও সাদী মহম্মদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পঁচিশে বৈশাখ শুক্রবার ছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী। আর রবিবার কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উদ্্যাপন করল বাঙালীর মননের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে বৈশাখী বিকেলে প্রদান করা হলো বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত রবীন্দ্র পুরস্কার ২০১৫। সঙ্গে ছিল রবি ঠাকুরকে নিয়ে উপস্থাপিত স্মারক বক্তৃতা। রবীন্দ্রসাহিত্যে গবেষণা ও চর্চায় অবদানের জন্য অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদী মহম্মদকে এ বছরের রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। সন্ধ্যায় ছিল গান ও কবিতার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। কবিগুরুকে নিবেদিত এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আর রবীন্দ্র স্মারক-বক্তৃতা প্রদান করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করেন অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সাদী মহম্মদ। রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য দুই ব্যক্তিত্বকে সনৎকুমার সাহা ও সাদী মহম্মদকে পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে প্রদান করা হয় ৫০ হাজার টাকা। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও শিল্পীর হাতে পুষ্পস্তবক, সনদ, স্মারক ও পুরস্কারের অর্থমূল্য তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনুভূতি ব্যক্ত করে সনৎকুমার সাহা বলেন, আজ বিশ্ব মা দিবসে এই পুরস্কার গ্রহণ আমার জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আর আমার এ পুরস্কারপ্রাপ্তির মূল উৎস হচ্ছেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। এক সময় তাঁর লেখা পড়েই আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণায় অনুপ্রাণিত হই। তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রগবেষণা ও চর্চায় আরও নিবিড়ভাবে নিবিষ্ট হওয়ার দায় এ পুরস্কার তৈরি করবে। পুরস্কার গ্রহণের অনুভূতি জানিয়ে সাদী মহম্মদ বলেন, রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত এ পুরস্কারপ্রাপ্তি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আর এ অর্জনের পেছনে রয়েছে আমার মায়ের অনন্য ভূমিকা। স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ বলেন, একটি সুসংস্কৃত পারিবারিক পরিম-ল নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথের মানস গঠনে ভূমিকা পালন করলেও নিজেকে তিনি তৈরি করেছেন এবং ক্রমাগত ছাপিয়ে গেছেন নিজেরই মেধা, মনন, শ্রম ও দূরকল্পনায়। তাঁর চিন্তা ও ভাবনায় ব্যাপ্ত ছিল স্বদেশ। এজন্যই আপন করে আলিঙ্গন করতে পেরেছিলেন বিশ্ববোধকে। তিনি বলেন, একক ব্যক্তির মাঝে বহুত্বের বোধ সঞ্চারের মধ্য দিয়ে মহৎ মানবিকের আবাহনই রবীন্দ্রজীবন ও দর্শনের মূল কথা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, রবীন্দ্রচর্চার জন্য রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরুর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ চিহ্নিত করে সেসব স্থানে ফলক প্রতিস্থাপন করা হবে। এছাড়া বাংলা একাডেমির নতুন ভবনে গড়ে তোলা হবে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র। একইসঙ্গে আমাদের নবীন প্রজন্মকে রবীন্দ্রনাথের মহৎ-উদার দর্শনের আলোকে সুশিক্ষিত ও সুসংস্কৃত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই রবীন্দ্রচিন্তা সার্থকতা পাবে। তিনি বলেন, মানবিকতার সাধনার সঙ্গে সঙ্গে অপসংস্কৃতিকে প্রত্যাঘাত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলাতেই আজকের দিনে রবীন্দ্র-স্মরণের প্রাসঙ্গিকতা নিহিত। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকেই বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। পারিবারিক সূত্রে জমিদারির দায়িত্ব পেয়ে তিনি এক্ষেত্রে প্রথা ভাঙ্গার চেষ্টা করেছেন। মহাজনের প্রতাপের হাত থেকে দরিদ্র কৃষকদের রক্ষার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান এবং নানান জনহিতকর কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন। তিনি বলেন, জীবন ও সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হলেও পেরিয়ে গেছেন নিজের সৃষ্টির সত্যে ও সৌন্দর্যে। স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, এ বছর রবীন্দ্রজয়ন্তী বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এবারই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা নতুন মাত্রা লাভ করবে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি সৈয়দ শামসুল হক, নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, রাজনীতিক মোনায়েম সরকার, লেখক ড. ফজলুল আলম, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল প্রমুখ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা আফরোজ ও সামিউল ইসলাম পোলাক। সঙ্গীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী লিলি ইসলাম, অনিমা রায় ও স্বপ্নীল সজিব। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ রায় (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) ও ইবনে খালদুন রাজন (কী-বোর্ড)। বৈশাখী সন্ধ্যা জাদুঘরে ‘জয়ধ্বনির গান’ ॥ রবিবার বৈশাখী সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘জয়ধ্বনির গান’ শীর্ষক সঙ্গীতানুষ্ঠান। গানের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল কলকাতার তারা মিউজিকের সঞ্চালক রিনি বিশ্বাসের কবিতা আবৃত্তি। একইসঙ্গে তিনি অনুষ্ঠানটিও সঞ্চালনা করেন। সুরেলা এ সঙ্গীতাসরের আয়োজন করে জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক পরিষদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং বিশিষ্ট নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ফাতেমাতুজ জোহরা ও সুজিত মোস্তফা। সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সুজন শর্মা। সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। মধুময় কণ্ঠে মিলনায়তনভর্তি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রিয়াংকা গোপ, ড. প্রদীপ কুমার নন্দী, মাহমুদা মৌমিতা ও প্রকুশ কুমার বণিক। সব শেষে কবিতার দোলায়িত ছন্দের আবৃত্তি করেন রিনি বিশ্বাস। শিকল্পকলায় ব্রতচারী সঙ্গীতসন্ধ্যা ॥ ‘যুক্ত করো হে সবার সঙ্গে, মুক্ত কর হে বন্ধ’ সেøাগানে পালিত হলো ব্রতচারী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্তের ১৩৪তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে রবিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্রতচারী বাংলাদেশ। দুই পর্বে বিভক্ত এই আয়োজনের সূচনা হয় ‘আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা’ গানের একদল ছোট্টমনিদের মনোজ্ঞ নৃত্যের মধ্য দিয়ে। এ সময় অনুষ্ঠানের অতিথিরা প্রজ্বলন করেন মঙ্গলপ্রদীপ। সংগঠনের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে ‘শিক্ষার্থীর সুষম বিকাশে ব্রতচারী আন্দোলন : পরিচয় ও প্রাসঙ্গিকতা বিচার’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন কাজী নুসরাত সুলতানা। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য রতন সিদ্দিকী ও আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নিয়ে ব্রতচারী সঙ্গীত ও নাচ পরিবেশন করে উদীচী ও নৃত্যজন।
×