ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

থাই জঙ্গল থেকে ১১৭ জন উদ্ধার

বর্মাইয়্যা আপদ ভয়ঙ্কর

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ মে ২০১৫

বর্মাইয়্যা আপদ ভয়ঙ্কর

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে অর্থাৎ কক্সবাজার জেলার সর্বত্র এবং সন্নিহিত অঞ্চলগুলোতে মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নাগরিকদের অপ্রতিরোধ্য উৎপাতে এলাকার জনজীবনে ব্যাপক উদ্বেগ ও শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। মিয়ানমারের (সাবেক বার্মা) রোহাং (সাবেক আরাকান) প্রদেশের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নারী-পুরুষ ও শিশু নির্বিশেষে বড় একটি অংশ অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে নানামুখী অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে এবং এদের উৎপাতে এ দেশের সর্বনাশ ডেকে আনছে। কক্সবাজার অঞ্চলজুড়ে এ রোহিঙ্গাদের বর্মাইয়্যা নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ ‘রোয়াইঙ্গা’ (রোহিঙ্গা) নামেও ডেকে থাকে। তবে বর্মাইয়্যা নামটি সর্বাধিক প্রচলিত। এ বর্মাইয়্যারা তাদের গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণে থেকে হেন অপকর্ম নেই যা করেছে না। গত দেড় যুগ ধরে এরা মানবপাচারে লিপ্ত আছে। এদের পাল্লায় পড়ে ইতোমধ্যে এ দেশের হতদরিদ্র অসংখ্য মানুষ বন্দীশিবিরের বাসিন্দা হয়েছে। পাশাপাশি অনেকের স্থান হয়েছে গণকবরে। গত প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে মালয়েশিয়া সংলগ্ন থাই সীমান্ত এলাকার শংখলার জঙ্গলে একের পর এক আবিষ্কৃত হয়েছে গণকবর, যার সংখ্যা এখন ৪০টিরও বেশি। গত শুক্রবার থাই পুলিশের অভিযানে জীবন্ত উদ্ধার হয়েছে ১১৭ জন পাচারকৃত অভিবাসী। এদের ৯১ জন বাংলাদেশী এবং অবশিষ্টরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। এরা সকলেই বাড়তি রোজগারের আশায় দুর্গম সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেয়ার পথে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে বন্দীশিবিরে আটকে রাখা হয়। এসব বন্দীশিবির থেকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ইতোমধ্যে কেউ কেউ দেশে ফিরতে সক্ষম হয়েছে। আবার কেউ কেউ মালয়েশিয়ার জেলে আটকা পড়ে আছে। বন্দীশিবির ও গণকবর আবিষ্কারের ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে হৈ চৈ পড়েছে। সর্বশেষ জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এমনিতর পরিস্থিতিতে থাই পুলিশ সন্ধিগ্ধ অঞ্চলগুলোতে জোরালো তল্লাশি অভিযান শুরু করার পর শুক্রবার বন্দীশিবিরে আটকে পড়া ১১৭ জনের অভিবাসী দলকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম শনিবার ঘোষণা দিয়েছেন, আটকেপড়া বা প্রাণ হারানো অভিবাসীদের নিয়ে বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। এদিকে দেশের কক্সবাজার অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ থাকাদের স্বজনদের মাঝে আহাজারি অব্যাহত রয়েছে। এদের অধিকাংশের কোন খোঁজ নেই। স্বজনহারারা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন হদিস মিলছে না। সঙ্গতকারণে স্বজনহারাদের মাঝে বিয়োগান্তুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, এ বর্মাইয়্যারা অবৈধপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ দেশে ঢুকে স্থায়ীভাবে শুধু বসবাসই গড়ে তুলছে নাÑ খুন খারাবি, মাদক ও মানবপাচারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অবনতি ঘটাতে ব্যাপক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এ বর্মাইয়্যারা অপ্রতিরোধ্য, যা কক্সবাজারসহ এর অধীন উপজেলার প্রশাসনগুলোর বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে আছে। শারীরিক কাঠামো, চেহারা, ভাষা এবং আচার-আচরণে এ বর্মাইয়্যাদের মিল রয়েছে কক্সবাজার অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীদের সঙ্গে। ধর্মীয় দিক থেকেও এরা দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর সুবাদে এ বর্মাইয়্যারা এ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি ঘটিয়ে চলেছে। এদের কিছু গডফাদার রয়েছে, যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের মাফিয়াদের গডফাদারদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সমুদ্রপথে শত শত মিয়ানমার ও বাংলাদেশী অসহায় হতদরিদ্র লোকদের পাচারের কাজে ব্যাপক সফলতা লাভ করার পর এরা গত কয়েক বছর ধরে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে। এ বর্মাইয়্যাদের উৎপাতে গোটা কক্সবাজার অঞ্চলের পাড়া-মহল্লার মানুষ এতই অতিষ্ঠ যে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন স্পটটি এখন এই বর্মাইয়্যাদের অপকর্মের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সে দেশের সামরিক, আধাসামরিক বাহিনী, পুলিশ সদস্য ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতন-নিপীড়নে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় এরা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশকে টার্গেট করেছে। কয়েক যুগ আগে এ বর্মাইয়্যাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের যে গোড়াপত্তন ঘটে এবং তৎকালীন সরকার বিষয়টিকে মানবিক দিক হিসেবে বিবেচনায় আনার জের হিসেবে এখন তা বড় ধরনের আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বর্মাইয়্যাদের অনেকে মানব ও মাদকপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে বিত্তের পাহাড় যেমন গড়ে তুলেছে, তেমনি নির্মাণ করেছে সুরম্য অট্টালিকা। এদের বড় একটি অংশ অবৈধপথে এ দেশের নাগরিকত্বও পেয়ে গেছে। সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। এখন মানবপাচার ও মাদকপাচারে জড়িয়ে পড়ে ডেকে এনেছে এ দেশের সর্বনাশ। ইয়াবাসহ মাদক পাচারের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে দেশজুড়ে। অপরদিকে মানবপাচারের জন্য বেছে নিয়েছে সমুদ্রের দুর্গম পথ, যা চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত। মানবপাচারের ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দীশিবির এবং গণকবরের সন্ধান লাভের ঘটনাটি এতই স্পর্শকাতর যে, থাই সরকার সেদেশে সন্দেহজনকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছ। ইতোমধ্যে সেদেশের মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। অপরদিকে তল্লাশি অভিযানে বেরিয়ে আসছে একের পর এক গণকবর। সে এক ভয়ানক নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা। এ দেশের এবং মিয়ানমারের হতদরিদ্র রোহিঙ্গাদের বাড়তি আয়ের স্বপ্ন দেখিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর পথে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নিয়ে বন্দীশিবিরে আটকে রেখে বিভিন্ন অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করে নিচ্ছে। এ মুক্তিপণ প্রদানে যারা ব্যর্থ হচ্ছে তাদের থাকতে হচ্ছে উপোসে ও অমানবিক নির্যাতনে; যার পরিণতি মৃত্যু। দলে দলে মৃতদেহ সামাল দিতে সে দেশের জঙ্গলে এদের গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। এদিকে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, থাই সরকারের গ্রেফতারি অভিযান এড়াতে আটকে রাখা অভিবাসীদের ফেলে পালিয়েছে দালাল চক্র। গত শুক্রবার থাই পুলিশ আরও চারটি বন্দীশিবির ও একটি গণকবর আবিষ্কার করেছে। সেখান থেকে ১১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯১ বাংলাদেশী। বাকিরা মিয়ানমারের নাগরিক। এছাড়া গণকবর থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও ৩৩ জনের লাশ। এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া এলাকায় বনাঞ্চল কেটে গড়ে তোলা বিভিন্ন বসতগৃহে একাধিক বন্দীশিবির রয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে। এসব বন্দীশিবিরে নির্ধারিত সময় রেখে মালয়েশিয়াগামীদের থাইল্যান্ডের পথে বড় ধরনের ট্রলারে তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। উখিয়ায় মানবপাচার কাজে স্থানীয় সানাউল্লাহ, মোঃ আমিন এবং সদ্য জেল থেকে জামিনে মুক্ত নুুরুল কবির ও তার স্ত্রী রেজিয়া আক্তার রেবী ওই সব বন্দীশিবির পরিচালনায় নিয়োজিত বলে স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ রয়েছে। এরা বর্তমানে গা-ঢাকা দিয়েছে। এদিকে স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার ভোরে পুলিশ ও মানবপাচারকারীদের সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা, হত্যা ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নিহত ৩ দালালও রয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, মানবপাচার ও ইয়াবাসহ মাদক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাতে নির্দেশ দিয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, পাচারকাজে জড়িত দালাল ও গডফাদারদের পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন রক্ষা নেই। উখিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার জানিয়েছেন, মানবপাচারকারীদের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে এবং কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। কক্সবাজার ১৭ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল আলম শনিবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, রেজু এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন ছাড়াও মানবপাচারকারী ও মাদক চোরাচালানিদের ধরতে টহল জোরদার করা হয়েছে। অভিযান সফল করতে সর্বাত্মক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে উখিয়ার শতাধিক দালালরা ইতোমধ্যে গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে। এদের সকলের নাম পুলিশের তালিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ডের মুরদাহা কারাগারে বন্দী উখিয়ার রাজাপালং পিঞ্জিরকুল গ্রামের ৩ হতভাগ্য যুবককে ফিরিয়ে আনার জন্য এনজিও হেল্পের পক্ষ থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উখিয়া থানাকে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার কারাগারসহ থাইল্যান্ডের বন্দীশিবিরগুলোতে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে গত এক সপ্তাহে উখিয়ায় ফিরে এসেছে ৫ যুবক। এনজিও সংস্থা হেল্পের কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় তাদের উদ্যোগে ফিরে আসা লোকদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এদিকে বোট ডুবিতে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মালয়েশিয়া ফেরত রাজা পালং তুতুরবিল এলাকার জসিম উদ্দিন জানান, ইতোপূর্বে ১৩৬ জনকে নিয়ে একটি ফিশিং বোট মালয়েশিয়ায় যাত্রা করে থাইল্যান্ড উপকূলে থাই নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়। কিন্তু থাই পুলিশ শুধু দালালদের গ্রেফতার করে তাদের বোটকে বিকল করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ঢেউয়ের তোড়ে বোটটি ভাসতে ভাসতে একপর্যায়ে মালয়েশিয়া সীমান্তে পৌঁছার পর সেখান থেকে মালয়েশিয়া পুলিশ ৩৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। বাকিদের মৃত্যু হয়। এই ৩৪ জন এখন মালয়েশিয়ার কারাগারে রয়েছে। অপরদিকে মালয়েশিয়ায় কারাভোগ শেষে উখিয়ায় ফিরে আসা জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে থাকা ১০২ জন সাগরে ডুবে মারা গেছে। সহযোগিতা চাইলেন থাই প্রধানমন্ত্রী ॥ মানবপাচার রোধে প্রতিবেশী মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের সহযোগিতা চেয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার তিনি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করা হবে। চলতি মাসের শেষদিকে এ বৈঠক অনুষ্ঠানের তৎপরতা চলছে। থাই প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পাচারকারীরা থাইল্যান্ডকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। অভিবাসীদের বন্দীশিবির ও গণকবরের সন্ধান পাওয়ার ঘটনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রয়েছে থাই সরকার। এদিকে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমে জানা গেছে, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে থাই সরকার ইতোমধ্যে ৫০ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতের গণকবর এলাকা পরিদর্শন ॥ মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিম শুক্রবার শংখলায় গণকবর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি উদ্ধারকৃত বাংলাদেশী নাগরিকদের দেখতে হাসপাতালেও গেছেন। এছাড়া তিনি শংখলার গবর্নর ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন। মানবপাচার বেড়েছে ॥ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে বন্দীশিবির ও গণকবর আবিষ্কার ঘটনার পর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এসব বন্দীশিবিরে পাচার ও অপহরণের শিকার হওয়া ৫ শতাধিক অভিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে জানানো হয়েছে। অপরদিকে জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিয়েছে ৫৩ হাজার মানুষ। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার। মানবপাচার বেড়েছে ৬১ শতাংশ। গঠিত হচ্ছে সারিক ॥ মানবপাচার রোধে বাংলাদেশসহ ৭ দেশ মিলে গঠিত হচ্ছে সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল ইনফরমেশন এ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (সারিক)। এ সংস্থার সদস্যরা হচ্ছেÑ বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। গত এপ্রিলে ভারতের দিল্লীতে এ সাত দেশের মাদক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আসেন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে একটি সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে জাতিসংঘ ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগ এ্যান্ড ক্রাইমের রিজিওনাল অফিস অব সাউথ এশিয়ার উদ্যোগে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আজারবাইজান, কাজাখিস্তান, কিরগিজস্তান, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান মিলে গঠিত সেন্ট্রাল এশিয়ান রিজিওনাল ইনফরমেশন এ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন সেন্টারের আদলে সারিক গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে সার্কের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে। কারণ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান মিলে পৃথক আঞ্চলিক সংস্থা জেপিসি গঠিত হয়েছে। তবে পর্যবেক্ষক হিসেবে যে কোন দেশ সারিকের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। ৩শ’ জনের মৃত্যু ॥ জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত শুক্রবার এক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে, গত তিন মাসে বঙ্গোপসাগর দিয়ে ২৫ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী নাগরিককে পাচার করেছে পাচারকারীরা। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে থাই বন্দীশিবিরে অনাহার, পানিশূন্যতা ও বোটচালকদের নির্যাতনে সাগরেই ৩শ’ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে বলা হয়, সংস্থার কর্মকর্তারা উদ্ধার হওয়া কয়েক শ’ অভিবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পাচারকারীরা কিভাবে তাদের প্রলুব্ধ করেছে তার বিবরণও দিয়েছে অভিবাসীরা। তারা বলেছে, পাচারকারীরা খুব কম খরচে মালয়েশিয়ায় যেতে প্রলুব্ধ করেছিল। মালয়েশিয়ায় তাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং চাকরির টাকা দিয়ে বিদেশ যাওয়ার জন্য নির্ধারিত টাকার অঙ্ক পরিশোধ করার প্রলোভনও দেখিয়েছিল। ইঞ্জিনচালিত বোটে উঠার পর ফিরে যেতে চাইলেও জোর করে তাদের আটকে রাখা হয়। উদ্ধারকৃতরা আরও জানিয়েছে, যেসব ক্যাম্পে মানবপাচারকারীরা অভিবাসীদের আটকে রাখে সেগুলোর অবস্থা ভয়ঙ্কর। স্বজনরা মুক্তিপণের টাকা না দেয়া পর্যন্ত তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। বন্দীশিবিরে আটক অভিবাসীদের পেটানো খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। এমনকি নারী অভিবাসীদের প্রায় সকলেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে, যারা পালানোর চেষ্টা করেছে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের উদ্বেগ ॥ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে একের পর এক অভিবাসীদের গণকবর আবিষ্কারের ঘটনা এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে ঝুঁকিপূর্ণ মানবপাচার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মানবপাচার ঠেকাতে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে আরও নিবিড়ভাবে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নিষিদ্ধ এ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযানের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
×