ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুগান্তকারী পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৯ মে ২০১৫

যুগান্তকারী পদক্ষেপ

প্রবাদ রয়েছে বাংলাতেই- মৎস্য মারিব খাইব সুখে। কিন্তু মৎস্যই যদি না মেলে তবে মারিবেই কি আর খাইবেই বা কি। সুখ তো দূরে থাক, দুশ্চিন্তার পাহাড় বাড়ে মাছে-ভাতে খ্যাত বাঙালীর। কত জাতের, প্রজাতির মাছই ছিল গাঙ্গেয় বাংলায় সে সব মেলে প্রাচীন গ্রন্থে। পুকুরভরা মাছের দিনও গল্পগাথা হয়ে আছে। নিয়মনীতি না মেনে ও অপরিকল্পিতভাবে আইনকে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে অবাধে মাছ ধরার ফলে মৎস্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সহজলভ্য হয়ে সবার পাতে ধরা দেয় না। দেশের জনগণের প্রোটিন সরবরাহের অন্যতম প্রধান উৎস মৎস্য ভা-ারগুলো প্রায় মাছশূন্য। বিশেষত সামুদ্রিক মাছ। মাছের চাহিদা পূরণের অন্যতম যোগানদাতা বঙ্গোপসাগর। উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা, মৎস্য লুটেরাদের তৎপরতার কারণে প্রাকৃতিক এই মৎস্যভা-ার অনেকটা মাছশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মাছের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ও পোনা মাছ ধরা পড়ে। পোনা মাছ ফেলে দেয়া হয় সাগরে। এরা মারা যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে অবাধে মৎস্য আহরণের সুযোগ নেই প্রায়। সে ক্ষেত্রে যথাযথভাবে নিয়ম পালন করা হয়। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে নির্বিচারে মাছ শিকারের ফলে মৎস্যশূন্যতা বাড়ছে ক্রমাগত। সমুদ্রসীমা মামলায় রায় পাওয়ার পর বাংলাদেশের বর্তমান সামুদ্রিক এলাকা হচ্ছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১১৩ বর্গকিলোমিটার। যা প্রায় আরেক বাংলাদেশের সমান। এই বিশাল এলাকা এখন এ দেশের মূলত অর্থনৈতিক অঞ্চল। সামুদ্রিক সম্পদ ও মৎস্য সম্পদ কী পরিমাণ রয়েছে, তা নিয়ে কোন জরিপ বা গবেষণা কাজ সেভাবে হয়নি। ফলে যত্রতত্র অবাধে সারাবছরই সমুদ্রে মৎস্য আহরণ চলে আসছিল। সমুদ্রসীমায় মাছের ভা-ার চিহ্নিত করে তাকে রক্ষার জন্য ব্যাপক জরিপ চালানো জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নতুন সমুদ্রসীমা সংযুক্ত হওয়ার পর পরিধি বেড়েছে। সেখানকার সম্পদ সংরক্ষণ, উত্তোলন, ব্যবহারের পরিধি নির্ধারণে ও নীতিমালা প্রণয়নে গবেষণার বিকল্প নেই। মাঝে মাঝে কোন কোন সংস্থার উদ্যোগে জরিপ চালানো হলেও তাতে পূর্ণাঙ্গ চিত্র মেলে না। মৎস্যভা-ার ক্ষেত্রগুলো নিরূপণের কাজ পুরোপুরি করা হয়নি। কর্তৃপক্ষীয় তৎপরতায় রয়েছে শ্লথগতি। তেমন পরিকল্পনাও নেই তাদের। অথচ বছরে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন মাছ আহরণ করে আয় হয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো। উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে বংশ পরম্পরায়। বিগত শতকে থাই, ভারতীয়সহ বিদেশী ট্রলারগুলো বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে মৎস্য ক্ষেত্র হতে বিপুল পরিমাণ মৎস্য লুটে নিয়ে যেত। ফলে সাগরে মাছের পরিমাণ কমত। এসব কারণে দেখা গেছে প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট মাসে সাগরে সাদা মাছের আহরণ হ্রাস পাচ্ছে এবং ক্রমশ তা কমছে। এভাবে পরিমাণ হ্রাসে মন্ত্রণালয়ের টনক নড়েছে, দেরিতে হলেও। মাছের মজুদ বাড়াতে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সাদা মাছের প্রজননকাল বিবেচনায় নিয়ে টানা ৬৫ দিন সাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তা এই প্রথমবারের মতো। মাছের প্রজনন ও সর্বোচ্চ সংরক্ষণের স্বার্থে তাই ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মৎস্য ও চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধ করাটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে বাণিজ্যিক ট্রলারের সঙ্গে মৎস্য শিকারে জড়িতদের অনেকে বেকার হয়ে পড়বে এই সময়, সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণও জরুরী। বিশ্বের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলোতে এমনকি ভারতেও প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ দুই থেকে তিন মাসের জন্য। বাংলাদেশ এই প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপ নিল। বরং সম্পদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টরা সহায়ক হবেন এটাই ব্যবসায়ী, জেলেসহ দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×