ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়েমেন সঙ্কট পরিণত হচ্ছে ইউরোপের সমস্যায়

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১০ মে ২০১৫

ইয়েমেন সঙ্কট পরিণত  হচ্ছে ইউরোপের  সমস্যায়

ইয়েমেনে অনেক কিছুরই অভাব রয়েছে, কিন্তু এদের মধ্যে অস্ত্রের নাম নেই। ইয়েমেনিদের নিজেদের হাতেই ৪ থেকে ৬ কোটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে চলতি বছরের প্রথম দিকে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের এক রিপোর্টে জানানো হয়। এত আগ্নেয়াস্ত্র ইয়েমেনের ২ কোটি ৫০ লাখ লোকের জন্য যথেষ্ট, যদিও দেশটিতে গ্রেনেড, হ্যান্ডগান ও একে-৪৭ রাইফেলের চাহিদা আট গুণ বেড়ে গেছে। অন্য যা কিছুই ঘটুক না কেন, কোন পক্ষের অস্ত্রের অভাব পড়ায় যে ইয়েমেনে লড়াই বন্ধ হবে না, এটা নিশ্চিত। বিশ্লেষণ ইন্ডিপেন্ডেন্টের। ইয়েমেনি রাজনীতি খুবই জটিল ও উদ্ভট। সেখানে সাবেক শত্রুরা একে অপরকে বরণ করে নেয় এবং পুরনো বন্ধুরা একে অপরকে হত্যা করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু এ অস্বাভাবিকতার অর্থ এই নয় যে, ইয়েমেনের লড়াই সেখানে সৌদিরা ২৬ মার্চ বিমানের সাহায্যে বোমাবর্ষণ করতে শুরু করে, তা বিশ্বের অবশিষ্টাংশের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। এ লড়াইজনিত অরাজকতা প্যারিসের শার্লিহেবদো পত্রিকা অফিসে সংঘটিত হামলার মতো আল কায়েদা ধাঁচের হামলার উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। ইয়েমেনে এক স্থায়ী যুদ্ধাবস্থা দেখা দিলে নৌকাভর্তি লোকজন পশ্চিম ইউরোপ বা তারা আশ্রয় পেতে পারে এমন অন্য যে কোন স্থানে দলে দলে যেতে শুরু করছে। যখন ইউরোপীয় নেতারা সন্ত্রাসবাদ বা ভূমধ্যসাগরে শরণার্থীদের মৃত্যুর মূল কারণ ঐসব যুদ্ধ উপেক্ষা করে সন্ত্রাসবাদ ও মানুষের এরূপ মৃত্যু রোধের জন্য কোন কিছু করছেন বলে দাবি করেন, তখন তা উদ্ভটই মনে হয়। এখন অবাধ ইয়েমেন লড়াই চালানোর কাজটি সৌদি আরব ও পারস্য উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশগুলোর হাতেই রয়ে গেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র এর অবসান ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে অসমর্থ হয়। যা বাস্তবে ঘটছে তা যেভাবে সেটি উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা থেকে খুবই ভিন্ন সৌদিরা বলছে যে, তারা ইরান সমর্থিত হুতি শিয়া মিলিশিয়াদের ইয়েমেন দখল ব্যর্থ করে দিচ্ছে এবং বৈধ প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর হাদিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে চায়। বস্তুত হুতিদের গত বছর ইয়েমেনের বিরাট অংশ দখলের সঙ্গে ইরানের তেমন সম্পর্ক নেই। হুতিদের পুরনো শত্রু সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহের সঙ্গে তাদের মৈত্রী স্থাপনই তাদের ঐ সাফল্যের বড় কারণ। সালেহ এখনও ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন। সৌদি আরব ও উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক দেশগুলো ইয়েমেন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন, কারণ দেশটি তাদের প্রতিবেশী। কিন্তু বিশ্বের অবশিষ্টাংশের জন্য উদ্বেগের যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে। কারণ ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সোমালিয়ার মতো ইয়েমেনেও অরাজকতার মধ্যে যুদ্ধাবাজদের শাসন কায়েম হচ্ছে। এসব স্থানে জনসমষ্টির অনেকাংশের জন্য জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই তারা পালিয়ে যেতে যে-কোন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। এ ধরনের জাতীয় দুর্যোগই লোকজনকে ইউরোপে অভিবাসন লাভের আশায় ভূমধ্যসাগর পার হতে মরিয়া করে তুলেছে নৌকা ও ভেলা বোঝাই হয়ে।
×