ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুঁজিবাজারে নজর দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৭ মে ২০১৫

পুঁজিবাজারে নজর দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারের প্রতি নজর দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ৫শ’ কোটি টাকার ওপর ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ ছাড় দেয়ার প্রবণতা ঋণ খেলাপিদের উৎসাহিত করবে। রাজধানীর মতিঝিলে মেট্রোপলিটন চেম্বার বিল্ডিংয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ‘মেডিয়েশন ফর সেটলমেন্ট অব কমার্শিয়াল ডিসপুট অ্যান্ড রিকভারি অফ ওভারডিউ ব্যাংক লোন’ শীর্ষক সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল আরবিটেশন সেন্টার (বিয়াক) ও মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, শেয়ারবাজারে যখন ব্যাংকের দশ শতাংশ বিনিয়োগের সুযোগ ছিলো, তখন ব্যাংকগুলো ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। ওই সময় ব্যাংকগুলো শেয়ার বাজার থেকে প্রচুর পরিমাণ মুনাফা করে । এই মুনাফা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আসে। এখন তারা নিঃস্ব। আপনারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) বিষয়টিতে নজর দেন।মন্ত্রী জানান, ৫শ’ কোটি টাকার ওপর ঋণখেলাপিদের ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ ছাড় দেয়ায় প্রবণতা ঋণ খেলাপিদের উৎসাহিত করবে। বড় ঋণখেলাপিদের এ ধরনের ছাড় দেয়া ঠিক না বলে মনে করেন তিনি। সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন সব দিক থেকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এখানে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। সন্ত্রাস, নাশকতা আর জঙ্গি তৎপরতা দিয়ে কোনো সরকারের পতন ঘটানো যায় না। সরকার পতনের জন্য দরকার গণআন্দোলন। ৬৯ এর গণআন্দোলনে আমরা বিজয়ী হয়েছি। এক সময় নকশালের অত্যাচারে রাতে ঘুমাতে পারতাম না। তাদের অস্ত্রের ঝনঝনানির ভয়ে তটস্থ থাকতাম। কিন্তু তারা কিছু করতে পারেনি। মেডিয়েশনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হলে ভাল। আমি মনে করি এর চাইতে ভাল সমাধান আর কিছু হতে পারে না। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডেপুটি গর্ভনর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, রপ্তানী বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক নিয়মাচার মেনে কার্যক্রম পরিচালনার পরেও রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসনে জটিলতা দেখা দেয়। প্রচলিত আইনী ব্যবস্থায় এ জাতীয় বিরোধ নিস্পত্তি দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের বিদেশস্থ কোন আরবিটেশন সেন্টারের শরনাপন্ন হতে হয়। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের যে কোনো বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। মেডিয়েশন পদ্ধতিতে ব্যাংক ঋণের বিরোধের সমাধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। আইনই বিষয়টিকে সমর্থন দিয়েছে। এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে আছে। বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক ও ভারতের এস্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মধ্যে এরকম ব্যবস্থা চালু আছে। তারা বছরে একবার বসে বাণিজ্যিক ডিসপিউটগুলোর সমাধান করে। এটি আরও বৃহত্তর পরিসরে করার জন্যই শিগগিরই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, গবেষক সব পক্ষের প্রতিনিধি থাকবে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়িদ চৌধুরী বলেন, মেডিয়েশনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক বিরোধ দূর করলে স্থায়ী সমাধান পাওয়া যায়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচে। বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিবাদমান দু’পক্ষের মধ্যে সুষ্ঠু ব্যবসায়িক সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। এ ছাড়া এ পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামগ্রিক ক্ষমতা পক্ষদ্বয়ের ওপর থাকে। তা বিচারকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ঋণ আদায় দ্রুত করার জন্য ২০০৩ সালের অর্থঋণ আদালত আইন করা হয়েছিল। ২০১০ সালে তা সংশোধন করে মেডিয়েশন পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করা হয়। বিরোধ নিষ্পত্তিতে মেডিয়েশন ব্যর্থ হলে আদালতে মামলা চলতে পারে। বিয়াকের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমানের পরিচালনায় সেমিনারে এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, আইন সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সা বেক উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান উজ্জামান।
×