ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৮ মে ২০১৫

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী

যেদিন হায়াতুদ্্ দুনিয়া বা পার্থিব জীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহ্্ জাল্লা শানহু ইরশাদ করেন : তোমরা পার্থিব জীবনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছ, কিন্তু আখিরাতের জীবনই হচ্ছে অনেক ভালো এবং স্থায়ী (সূরা আ’আলা : আয়াত ১৬-১৭)। একজন মানুষের পৃথিবীতে আগমন এবং এখান থেকে নির্গমনের মধ্যবর্তী কালটাতে যে জীবন সেটাই পার্থিব জীবন। এই পৃথিবীর জীবনের বিভিন্ন মেয়াদী সময় নির্ধারিত থাকে। এই সময়সীমা সবার এক থাকে না। পৃথিবীতে থাকার জন্য যে সময়সীমা থাকে তা আয়ু নামে অভিহিত হয়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু যার জন্য যতটুকু আয়ু নির্ধারণ করে দেন সে ততদিন পৃথিবীতে থাকতে পারে। অনেকেই অকালে ঝরে যায়, আবার অনেকের আলো-হাওয়ার এই মায়াঘেরা পৃথিবীতে আসারই সুযোগ হয় না, মাতৃগর্ভেই তারা নিঃশেষ হয়ে যায়। এই যে পৃথিবীতে আগমন ও নির্গমন কিংবা আগমনের পূর্বেই শেষ হয়ে যাওয়া- এসব রহস্য কেবলমাত্র আল্লাহ জাল্লা শানুহুই জানেন। আমরা যতই বুদ্ধিমান হই না কেন, যতই যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করি না কেন, যতই যুক্তির কষ্টিপাথরে কিংবা বৈজ্ঞানিক বিচার-বিশ্লেষণ দ্বারা যাচাই করার চেষ্টা-তদ্বির করি না কেন জন্ম ও জীবনরহস্য উদঘাটন করতে যথার্থভাবে সমর্থ হব না। শুধু এতটুকু বলতে পারব, ওয়া আল্লাহু আ’লম- আল্লাহ্্ই ভালো জানেন। কুরআন মজীদে পার্থিব জীবনের সুন্দর মিসাল বা উপমা দিয়ে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এরূপ : যেমন- আমি আসমান হতে পানি বর্ষণ করি, ফলে তা দ্বারা মাটিতে উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা হতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করে থাকে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারীরা মনে করে তা তাদের আয়ত্তাধীন, থাকেন দিবসে অথবা রজনীতে আমার নির্দেশ এসে পড়ে এবং আমি তা এমনভাবে নির্মূল করে দেই যেন গতকালও তার অস্তিত্বই ছিল না। এভাবে আমি নিদর্শনাবলী বিবৃত করি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য (সূরা ইউনুস : আয়াত ২৪)। মানুষ ভূমিষ্ঠ হয় একদম অবুঝ শিশু অবস্থায়। পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে মাতৃগর্ভে সে কমবেশি ২৮০ দিন ধরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিন্দু আকৃতি থেকে একটা ক্ষুদ্র মনুষ্য আকৃতিতে আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মে গঠিত হয়। মাতৃগর্ভেই আল্লাহ জাল্লা শানুহু তার জীবিকার সুব্যবস্থা করে দেন। তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার কালে মাকে অসহ্য যন্ত্রণা পেতে হয়। পৃথিবীতে এসেই সে যাতে সুষম খাদ্য অনায়াসে পায় সে জন্য অল্লাহ্ জাল্লা শানুহু মায়ের স্তনে দুগ্ধ সঞ্চারিত করে দেন। আব্বা-মা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, ভাই-বোনসহ সব আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, নিকটজন তথা সবার অন্তরে শিশুর প্রতি খাস দরদ সঞ্চারিত করে দেন। মাতৃগর্ভাশয়ে তাঁর আগমন ঘটে পিতার থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায়। আলমে আরওয়া বা আত্মার জগতে আল্লাহ জাল্লা শানহু সব মানুষের প্রাণ বা রুহকে বহু পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন। এসবই আল্লাহ্্র কুদ্্রতের অপূর্ব নিদর্শন। বিশ্বজগত সৃষ্টির রহস্য, জগতসংসারের তাবত্্ রহস্য, আল্লাহ জাল্লা শানুহুর কুদ্্রতের নিগূঢ়তত্ত্ব, আল্লাহর মা’রিফাত জানবার একমাত্র উপায় হচ্ছে ইলমে তাসাওউফ চর্চা করা। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দ্বারা এর কিছু কিছু উদঘাটন করা সম্ভব হলেও সামগ্রিক জ্ঞান প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব হয় ইলমে তাসাওউফের এতদ্্সংক্রান্ত সবক যথাযোগ্য পীরের কাছ থেকে তা’লীম গ্রহণ করে। কুরআন মজীদে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর এবং বিকাশের ধারাবাহিকতার বিবরণ বিবৃত করে আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মৃত্তিকার উপাদান থেকে, অতঃপর আমি সেটাকে শুক্রবিন্দুরূপে (নুত্্ফা) স্থাপন করি এক নিরাপদ আধারে, পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি ‘আলাক্্-এ (জমাট রক্তপি-), অতঃপর ‘আলাককে পরিণত করি অস্থি-পঞ্জরে, অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দেই গোশ্্ত দ্বারা, অবশেষে সেটাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত মহান! এরপর তোমরা অবশ্যই মারা যাবে, অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে উত্থিত করা হবে। (সূরা মু’মিনূন : আয়াত ১২-১৬)। আরও ইরশাদ হয়েছে : যিনি (আল্লাহ্্) তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন উত্তমরূপে এবং কর্দম হতে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার বংশ উৎপন্ন করেন তুচ্ছ তরল পদার্থের নির্যাস হতে। পরে তিনি সেটাকে করেছেন সুঠাম এবং তাতে ফুঁকে দিয়েছেন তাঁর রুহকে এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ, তোমরা অতি সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো (সূরা সাজ্্দা : আয়াত ৭-৯)। বলো, তিনিই তোমারদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও অন্তঃকরণ, তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। বলো, তিনিই তোমাদের ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে (সূরা মূলক : আয়াত ২৩-২৪)। মানুষের হায়াত বা জীবন থাকে বলেই মানুষও হায়ওয়ান। মূলত মানুষকে আল্লাহ্্ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন সুন্দর অবয়ব বা সুরতে। তাকে বুদ্ধি-বিবেক এবং নানামাত্রিক কর্মশক্তি দিয়েছেন যাতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবী আবাদ করতে পারে। মানুষের পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও এই জীবনে তাঁর আল্লাহর খলীফা ও বান্দা হিসেবে দায়িত্ব অনেক। সে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং শান্তির পৃথিবী, সমৃদ্ধির পৃথিবী, হানাহানি ও সংঘাতমুক্ত একটা নিরাপদ পৃথিবী গড়ায় যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কায়িক ও বৌদ্ধিক পরিশ্রম দিয়ে একটা সুখের পৃথিবী গড়ে তুলবে, এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর বান্দা হিসেবে গোটা পৃথিবীর মানুষ একটা বৃহত্তর, উচ্চতর এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ভ্রাতৃত্বে বন্ধনে আবদ্ধ হবে। ফলে শোষণহীন, শ্রেণীবিহীন, আধিপত্যহীন ইনসাফ ও আদলভিত্তিক সামাজিক ন্যায়বিচারসম্পন্ন সত্যিকার কল্যাণকর পৃথিবী মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আর এমন পৃথিবী সবার কাম্য হওয়া উচিত। কিন্তু শয়তান নামক অশুভ শক্তি পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অশান্তির বিষবাষ্প এমনভাবে ছড়িয়ে দেয় যে, দুর্বলচিত্তের মানুষ, লোভ-লালসা আর মদ-মাৎসর্যের কবলে নিপতিত মানুষ মনুষ্যত্বের বৃত্তকে অগ্রাহ্য করে; ফলে অশান্তির সৃষ্টি হয়, অরাজকতা, নৈরাশ্য ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : তাদেরকে যখন বলা হয় : পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না। তারা বলে : আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু এরা বুঝতে পারে না (সূরা বাকারা : আয়াত ১১-১২)। এই আয়াতে কারীমা কপটশ্রেণীর মানুষের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কপটতা দুনিয়ার জন্য যেমন অকল্যাণকর, তেমনি তাদের আখিরাতের জীবনের জন্য রয়েছে মর্মšুÍদ শাস্তির ব্যবস্থা। পৃথিবীটা হচ্ছে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। এখানে যে যেমন কর্ম করবে, আখিরাতে সে তেমন ফল-ফসল প্রতিদানস্বরূপ পাবে জান্নাত আর যে অসৎ কাজ করবে সে পাবে জাহান্নাম। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : ঊতীতুম মিন্্ শাইইন্্ ফামাতা’উল হায়াতিদ্্ দুন্্য়্যা ওয়া যীনাতুহা, ওয়ামা ‘ইনদাল্লাহি খায়েরূ ওয়া আব্্কা, আফালা তা‘কিলুনÑ তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে তা তো পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা এবং যা আল্লাহর নিকট আছে তা উত্তম এবং স্থায়ী। তোমরা কি অনুধাবন করবে না? (সূরা কাসাস: আয়াত ৬০)। এই আয়াতে কারীমায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, পার্থিব জীবন একেবারেই ক্ষণস্থায়ী এবং পৃথিবীতে উপভোগ্য বস্তুনিশ্চয়ই ও জাগতিক শোভা-সৌকর্য ক্ষণস্থায়ীই কেবল নয়, তা নিকৃষ্ট ও অতিতুচ্ছ অথচ আখিরাতে যে নি’আমতরাজি রয়েছে তা চিরসুন্দর, চিরস্থায়ী এবং অত্যন্ত উৎকৃষ্ট। আল্লাহ্্ বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করে বনী আদম বা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল ও পবিত্র বস্তু সামগ্রী দিয়েছেন। তিনিই হালাল কোনটা এবং কোনটা হারাম তা বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সৎপথে চলার দিশা দেয়ার জন্য যুগে যুগে নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন যাতে মানুষ হিদায়াত লাভ করতে পারে, পার্থিব জীবনকে আখিরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে পারে এবং আখিরাতের জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভের জন্য যথাযথ পাথেয় সংগ্রহ করতে পারে। পার্থিব জীবনটা হচ্ছে কর্মের জন্য, আমল করার জন্য। সেই কর্মগুলো হতে হবে সৎকর্ম-আমালুস সলেহ। পৃথিবীতে নবী আগমনের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী হচ্ছেন সরকারে দো’আলম সাইয়েদুল মুরসালিন নুরে মুজাস্্সম খাতামুন্নাবীয়ীন হযরত মুহম্মদ মুস্তাফা আহমদ মুজতবা সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম। তিনি বলেছেন : লায়সালগিনা ‘আন কাছরাতিল ‘আরাদি ওয়ালা কিন্নাল গিনা সিনাননাফ্্স-প্রচুর ধন-সম্পদ থাকলেই অভাবমুক্ত হওয়া যায় না। অন্তরের অভাবমুক্তিই প্রকৃত ধন-সম্পদ (মুসলিম শরীফ)। ঐশ্বর্যের এই ধারণা ধারণ করে চলতে পারলে পার্থিব জীবনটা ভালোয় ভালোয় অতিবাহিত হতে পারে অল্পে তুষ্টির মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত রয়েছে। সৎকর্ম পার্থিব জীবনে যেমন আনে, আখিরাতের জীবনেও অধিকতর কল্যাণ বয়ে আনে পার্থিব জীবন তো ক্ষণিকের। অথচ আমরা এই ক্ষণিক জীবন নিয়ে এমন ব্যতিব্যস্ত থাকি যে, মনে হয় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হবে না, মনে হয় যেন আখিরাতের স্থায়ী জীবনে যেতে হবে না। কোন এক মায়ার কুয়াশার ধূম্রজালে আটকা পড়ে আমরা পৃথিবীটাকে আঁকড়ে ধরতে চাই। প্রতিদিন কত মানুষ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে-সেসব দেখেও আমাদের টনক নড়ে না। এই জীবনের পরেও যে আরেক জীবন আছে, সেই জীবনের সুখ-দুঃখ নির্ভর করছে এই জীবনের কর্মের ওপর সেটা যেন আমরা বেমালুম ভুলে আছি। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা থেকে, তারপর শুক্র থেকে, তারপর রক্তপি- (’আলাক) থেকে, তারপর তোমাদের বের করেন শিশুরূপে। অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হও তোমাদের যৌবনে, তারপর হয়ে যাও বৃদ্ধ। আর তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যু ঘটে এবং কারও মৃত্যু ঘটে বৃদ্ধ হওয়ার পূর্বেই নির্দিষ্ট কাল প্রাপ্ত হয়ে (সূরা মু’মিন : আয়াত ৬৭)। পার্থিব জীবনের এই যে বাস্তবতা, এটা ভুললে চলবে না। আমরা এ কথাটি নানাভাবে শুনি যে, কোথায় ছিলাম, কোথায় এলাম, আবার কোথায় যাব। ভেবে বিভোর না হয়ে আমাদের বাস্তবতার চৌহদ্দিতে বিচরণ করে সত্যকে উপলব্ধি করতে হবে, জীবনটাকে বুঝতে হবে। অনেক সময় আমরা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে বিস্মৃতির উত্তাল তরঙ্গে যেন হাবুডুবু খাই, আমাদের বিশ্বাসের সূক্ষ্ম তন্ত্রীগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে। এমনটাও হয়ত কারও কারও হয় যারা বুঝেও বুঝতে চায় না, শুনেও শুনতে চায় না, তাদের বোধশক্তি যেন লোপ পেয়ে যায়। আবার এমন লোকও আছে যারা বিবাগী হয়ে, পার্থিব জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে উদাসীনতার খপ্পরে পড়ে। এই জীবনকেই চূড়ান্ত জীবন মনে করে যারা অর্থ-জৌলুস, ভোগ-বিলাসের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে নিজের আয়ু খতম করে কিংবা অবিশ্বাসের নিকষ কালো অন্ধকারে হাবুডুবু খায় তারা কি একটুও ভাবতে পারে না যে, মৃত্যু তো পিছনে লেগেই আছে। আল্লাহর নির্দেশ পেলেই মৃত্যু সাধের প্রাণটাকে কবজ করে নেবে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : আয়না মা তাকূনূ ইউদ্রিক কুমুল মাউতু ওয়া লাও কুনতুম ফী বুরুজিম্্ মুশায়ইয়াদা-তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও (সূরা নিসা : আয়াত ৭৮)। অন্যদিকে যারা পার্থিব জীবনের সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে বিবাগী হয়ে যায় তাদেরও বোঝা উচিত পৃথিবীতে আল্লাহ জাল্লা শানুহু আমাদের কি জন্য পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্যটাইবা কী? আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু তো মানুষকে পাঠিয়েছেন খলীফা করে। তিনি পার্থিব জীবনের জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান দিয়েছেন, ইবাদত-বন্দেগী করতে বলেছেন, সৎকর্ম করতে বলেছেন, মানব কল্যাণের দিশা দিয়েছেন, সালাতের ওয়াক্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সিয়ামের জন্য মাস নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যাকাতের বিধান দিয়েছেন, সকাল-সন্ধ্যায় খাসভাবে তাঁর তসব্ীহ-তাহ্্লীল করতে বলেছেন, বেশি বেশি করে তাঁর যিকর করতে বলেছেন, হজের বিধান দিয়েছেন, হুক্কুল্লাহ্্র পাশাপাশি হক্কুল ইবাদও আদায় করতে বলেছেন, নবীর প্রতি যথাযথ তাজীমের সঙ্গে সালাত ও সালাম পেশ করতে বলেছেন, সুন্নাতে নব্বীর পায়রাবি করতে নির্দেশ দিয়েছেন, স্বামী-স্ত্রীর হক আদায় করতে বলেছেন, নারীদের মর্যাদা দান করেছেন, সন্তান-সন্ততি-আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী এবং মানুষের হক আদায় করতে বলেছেন, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে বলেছেন। তিনিই তো এই মুনাজাত করতে বলেছেন : রব্বানা আতিনা ফিদ্্দুনিয়্যা হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতে হাসানাতও- হে আমাদের রব! আপনি আমাদের পার্থিব কল্যাণ দিন ও আখিরাতের কল্যাণ। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা), সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
×