ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে ঈদের নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ৯ মে ২০১৫

চলছে ঈদের নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ

সাজু আহমেদ ॥ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হওয়া নাটকগুলোর দর্শক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। ভাল গল্প এবং নির্মাণশৈলীর নতুনত্বের অভাবের পাশাপাশি নতুন অভিনেত্রী অভিনেত্রীদের অপেশাদারিত্বমূলক আচরণে দর্শকবিমুখতা তৈরি হয়েছে। সঙ্গে বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা তো আছেই। টিভি মিডিয়ার এ সঙ্কট চলমান অবস্থায় আগামী ঈদ-উল-ফিতরের বিশেষ অনুষ্ঠানমালায় প্রচারের জন্য বিশেষ নাটক টেলিফিল্ম নির্মাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নির্মাতারা। এ জন্য অভিনয়শিল্পীদের সিডিউল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁরা জানিয়েছেন, চ্যানেলের সংখ্যা বাড়ায় অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। সেই হারে বেড়েছে কাজের পরিধি; তবে বিজ্ঞাপনের রেট না বাড়া তুলনামূলক চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞাপন না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নির্মাতা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। ফলে ভাল এবং মানসম্পন্ন নাটক বা টেলিফিল্ম নির্মাণ অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করছেন তাঁরা। এছাড়া ঈদ আয়োজনে ধারাবাহিক নাটক প্রচারও যেন একটি ব্যবসায়িক ফর্মুলা হয়ে গেছে চ্যানেলগুলোর। এবার ঈদেও বেশিরভাগ চ্যানেলই একটি-দুটি এমনকি তিনটি ধারাবাহিক নাটকও প্রচার করবে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশের সব টিভি চ্যানেল মিলিয়ে গতবারের মতো এবারও ঈদে ধারাবাহিক, এক ঘণ্টার নাটক এবং টেলিফিল্ম মিলে তিন শতাধিক নাটক প্রচার হবে। আর এর মধ্যে অভিনেতা নির্মাতার নাটক থাকবে দেড় শতাধিক। এদিকে কাজের সংখ্যা বাড়লেও কন্টেন্ট এবং ভাল গল্পের অভাবে দর্শক টানতে পারছে না নাটক ও টেলিফিল্ম। বিশেষ করে ঈদের জন্য দর্শকদের বাড়তি চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিশেষ নাটক নির্মাণ করা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে আগে প্রচার না হওয়া নাটক বা টেলিফিল্ম ঈদে চালিয়ে দেয়া হয় বলে দর্শকরা ভাল কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হোন। বিধায় রিমোর্ট ঘুরিয়ে চলে যান ভারতীয়সহ ভিনদেশী চ্যানেলে। এ বিষয়ে জনপ্রিয় এক অভিনেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, আসলে সত্য কথা বলতে কীÑ এখন আর কোন নাটকের জন্য দর্শকদের কাছে সাড়া পাওয়া যায় না। অনেক চ্যানেল অনেক নাটক। দর্শক কোনটা রেখে কোনটা দেখবে। এ ছাড়া বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা রয়েছে। এখন আর আগের মতো জনপ্রিয় নাটক নির্মাণ হয় না। কারণ নাটকের গল্প খুব দুর্বল থাকে। পাশাপাশি পেশাদারের চেয়ে অপেশাদাররা বেশি নাটক তৈরি করছেন। পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তুলনায় অপেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বেশি কাজ করছেন। এ ছাড়া নাটকে বাজেট খুব কম থাকে। সবকিছু মিলিয়ে ভাল নাটক খুব বেশি হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে দুই-একটি ভাল নাটক নির্মিত হলেও খারাপ কাজের ভিড়ে সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভাল কাজের ভাল নির্মাতাদের বেশি করে নাটক নির্মাণে সুযোগ করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন ওই অভিনেতা। তাঁর মতে, চ্যানেলে প্রিভিউ কমিটিতে যাঁরা থাকেন তাঁরা অবশ্যই যোগ্যতাসম্পন্ন। তাঁরা যদি আরেকটু সচেতন হয়ে নাটক প্রচারের সিদ্ধান্ত দেন তবে ভাল কিছু হবে। অনেক সময় দেখা যায় মানের দিক দিয়ে একটু দুর্বল নাটকগুলো বেশি প্রচার হয়। আর ভাল নাটকগুলো আটকে থাকে। এখানে তাঁদের আরেকটু সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ের নাটক প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচালক বলেন, আমাদের নাটকের গল্পকার বা চিত্রনাট্যকাররা দর্শকের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করতে পারছেন না। ভারতের সিরিয়ালগুলোতে বিশেষ দিনগুলোর ছোঁয়া থাকে। ঈদ বা পূজার আয়োজনও কিন্তু তাদের সিরিয়ালে পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের নাটকে সমসাময়িক ঘটনাগুলোকে গল্পে নিয়ে আসার চেষ্টা নেই। এখন যে নাটকগুলো হচ্ছে সেগুলো হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের মতো আরও অনেকে আছেন, তাঁরাও চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাকিদের এ বিষয়ে মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা নেই চ্যানেলগুলোরও। তারা নাটকের থেকে রিয়েলিটি শো এবং স্পেশাল প্রোগ্রাম নিয়েই বেশি ব্যস্ত বলে আক্ষেপ করেন তিনি। ঈদের জন্য সম্প্রতি একাধিক নাটক নির্মাণ করেছেন তরুণ পরিচালক আদিত্য জনি। ঈদের জন্য নির্মিত তাঁর নাটকগুলো হলোÑ ‘অনুক্ষণে অনুভবে’, ‘কাছে থাকাই পাশে থাকা নয়’, ‘অতিথি’ এবং টেলিফিল্ম ‘হ্যাপি বার্ড ডে টু ইউ’। ঈদের এসব নাটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় ঈদের নাটকের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বেশি থাকে। তাই ঈদের নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। ভাল গল্প, ভাল নির্মাণ এবং জনপ্রিয় শিল্পীদের অভিনয় দেখতে চায় দর্শকরা। সেদিক বিবেচনায় আমার নির্মিত নাটকগুলো দর্শকরা আলাদা আলাদা ম্যাসেজের পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ পাবেন বলে আশা করি। নাট্য পরিচালক জিএম সৈকত বলেন, ঈদের জন্য এ পর্যন্ত ‘লাভ স্পীড’ নামে একটি টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছি। এতে অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পপি, অভিনেতা আমিন খানসহ জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীরা। ভিন্ন গল্প এবং আমার বরাবরের প্রচেষ্টার জন্য এটি দর্শকদের ভাল লাগবে বলে আশা করি। এছাড়া ঈদের জন্য ‘শিল্পী’ এবং ‘ফাঁসি’ নামের দুটি নাটকসহ ঈদের আরও কয়েকটি নাটক নির্মাণের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান তিনি। তরুণ পরিচালক মিনহাজুল ইসলাম অভি বলেন, দেখুন ভাল জিনিস সবাই ভাল বলবে। সেটা ঈদেরই হোক আর অন্য কোন সময়েই হোক। আমি সব সময় দর্শকদের ভাল কিছু দেয়ার চেষ্টা করি। ভাল না হলে সে কাজে হাত দিই না। সেক্ষেত্রে ঈদের নাটক ভাল না হওয়ার কোন উপায় নেই। আমি ঈদের জন্য ছয় পর্বের একটি নাটকের শূটিং শুরু করছি আগামী ১৫ তারিখ থেকে। আশা করছি দর্শকদের ভাল কিছু দিতে পারব। এদিকে একাধিক নির্মাতা অভিযোগ করেছেন, এমনিতেই শিল্পী সঙ্কট। যেখানে শিল্পীরা শুধু অভিনয় করবেন, সেখানে ঈদ এলে অন্যের নাটকে অভিনয় না করে একই সঙ্গে নাটক লেখা, পরিচালনা, অভিনয় করে চলেছেন তাঁরা শুধু বাড়তি পয়সার জন্য। আর চ্যানেলগুলোর কর্তাব্যক্তিরাও একজন পরিচালককে তাঁদের ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অথচ কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী গেলে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যান তাঁরা। এ দ্বৈতনীতি চ্যানেলগুলোকে বন্ধ করতে হবে।
×