ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিজটাউন টেস্টে ৫ উইকেটে হার সফরকারী ইংল্যান্ডের, ১-১ এ সিরিজ অমীমাংসিত, ম্যাচসেরা ব্ল্যাকউড, সিরিজসেরা এ্যান্ডারসন

দারুণ জয়ে উইন্ডিজের সমতা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৫ মে ২০১৫

দারুণ জয়ে উইন্ডিজের সমতা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্টের সঙ্গে ‘নাটকীয়’ শব্দটি যোগ করলে ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা, শেষ সেশনের দুরন্ত লড়াইয়ের ছবিটাই খুঁজে ফেরেন। কিন্তু ব্রিজটাউন দেখল ‘অন্যরকম’ এক নাটক। অদ্ভুতুড়ে দ্বিতীয় দিনে উইকেট পড়ল ১৮টি, সাড়ে তিন দিনে স্বাগতিক উইন্ডিজ ম্যাচ জিতল ৫ উইকেটে। দারুণ জয়ে পিছিয়ে পড়া সিরিজ সমতায় শেষ করল দিনেশ রামদিনের দল! ফেবারিট ইংলিশদের ফিরতে হলো মিশ্র অভিজ্ঞতা নিয়ে। বোলারদের খুনে চরিত্রের ম্যাচে ৮৫ ও অপরাজিত ৪৭ রানের ফাইটিং ইনিংস উপহার দিয়ে ‘নায়ক’ জার্মেইন ব্ল্যাকউড, তিন ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা অতিথি পেসার জেমস এ্যান্ডারসন। অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুকের সেঞ্চুরির (১০৫) ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে অলআউট ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২৫৭ রান। জবাবে এ্যান্ডারসনের পেস-তা-বের (৬/৪২) মুখে ১৮৯ রানে শেষ উইন্ডিজ! ৬৮ রানের এগিয়ে থেকে শুরু করা ইংলিশদের হারানো সম্ভবÑ এমনটা হয়ত ক্যারিবিয়রাও আশা করেনি। স্বাগতিক বোলারদের তোপের মুখে দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রানে অলআউট এ্যালিস্টার কুকের দল! তৃতীয় দিন ৬২.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১৯২ রান তুলে নেয় উইন্ডিজ (১৯৪/৫)। এর মধ্য দিয়ে সিরিজে সমতার পাশাপাশি দীর্ঘ ৬ বছর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল ব্রায়ান লারার উত্তরসূরিরা। জ্যামাইকায় ২০০৯ সালে সর্বশেষ জিতেছিল তারা। ২০০০ সালের পর ইংলিশদের বিপক্ষে ৩০ টেস্টে ক্যারিবীয়দের মাত্র তৃতীয় জয় এটি। তার ওপর ক্রিস গেইলসহ ৬-৭ জন তারকা ক্রিকেটারকে ছাড়াই এবার শক্তিধর ইংল্যান্ডকে মোকাবেলা করে উইন্ডিজ। ব্রিজটাউনের এ জয় তাই ক্যারিবীয়দের জন্য বড় পাওয়া। ৫ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনে দ্বিতীয় ইনিংসের খেলা শুরু করে ইংল্যান্ড। ২১ ওভারের মধ্যে বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে আর ৮৪ রান যোগ করতে সক্ষম হয় সফরকারীরা। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৫ রান করেন আট নম্বরে নামা উইকেট রক্ষক-ব্যাটসম্যান জস বাটলার। বেন স্টোকস ৩২ ও গ্যারি ব্যালান্স ২৩ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের স্কোর গড়তে পারেননি! স্বাগতিকদের হয়ে পেসার জেরমো টেইলর, জেসন হোল্ডার ও স্পিনার বীরস্বামী পারমল নেন ৩টি করে উইকেট। ১৯২ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে মোটেই স্বস্তিতে ছিল না ক্যারিবীয়রা। দলীয় ৮০ রানে চতুর্থ উইকেট হারানো স্বাগতিকদের হয়ে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন ড্যারেন ব্রাভো ও ব্ল্যাকউড। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩১.৫ ওভারে মহামূল্যবান ১০৮ রান যোগ করে দলকে দারুণ জয় উপহার দেন তারা। ৮২ রান করে ব্রাভো আউট হলেও ৪৭ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচের নায়ক ব্ল্যাকউড। ইংল্যান্ডের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন এ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস জর্ডান, মঈন আলি ও বেন স্টোকস। প্রথম ইনিংসে ২শ’র নিচে অলআউট হওয়ার পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সর্বশেষ টেস্ট জিতেছিল ২০০৩ সালে, স্যাবাইনা পার্কে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ১২৩/১০Ñ ২০১২ সালের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের তৃতীয় সর্বনিম্ন ইনিংস এটি। ব্রিজটাউনে ভুতুড়ে দ্বিতীয় দিনে উইকেট পড়েছে ১৮টিÑ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এক দিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ড এটি। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি উইকেট পড়েছিল একবারই। সেই ম্যাচটিও ছিল এই দু’দলের মধ্যে। ২০০০ সালে লর্ডসে দ্বিতীয় দিনে পড়েছিল ২১ উইকেট। ড্র হওয়া প্রথম টেস্টেই ৩৮৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড ইতিহাসের সর্বাধিক শিকারি বনে যাওয়া সিরিজসেরা এ্যান্ডারসনের মোট উইকেট এখন ৩৯৭। কার্টলি এ্যামব্রোসকে ছাড়িয়ে পেসার হিসেবে ইতিহাস গড়তে আর মাত্র ৯টি উইকেট চাই তার। ‘ছন্দে ফেরা, সিরিজসেরা, ভাল লাগছে। তবে ব্রিজটাউন টেস্ট জিতে সিরিজ জিততে পারলে আরও ভাল লাগত। দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা মোটেই ভাল ব্যাটিং করিনি।’ বলেন এ্যান্ডারসন। অন্যদিকে ব্লাকউডের ব্যাটিং এবং দারুণ জয়ে বোলারদের প্রশংসা করেন উইন্ডিজ অধিনায়ক দিনেশ রামদীন। সংক্ষিপ্ত স্কোর ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৫৭/১০ (৯৬.৩ ওভার; কুক ১০৫, মঈন ৫৮, রুট ৩৩, ব্যালান্স ১৮, স্টোকস ২২, ব্রড ১০; টেইলর ৩/৩৬, গ্যাব্রিয়েল ২/৪৭, হোল্ডার ২/৩৪) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১২৩/১০ (৪২.১ ওভার; বাটলার ৩৫, স্টোকস ৩২, ব্যালান্স ২৩, ট্রট ৯, মঈন ৮; টেইলর ৩/৩৩, হোল্ডার ৩/১৫, পারমল ৩/৪৩) ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ১৮৯/১০ (৪৯.৪ ওভার; ব্ল্যাকউড ৮৫, চন্দরপল ২৫, পারমল ১৮, টেইলর ১৫, রামদিন ১৩; এ্যান্ডারসন ৬/৪২, ব্রড ১/৩১, রুট ১/৩৪) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৯৪/৫ (৬২.৪ ওভার; ড্যারেন ব্রাভো ৮২, ব্ল্যাকউড ৪৭*, ব্রেথওয়েট ২৫, স্যামুয়েলস ২০; এ্যান্ডারসন ১/৩৫, জর্ডান ১/২৪, স্টোকস ১/২৫, মঈন ১/৫৪) ফল ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা ॥ ব্ল্যাকউড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) সিরিজ ॥ তিন টেস্টের সিরিজ ১-১ এ অমীমাংসিত সিরিজসেরা ॥ এ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)।
×