ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যথার্থ পদক্ষেপ নিন

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৮ মে ২০১৫

যথার্থ পদক্ষেপ নিন

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার খবরটি আশাব্যঞ্জক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে বলে আমরা মনে করি। এই প্রক্রিয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে সে দেশের খোদ বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতা থাকায় নির্ভরশীলতা, স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার জায়গাটি দৃঢ় হয়েছে নিঃসন্দেহে। এ প্রত্যর্পণ চুক্তি সই ও বাস্তবায়িত হলে দৃশ্যত শুধু অপরাধী বিনিময়ই নয়; কার্যত কূটনৈতিক সাফল্য, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ এবং দুদেশের মধ্যে নয়া সম্পর্কের ইতিবাচক দ্বার খুলে যাবে । বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা খুব একটা সুখকর নয়- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মের নামে, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের নামে, গণতান্ত্রিক ছদ্মাবরণে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দানবীয় শক্তি। যা এরই মধ্যে জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নামে অভিহিত হচ্ছে। এরা বিপন্ন করে তুলছে মানবিক পরিবেশ, বিনষ্ট করছে শান্তি। এসব অপশক্তি প্রতিরোধে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। বড় প্রয়োজন আঞ্চলিক সহযোগিতা। এসব অপশক্তি যেহেতু মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত সেহেতু তাদের আইনের আওতায় আনতে দেশে দেশে বন্দী, অপরাধী বিনিময় বা প্রত্যর্পণ চুক্তি অপরিহার্য। পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে এ চুক্তি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি। বাস্তবতা মেনে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসা বা একযোগে কাজ করা জরুরী। এ জাতীয় অপরাধীরা সাধারণত আদর্শ ও অনুকরণীয় গণতান্ত্রিক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশগুলোকে নিজেদের নিরাপদভাবে। সেসব দেশেই গোপনে ঘাঁটি গাড়ে। গত শতাব্দীর ৬ থেকে ৯ দশকে বিশ্বের নানা দেশে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতা, সামরিক অভ্যুত্থান, গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে নর হত্যাকারীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছে। কৃত অপরাধের শাস্তি ও দ-ের খ—গ রয়েছে তাদের মাথার ওপর। কিছু আইনী বাধা ও জটিলতার কারণে এসব দ- কার্যকর করা যাচ্ছে না। তেমনি একটি সমস্যা বন্দী অপরাধী বিনিময়, চুক্তি বা প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত আইন, যা বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে থাকা প্রয়োজন ছিল। কেননা এসব দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনী, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী ও কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী আত্মগোপন করে আছে। দু’দেশের মধ্যে অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনের প্রক্রিয়া অগ্রগতির আশাব্যঞ্জক পরিবেশের মধ্যে কোন কালো হাত বা অপশক্তি ঢুকে আশাহত অবস্থা যাতে সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে আমাদের সরকারকেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যত দ্রুত পারা যায় এই প্রক্রিয়াকে পূর্ণতা দেয়ার গুরুদায়িত্ব বেশিরভাগ পালন করতে হবে বাংলাদেশকেই। এই প্রত্যর্পণ চুক্তি সই এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া ও সদিচ্ছার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী ও শীর্ষসন্ত্রাসীরা যেসব দেশে লুকিয়ে আছে সেসব দেশের সঙ্গে যদি এ ধরনের চুক্তি না থাকে তবে দ্রুত তা করে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে সরকার দ- কার্যকর করবে বলে দেশবাসী আশা করে। এতে কথিত বিচারহীনতার সংস্কৃতি যেমন হ্রাস পাবে তেমনি সবদেশ ও বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। আর তা যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।
×