ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মশালায় পিএসসির আদলে আলাদা কর্মকমিশন গঠনের সুপারিশ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষক নিয়োগের মান প্রশ্নবিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৯ মে ২০১৫

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষক নিয়োগের মান প্রশ্নবিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজে শিক্ষক নিয়োগে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও গবর্নিং বডির কর্মকা-ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা। তারা বলেছেন, শিক্ষক নিয়োগে বছরের পর বছর ধরে চলা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে না পারলে শিক্ষার মান রক্ষা করা যাবে না। একই সঙ্গে শিক্ষাবিদরা দেশের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগে পিএসসির আদলে আলাদা কর্ম কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন। শিক্ষা কর্ম-কমিশন হিসেবে যে কমিশন কেবল শিক্ষক নিয়োগে কাজ করবে- জাতীয় শিক্ষা নীতিতেও সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য আলাদা কর্ম-কমিশনের কথা বলা হয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় শিক্ষাবিদ ও শিক্ষকরা এ সুপারিশ করেছেন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বক্তব্য রাখেনÑ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম চৌধুরী, সরকারী কর্ম-কমিশনের সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান আহমদ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-অর-রশিদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহাদাত আলী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর, তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষক নেতা আবদুল রশিদ, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রিপন মিয়া, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থী সামিরা সুলতানা শান্তা প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষার সকলপর্যায়ে গুণগত মানোন্নয়ন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আর এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষক। সাধারণ শিক্ষা দ্বারা বড়জোর মধ্যমপর্যায়ের গ্র্যাজুয়েট সৃষ্টি সম্ভব, কিন্তু জাতীয় উন্নয়ন ধারায় ব্যাপক ভূমিকা পালন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার মানোন্নয়নে আমাদের সকল কর্মপ্রচেষ্টা নিয়োজিত করতে হবে। কলেজ শিক্ষা, শিক্ষা কাঠামো ও পাঠ্যক্রমে মৌলিক এবং ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। কলেজ পরিচালনা এবং শিক্ষাকে যুগোপযোগী ও বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করে তোলার জন্য মৌলিক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেই লক্ষ্য নিয়েই এখন এগোতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষা এগিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি অনিয়মের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক সময় ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছিল। সেখান থেকে আমরা আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষায় অর্থ সঙ্কট একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এটাকে মাথায় রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শিক্ষার জন্য জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলেছিলেন। আজ বিশ্বব্যাপী ডিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হচ্ছে। অথচ আমরা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ বরাদ্দ করতে পারছি। তারপরও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে আসা শিক্ষাবিদ শিক্ষকরা কলেজগুলোতে শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বেশকিছু বিষয়ে নজর দেয়ার সুপারিশ করেন। তারা মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের শ্রেণীমুখী করা, পাঠ্যপুস্তক যুগোপযোগী করা, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক শিক্ষা, মানসম্পন্ন শিক্ষক, মেধারভিত্তিতে কেন্দ্রীয়ভাবে কলেজ শিক্ষক নিয়োগ, পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা কার্যক্রমের নিবিড় মনিটরিং ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দলীয় রাজনীতিকে বাইরে রাখার সুপারিশ করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, শিক্ষার মানের জন্য আমাদের শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতিতে সংস্কার আনতে হবে। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মমিন চৌধুরী শিক্ষার মানের জন্য শিক্ষাকে প্রযুক্তিনির্ভর করার পরার্মশ দেন। একই সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে গবর্নিং বডি ও এমপিদের প্রভাব বেশি থাকাকে সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বেসরকারী কলেজে গবর্নিং বডি ও এমপিদের প্রভাব বেশি। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলাদলি বন্ধ করাও জরুরী বলে মত দেন তিনি। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন শিক্ষার মানোন্নয়নের পথে শিক্ষক নিয়োগে প্রভাবশালীদের অনিয়মকে বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সারাদেশে শিক্ষক নিয়োগে এমপি-চেয়ারম্যানদের প্রভাব। এভাবে চললে শিক্ষার মান বাড়ানো যাবে না। এই শিক্ষাবিদ সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষক নিয়োগে পিএসসির মতো আলাদা কর্ম-কমিশন গঠনের সুপারিশ করেন। শিক্ষা কর্ম-কমিশন হিসেবে যে কমিশন কেবল শিক্ষক নিয়োগে কাজ করবে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকারী ও বেসরকারী কলেজগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। প্রিন্সিপালদেরও আছে স্বেচ্ছাচারিতা। ইতিহাসের শিক্ষক থাকলেও সে বিষয়ে পড়াতে দেন অন্য বিষয়ের শিক্ষককে। বিজ্ঞানের শিক্ষক থাকলেও তাকে দেখা যায় অন্য বিষয়ের ক্লাস করতে বলা হয়। এভাবে চললে হবে না। মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষার মানÑ দুটি বিষয়ের মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করব সেটাই সমস্যা। কলেজে এখন আর কোন ব্যবস্থাপনা নেইÑ এমন মন্তব্য করে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে এমপিরা বসে থাকছেন। এমপিরা না থাকলে উপজেলা চেয়ারম্যান শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, সকল কাজ এখন তথ্য-প্রযুক্তিনিভর হওয়া উচিত। এটা নিশ্চিত করতে হবে। এখন শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে। কর্মসংস্থানের সমস্যা হলে সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা নিচে নামানোর দাবি ॥ বেতন ও পদমর্যাদা বৈষম্য দূর করতে প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা একধাপ নিচে নামানোর দাবি জানিয়েছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক সমাবেশে এ দাবি জানান শিক্ষকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বৈষম্য দূর করার দাবি জানিয়ে শিক্ষকরা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বৈষম্যের কারণে সহকারী শিক্ষকরা মানসিকভাবে চরম হতাশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ বন্ধসহ ১১ দফা দাবিও জানানো হয় সমাবেশ থেকে। অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছেÑ দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক ডিগ্রী নির্ধারণ, শিক্ষকদের জন্য রেশনিং চালু, আজীবন চিকিৎসা বীমা ও শিক্ষক পরিবারের জন্য চিকিৎসা কার্ডের ব্যবস্থা ইত্যাদি। শক্ষক সাবেরা বেগমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ সংগঠনটির মহাসচিব শামসুদ্দিন আহমেদ, সংগঠনের নেতা রফিকুল ইসলাম মাসুদ, গোফরান মোস্তফা খান প্রমুখ।
×