ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

র‌্যাবের ক্র্যাকডাউন শুরু, দুই দুর্ধর্ষ পাচারকারী আটক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ মে ২০১৫

র‌্যাবের ক্র্যাকডাউন শুরু, দুই দুর্ধর্ষ পাচারকারী আটক

আজাদ সুলায়মান ॥ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে মানব পাচারকারীদের গোপন আস্তানা ও গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারীরা গত পাঁচ বছরে ত্রিশ হাজার মানুষকে মালয়েশিয়ায় পাচারের নামে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে নিয়েছে কয়েক শত কোটি টাকা। এ সময়ে সমুদ্র পথে পাচার করার সময় ধরাও পড়েছে প্রায় পনের শত। ট্রলার ডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক। আর থাইল্যান্ডের জঙ্গলেই পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় পাঁচ শতাধিক। ত্রিদেশীয় এই সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের ধরতে এবার মাঠে নেমেছে র‌্যাব। র‌্যাব রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ক্র্যাক ডাউন শুরু করে গত সোমবার। চিহ্নিত পাচারকারীদের তালিকা হাতে নিয়ে র‌্যাব এখন সক্রিয়। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফ, সাতক্ষীরা, বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় র‌্যাব হানা দিচ্ছে প্রতি নিয়ত। ইতোমধ্যে বুধবার ধরা পড়েছে দুইজন দুর্ধর্ষ পাচারকারী। খুলনা সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে র‌্যাব। আটকরা হলেন মোঃ মজিবুর রহমান (৫০) ও ফয়সাল আর রশিদ রিয়েল (৩০)। র‌্যাব জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ দুজনের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব বুধবার রাতে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে অভিযান চালায়। র‌্যাব-২ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম মাসুদ রানা জানান, এই মানব পাচারকারী চক্রটি বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশে তাদের সদস্যরা ভিকটিমদের সংগ্রহ করে কানাডা নেয়ার কথা বলে প্রথমে ভারতে পাঠিয়ে দেয়। ভারতের সদস্যরা ওই ভিকটিমদের নেপালে পাঠায়। এরপর চক্রের নেপালের সদস্যরা ভিকটিমদের অপহরণ করে টাকার জন্য তাদের ওপর নির্যাতন চালায়। ‘ভিকটিমদের পরিবার পাচারকারী চক্রের বাংলাদেশের সদস্যদের কাছে টাকা পৌঁছে দিলে চক্রের নেপালের সদস্যরা তখন তাদের ছেড়ে দেয়। যাদের মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন নেপালের সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে দেশে আসতে সক্ষম হয়।’ তদন্তে আরও জানা যায় যে, নেপাল, ভুটান, ভারত ও অন্যান্য কিছু দেশে তাদের এজেন্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ সহায়তা, স্টাডি লোন, ভার্সিটি সিলেকশন, প্রি-ডিপারচার ও পোস্ট-এ্যারাইভাল সার্ভিস, পার্টটাইম জব সহায়তা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা দিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। তারপর মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারিত করে। প্রতারিতরা একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের দুর্গম বনাঞ্চলে জিম্মি হিসেবে বন্দী হয়ে কেউ বা মুক্তিপণের টাকা দিয়ে সর্বশান্ত হয়। কেউ বা টাকা না দিতে পেরে নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়ে গণকবরে স্থান পায়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার গভীর রাতে র‌্যাব-২ খুলনা মহানগরাধীন ৭/১ পূর্ব বানিয়া খামার এলাকায় হানা দেয়। এ সময় সেখান থেকে পাচারকারী চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ মজিবুর রহমান (৫০), ও তার সহযোগী ফয়সাল আর রশিদ রিয়াকে (৩০) আটক করে। আটককৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তারা একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সদস্য। ভারত, নেপাল, ভুটান, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে তাদের এজেন্ট রয়েছে। ওই এজেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ হতে জিম্মি করে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
×