ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফয়েজ আহ্্মদ স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৫ মে ২০১৫

ফয়েজ আহ্্মদ স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহু পরিচয় ধারণ করেছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভা ফয়েজ আহ্্মদ। একই সঙ্গে মেধা ও মননের স্বাক্ষর রেখেছেন সাংবাদিকতা, সাহিত্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতি অঙ্গনে। পাশাপাশি এ দেশের শিল্পচর্চার বিকাশেও রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। আমৃত্যু কাজ করেছেন প্রগতিশীল ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে। বাংলা একাডেমির ফেলো বরেণ্য এই ব্যক্তিত্বকে স্মরণে প্রকাশিত হলো স্মারকগ্রন্থ। ফয়েজ আহ্্মদ স্মারকগ্রন্থ শীর্ষক বইটি প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। সমাজের নানা শ্রেণীর বিশিষ্টজনরা কীর্তিমান এই মানুষটিকে নানাভাবে স্মরণ করেছেন বইটিতে। তাদের বিশ্লেষণধর্মী লেখায় উঠে এসেছে আলোকিত মানুষ ফয়েজ আহ্্মদের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম। গ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। সোমবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পী আবদুল ওয়াদুদের কণ্ঠে ‘ভয় হতে তব অভয় মাঝে’ শীর্ষক রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর তাকে নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্মৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, ভারত থেকে আগত গবেষক অধ্যাপক মন্দিরা ভট্টাচার্য, অধ্যাপক বুলবন ওসমান, সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী, নাট্যজন আতাউর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ইকবাল বাহার চৌধুরী, সাংবাদিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও কামাল লোহানী। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ফয়েজ আহ্মদের জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। একাধারে তিনি ছিলেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিক। তার সকল কর্মপ্রবাহ বিস্তৃত ছিল একটি উদার ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রেখেছেন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পুনর্গঠনেও রয়েছে তার অনন্য ভূমিকা। এসব কারণে সাহিত্যিক হিসেবে তার পরিচয়টি অনেক সময়ই চাপা পড়েছে। তিনি এদেশের প্রথম সারির শিশুসাহিত্যিকদের অন্যতম। সাংবাদিকতায়ও রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। তার সাংবাদিকতার ভেতরেও ছিল বিশেষ সাহিত্যবোধ। স্মৃতিচারণমূলক বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তিনি অকৃতদার ছিলেন। তাই প্রকৃত অর্থে তার কোন সংসার ছিল না। তার সংসার ছিল দেশের মানুষ। যারা তার সঙ্গে মিশেছেন তাদের তিনি নিজ সংসারেরই লোক হিসেবে ভেবেছেন। তিনি আরও বলেন, ফয়েজ আহ্্মদ আগাগোড়া একজন শিশু ছিলেন। ছিলেন দুঃসাহসী। একজন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সংগঠক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্র তাকে কখনেই ক্ষমা করেনি। পাকিস্তান আমলেও তিনি কারাবরণ করেছেন। শাস্তি ভোগ করেছেন দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও। সৈয়দ শামসুল হক বলেন, সেই পঞ্চাশের দশক থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। শুরু থেকেই তাকে দেখেছি দেশের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে কাজ করতে। সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই জাতীয় কবিতা পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। কিন্তু এক সময় এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্য বক্তারা বলেন, ফয়েজ আহ্মদ ছিলেন বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল মানুষ। শৈশব থেকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। বাংলা শিশুসাহিত্যে তার অবদান যেমন অনন্যসাধারণ তেমনি সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তিনি নক্ষত্রপ্রতিম। তার সম্পাদিত পত্রিকা এবং রিপোর্ট সঙ্কলন মধ্যরাতের অশ্বারোহী উত্তরপ্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য সদাশিক্ষণীয় উপাদান সরবরাহ করে। তিনি পাকিস্তান আমলে যেমন স্বাধিকার সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন, কারারুদ্ধ হয়েছেন তেমনি মুক্তিযুদ্ধ থেকে নব্বইয়ের দশকে গণতন্ত্রের আন্দোলনে পালন করেছেন অনন্য ভূমিকা। আশির দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গঠনের পাশাপাশি দেশের প্রথম আর্ট গ্যালারি শিল্পাঙ্গন প্রতিষ্ঠা, লেখকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লেখক ইউনিয়ন গঠন, মুক্তিসংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংরক্ষণে সমাজতান্ত্রিক আর্কাইভস প্রতিষ্ঠা তার অসামান্য কীর্তি। বক্তারা আরও বলেন, বন্ধুত্ব ও ভালবাসার দ্বারা ফয়েজ আহ্মদ সকল মানুষকে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার বজ্রবলিষ্ঠ অবস্থান তার বৃহৎ মানবিক সত্তারই পরিচয়বহ। বাংলা একাডেমি ফয়েজ আহ্মদ স্মরণে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করে বিস্মৃতিপরায়ণ সময়ে তার মতো মানবিক প্রদীপকে উর্ধে তুলে ধরেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমানচলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, নারীনেত্রী ও গবেষক মালেকা বেগম, কাজী মদিনা, ড. নিয়াজ জামান, অধ্যাপক জাহেদা আহমেদ, সাংবাদিক হারুন হাবীব, অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ, অধ্যাপক আকমল হোসেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আবুল বারক আলভী, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শেষপর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। দেশীয় বাদ্যযন্ত্র বিষয়ক গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টস (বিটা) ও কনসার্ট নরওয়ের উদ্যোগে এবং বাংলা শিল্পকলা একাডেমির সহায়তায় প্রকাশিত হলো ‘এ হিস্টোরিক্যাল পারসেপশন অব ট্র্র্যাডিশনাল মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস ফর ইয়ঙ্গার জেনারেশন’ শীর্ষক বাদ্যযন্ত্রবিষয়ক গ্রন্থ। সোমবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষ গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রভাষক ড. সাইম রানা কর্তৃক গবেষণাকৃত গ্রন্থটিতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নৃগোষ্ঠীর বাদ্যযন্ত্রের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ব্যবহারে নানা দিক। এছাড়া প্রায় চারশত বাদ্যের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, বাদ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং মিউজিয়াম স্থাপনের বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও পদক্ষেপ বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সৈয়দ মুজতবা আলীর বইয়ের ইংরেজী প্রকাশনা ॥ বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ভ্রমণকাহিনীগুলোর একটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘দেশে বিদেশে’। শান্তিনিকেতনে উচ্চশিক্ষা শেষে আফগান সরকারের অনুরোধে কাবুল কৃষি কলেজে ফার্সি ও ইংরেজী ভাষার শিক্ষক হিসেবে সৈয়দ মুজতবা আলী যোগ দেন ১৯২৭ সালে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। বাংলা থেকে পেশোয়ার হয়ে কাবুলে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে তার ভ্রমণকাহিনী শুরু হয়। শেষ হয় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিপর্যস্ত কাবুল ত্যাগের মধ্য দিয়ে। সাবলীল বর্ণনা ও সূক্ষ্ম রসবোধে বইটি উঠে এসেছে আফগানিস্তানের মানুষের জীবনযাত্রা, আচার-আচরণ ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট। সৈয়দ মুজতবা আলীর সাড়া জাগানো ভ্রমণকাহিনীটি এবার প্রকাশিত হলো ইংরেজী অনুবাদে। বইটি অনুবাদ করেছেন বিবিসির সাবেক দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক নির্বাহী সম্পাদক নাজেস আফরোজ । ‘ইন এ্যা ল্যান্ড ফার ফ্রম হোম : এ্যা বেঙ্গলি ইন আফগানিস্তান’ শীর্ষক বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হলো সোমবার। রাজধানীর গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (আইজিসিসি) আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বইটির মোড়ক খোলা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অনুবাদক নাজেস আফরোজ এবং গবেষক ও সংবাদিক আফসান চৌধুরী বইটি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। আলিয়ঁসে দিলরুবার চিত্রপ্রদর্শনী পেইন্টেড লাভ ॥ নিসর্গ ও জীবনের সৌন্দর্যবোধে প্রভাবিত এক শিল্পী দিলরুবা লতিফ রোজী। রং ও রেখার খেলায় মেলে ধরেন প্রকৃতির সঙ্গে মানবিক নান্দনিকতা। সোমবার থেকে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে শুরু হলো এই শিল্পীর চিত্রকলা প্রদর্শনী। জলরঙে আঁকা ৪০টি ছবি নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীর শিরোনাম পেইন্টেড লাভ। বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মঈনুদ্দীন খালেদ। সম্মানিত অতিথিদের স্বাগত জানান আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস প্রদর্শনীটি চলবে ১২ মে পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
×