ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বুধবার দ্বিতীয় টেস্টে নামার অপেক্ষা, মিরপুর টেস্টে সিরিজ জিততে চায় বাংলাদেশ

ড্র নয়, জিতেছে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৪ মে ২০১৫

ড্র নয়, জিতেছে বাংলাদেশ!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শিরোনামটি চমকে ওঠার মতোই। বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ হচ্ছে। প্রথম টেস্টও হয়েছে। কিন্তু সেই টেস্ট ড্র’ও হয়েছে। তাহলে ড্র নয়, জিতেছে বাংলাদেশ; কেন? প্রথমত, পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করে যেভাবে টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ, তাতে জয়ের আনন্দই মিলেছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ যে ড্র নয়, ম্যাচে জিতেছে; তা মনে করেন খোদ পাকিস্তান দলের অধিনায়ক মিসবাহ উল হকই। তিনিই বলেছেন, ‘আমাদের বোলাররা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। যা যা করার দরকার, সবই করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ওরা (তামিম-ইমরুল) আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। অসাধারণ ইনিংস খেলেছে। এমন কোন সুযোগই দেয়নি, যেটা আমরা নিতে পারতাম।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও তাই বুঝিয়েছেন। বলেছেন, ‘পুরো টেস্টটাই আমরা অনেক শাসন করে ড্র করেছি। এটা জয়ের চেয়ে কম নয়।’ এখন পাকিস্তানের সামনে অন্তত টেস্ট সিরিজ জেতার কিংবা না হারার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বুধবার শুরু হতে যাওয়া টেস্টে জিততে হবে অথবা ড্র করতে হবে। হারলেই বিপদ ঘনিয়ে আসবে। ওয়ানডে সিরিজে ‘বাংলাওয়াশে’র পর একমাত্র টি২০ ম্যাচেও হেরেছে পাকিস্তান। প্রথম টেস্ট করেছে ড্র। যেটিকে মিসবাহ’ই বাংলাদেশের জয় হিসেবে দেখছেন। দ্বিতীয় টেস্ট হারলেই বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজও জিতে নেবে। মিসবাহ’রা সফরের শেষ ম্যাচটিতে জান বাজি লাগিয়ে খেলবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটাররাও ছাড়ার পাত্র নন। মিরপুর টেস্ট জিতে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যেই খেলতে নামার প্রত্যয় ক্রিকেটারদের কণ্ঠে ঝরছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমই যেমন বলেছেন, ‘এত ভাল দলের বিপক্ষে এ রকম খেলা কখনই খেলিনি। শুরুটা খারাপ হলেও পরে আমরা দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য, সামনের টেস্টটা ভাল খেলে যেন সিরিজ জিততে পারি।’ মুশফিক যেখানে সিরিজ জয়ের কথা বলছেন, সেখানে বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে তো পাকিস্তানের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ ড্র করেছে, যেভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তা ‘টার্নি পয়েন্ট’ই বলছেন। এ ড্র’টি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলেও বিশ্বাস করেন হাতুরাসিংহে। তৃতীয় দিনে যখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে পাকিস্তান, দিনটি শেষ হতেই আইসিসির একটি মেইল বাংলাদেশ ক্রিকেটে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৮ নম্বর স্থান দখল করে নেয় বাংলাদেশ। তাও আবার পাকিস্তানকে এক ধাপ পেছনে রেখে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই এগিয়ে যাওয়াই কী তাহলে বাংলাদেশকে টেস্টে আবার কর্তৃত্ব নিতে বিশ্বাস জোগায়। মুশফিক তৃতীয় দিনের পর যে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছে, তা অসাধারণ কীর্তিই বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘এ রকম বোলিং আক্রমণের সামনে, ৩০০ রানে পিছিয়ে থেকে ড্র করা অসাধারণ একটা কীর্তি। এভাবে খেললে দল হিসেবে বিশ্বাস জন্মায় যে ভবিষ্যতেও এ রকম পরিস্থিতিতে আমরা ভাল খেলতে পারব।’ সেই বিশ্বাস যে এখন কতটা প্রবল, তা পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেই বোঝা যাচ্ছে। একের পর এক রেকর্ড গড়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। দলীয় রেকর্ডের দিক থেকে প্রথমবার পাকিস্তানকে টেস্ট জিততে দেয়নি বাংলাদেশ। নবম টেস্টে এসে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র করেছে। ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে সর্বাধিক রান করেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ (দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫৫) রান করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে এত বড় স্কোর গড়েছে। ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগতভাবে, যে কোন উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে তামিম-ইমরুল রেকর্ড ৩১২ রানের জুটি হয়েছে। ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে দুই ওপেনারের ১৫০ রান ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম হলো। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৩১২ রানের জুটি গড়লেন তামিম-ইমরুল। রেকর্ড আর রেকর্ড হয়েছে। সেখানে পাকিস্তানকে এবারও খুঁজে পাওয়া গেল না। বাংলাদেশ সেই আধিপত্য বিস্তার করে রাখলই। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। এমনই ব্যাটিং করা হয়েছে, যা দেখে কোচ হাতুরাসিংহে বলতে বাধ্য হচ্ছেন যেন, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে এমন নৈপুণ্য কখনই দেখিনি।’ সেই নৈপুণ্য মূলত তামিম-ইমরুলের ব্যাটেই দেখা গেছে। তামিম শেষপর্যন্ত দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২০৬ রান করেছেন। আবার বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৭টি শতক করেছেন। টানা তিন ম্যাচেও শতক করেছেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। সেই সঙ্গে ইমরুলও চার ম্যাচে তিন শতক করলেন। আবার টানা দুই ম্যাচে শতক করেছেন। শেষপর্যন্ত ১৫০ রান করেছেন। যা ইমরুলের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। এ ইনিংস দলকেও বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এরপর সাকিব এসে ৭৬ রান করেছেন ঠিক, কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ বাঁচানো নিশ্চিত হয়ে যায়। তামিম-ইমরুল মিলে যে ৩১২ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছেন, তা বিশ্ব দরবারেও হুঙ্কার দিয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে টেস্ট জিতেছে। ড্র’ও করেছে। কিন্তু এবারের মতো এত উচ্চ গর্জন এর আগে কখনই মেলেনি। সেজন্যই এ টেস্ট ড্র করাটি, জয়ের আনন্দের মতোই লাগছে। পুরো জাতির কাছেই টেস্ট ড্র’টি জয়ের আনন্দ দিচ্ছে। সেই আনন্দ নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও হতো। এ ড্র’র গায়ে যে জয়ের গন্ধ লেগে গেছে, তা তো পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকই মনে করছেন। শুধু কী মিসবাহ বিশ্বব্যাপীই তো এ ড্র জয়ের মতো বলেই অভিহিত করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকও তো তাই মনে করছেন। আর তাই এ ড্র’টি আর ড্র’র মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেটি জয়ের তকমায় ভাসছে। এখন সামনে দ্বিতীয় টেস্টে নামার অপেক্ষা। যেই টেস্টে যে দল জিতবে, তারাই টেস্ট সিরিজ জিতে নেবে। বাংলাদেশ চায় সিরিজ জিতে নিতে।
×