ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজেকে চেনালেন ইমরুল

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৩ মে ২০১৫

নিজেকে চেনালেন ইমরুল

স্পোর্টস রিপোর্টার, খুলনা থেকে ॥ এনামুল হক বিজয় ইনজুরিতে পড়লেন। ইমরুল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হলেন। এরপর যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ইমরুলকে দলে নেয়া হলো, খানিক সমালোচনা হলো। অথচ জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের সবশেষ ম্যাচেই ইমরুল কায়েস শতক করেছিলেন। সমালোচনা যখন হলো তখন এর জবাব ব্যাট ছাড়া কী আর কোনভাবে দেয়া যায়; যায় না। ইমরুল তাই ব্যাটেই জবাব দিলেন। এমন জবাবই দিলেন, বাংলাদেশ যে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ড্র করল, তাতে ইমরুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন। শুধু কী ভূমিকা রাখলেন, ক্যারিয়ার সেরা ১৫০ রানের ইনিংসও খেললেন। নিজেকে চেনালেন ইমরুল। চতুর্থ দিনেই শতক করে ফেলেছিলেন। ১৩২ রানে অপরাজিতও ছিলেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক করেছিলেন। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শতক করেছেন। চতুর্থ দিনেই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলে ফেলেছিলেন। এক ম্যাচ আগেই যে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে ১৩০ রান করেছিলেন, সেটিই খুলনা টেস্টের আগে ইমরুলের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস ছিল। চতুর্থ দিন সেই রানকেও অতিক্রম করে ফেলেছেন ইমরুল। পঞ্চম দিনে আরও ১৮ রান যোগ করে আউট হয়ে যান ইমরুল। ইমরুলকে আউট করার পর যে জুলফিকার বাবর হাফ ছেড়ে বাঁচলেন, তা সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে দিল। দলের ৩১২ রানের সময় ২৪০ বলে ১৬ চার ও ৩ ছক্কায় যে ইমরুল ১৫০ রান করে আউট হন, তার আউটের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটেরও পতন ঘটে। আর তাই আনন্দের চেয়ে যেন বাবর ও পাকিস্তান দল স্বস্তি পায়। বাংলাদেশ দল যে পাকিস্তানকে কী ভোগাচ্ছে, ইমরুলের আউটের পর পাকিস্তান ক্রিকেটারদের বিধ্বস্ত চেহারা দেখেই বোঝা গেছে। তামিমের সঙ্গে ইমরুল আবার যে কোন উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়েন। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইমরুল কায়েসের টেস্ট অভিষেক হয়। সেই থেকে দলে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন ইমরুল। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তো ইমরুলের কোন টেস্ট খেলাই হয়নি! ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৬ টেস্ট খেলে ১৭.১৫ গড়ে যে ৫৪৯ রান করেছিলেন ইমরুল, কোন শতক ছিল না, সেখানেই দল থেকে দীর্ঘদিন ছিটকে পড়ার কারণও মিলে যায়। কিন্তু যেই ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট খেলার সুযোগ পেলেন, আবার সাদা পোশাক গায়ে জড়িয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে গেলেন, ইমরুলও যেন বদলে গেলেন। চার টেস্টেই ২০ টেস্ট খেলা ইমরুল এমন খেলাই দেখালেন, এখন যেন ইমরুল ছাড়া তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে আর কোন বিকল্পই ভাবতে হচ্ছে না। ২০১৪ থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্ট পর্যন্ত খেললেন চার টেস্ট, তিনটিতেই শতক হাঁকালেন! যেখানে আগের ১৬ টেস্টে রান করেছিলেন ৫৪৯, সেখানে চার টেস্টেই তার রান ৫২০! তাও আবার ৩টি শতকও এ সময়েই করেছেন। ২০১৪ সালে আবার জাতীয় দলে ফিরেই প্রথম ইনিংসে ১১৫ রানের ইনিংস খেলেছেন ইমরুল। মাঝখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একটি টেস্টে ব্যর্থ হন। এরপর আবার যেই চট্টগ্রামে নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান, প্রথম ইনিংসেই ১৩০ রানের ইনিংস খেলেন। এবার ওয়ানডেতে যতটাই ইমরুলের ব্যাটিং ব্যর্থতা চোখে পড়েছে, টেস্টে দুর্বার ইমরুলকেই মিলেছে। খুলনা টেস্টে ১৫০ রানের ইনিংস খেলে এক হাজারী ক্লাবেও (২৬.৭২ গড়ে ১০৬৯ রান) যুক্ত হয়ে গেছেন ইমরুল। যেখানে আগেই বাংলাদেশের ১২ ব্যাটসম্যান ছিলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিন থেকেই তামিম ও ইমরুলের দিন শুরু হয়ে যায়। একদিনে তামিম মারমুখী ব্যাটিং করতে থাকেন। আরেকদিকে ইমরুল উইকেট আঁকড়ে থেকে সুযোগ বুঝে রান করতে থাকেন। ৮০ বলে ৫০ ও ১৫৩ বলে ১০০ রান করেছিলেন ইমরুল। পঞ্চম দিনে ২৩১ বলে গিয়ে ১৫০ রান করেন ইমরুল। ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে কোন প্রতিপক্ষের উদ্বোধনী জুটিই পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০ রানের বেশি করতে পারেনি। সেখানে ৩১২ রান করেছে বাংলাদেশ। তামিম-ইমরুলের সুবাদেই এমনটি হয়েছে। এ জুটি আরও বড় হতে পারত, কিন্তু ইমরুল আউট হতেই উদ্বোধনী জুটির অবসান ঘটে। তবে আউট হওয়ার আগে যে অসাধারণ এক ইনিংস খেললেন। নিজেকে ভালভাবেই চেনালেন ইমরুল।
×