ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উপার্জনক্ষম সব মানুষকে করের আওতায় আনা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ মে ২০১৫

উপার্জনক্ষম সব মানুষকে করের আওতায়  আনা হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে উপার্জনক্ষম সবার ওপর ন্যূনতম কর আরোপ করা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের বাস। এর মধ্যে মাত্র ১১ লাখ লোক কর প্রদান করছেন। বিষয়টি লজ্জাজনক ও অপ্রত্যাশিত। তাই দেশের উপার্জনক্ষম সব মানুষকে করের আওতায় আনা হবে। শনিবার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিকীর আলোকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি তাঁর এ পরিকল্পনার কথা জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, সব চাকরিজীবীর বেতনের ওপর কর নির্ধারণ করা হবে। করের হার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে প্রত্যেক মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অডিট অনুযায়ী দেশে প্রায় ৪০ লাখ বাড়ি রয়েছে। যার মালিকরা কর দিতে সক্ষম। তবে দেশে করদাতার হার মাত্র ১১ লাখ। প্রত্যেক বাড়ির মালিককে করের আওতায় নিয়ে আসতে এনবিআরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কর না দিয়ে কেউ পার পাবেন না। তিনি বলেন, দেশের মাত্র ১ দশমিক ১ মিলিয়ন মানুষ কর দেয়। এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি অনেকদিন ধরে সবার উপর কর আরোপের চিন্তা করছি। সবাইকে ন্যূনতম কর দেয়া উচিত। পিআরআই’র চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তারের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের(সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান, এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের ভাইস চেয়ারম্যান আনিস এ খান প্রমুখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ ও নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর উল্লেখ করেন, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পার আওতায় প্রতিবছর গড়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে এ ব্যর্থতা বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয় মূল প্রবন্ধে। এর মধ্যে রয়েছে ধূমপান সামগ্রীর উপর কর আরোপ, বেতন থেকে কর সংগ্রহ, কর প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়ানো, আরএমজি ও নিট রফতানিকারকদের করহার বাড়ানো, সঠিক সম্পত্তি কর পদ্ধতি চালু, সব ধরনের মূলধনী লাভের উপর কর আরোপ ও নতুন ভ্যাট আইনে যুক্তিসঙ্গত সম্পূরক শুল্ক নীতিমালা। বিড়ি ও নিম্নমানের সিগারেটে উপর উচ্চহারে কর আরোপের সুপারিশ করে পিআরআই’র এই নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ধূমপানের বাজার ৪৭ শতাংশই বিড়ির দখলে। অথচ রাজস্ব আয়ে বিড়ি ধূমপান খাতের মাত্র ২-৩ শতাংশ আবদান রাখছে। অপরদিকে ৬ বছরের ব্যবধানে নিম্নমানের সিগারেটের মার্কেট শেয়ার প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে ৬৩ শতাংশ হয়েছে। বিড়ি ও নিম্নমানের সিগারেটের উপর উচ্চ কর আরোপ করলে একদিকে এই ক্ষতিকর দ্রব্যটি ব্যবহারে মানুষ নিরুৎসাহিত হবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। এ সুপারিশের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ধূমপানবিরোধী প্রচারণা চালানোর পরও বিশ্বে ধূমপান বন্ধ হচ্ছে না। জনসাধারণকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সরকারী ৪টি ব্যাংক থেকে ট্রেজারি কাজের জন্য একটি ব্যাংক রেখে বাকি ৩টি ব্যাংকের মার্জের বিষয়ে পিআরআই’র প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিভাবে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করা যায় সেজন্য পিআরআইকে একটি গাইডলাইন তৈরির আহ্বানও জানাই। এ সময় মোবাইলের উপর ট্যাক্স ব্যবস্থা ভাল নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। এমসিসিআই’র সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদ হারের পার্থক্য) ৫ শতাংশের মধ্যে থাকা ভাল খবর। তবে স্প্রেড ২ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। একই সঙ্গে সুদের হার কমানো উচিত। তবে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ১৩ শতাংশ রেখে কোনভাবেই সুদ হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আগামী বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। আরএমজি খাতের কর বাড়াতে পিআরআই’র দেয়া প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, করের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস খাতকে যে ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে তা না দিয়ে কারখানা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে থোক বরাদ্দের মাধ্যমে এ সুবিধা দেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, ধূমপান সামগ্রীর উপর কর বাড়ালে বড় ধরনের রাজস্ব পাওয়া যাবে।
×