ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্কে প্রবাসীরা

মালদ্বীপে বাংলাদেশীদের ওপর পুলিশী দমন পীড়ন থামেনি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ মে ২০১৫

মালদ্বীপে বাংলাদেশীদের ওপর পুলিশী দমন পীড়ন থামেনি

ফিরোজ মান্না ॥ মালদ্বীপে বাংলাদেশী কর্মীদের ওপর পুলিশী দমন-পীড়ন থামেনি। সেখানে বাংলাদেশী কর্মীরা পুলিশী আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা পুলিশী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাদের ওপরও সরকারী চাপ বাড়ছে। সংবাদ মাধ্যমকেও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মাসের শেষদিকে মালদ্বীপে দুই বাংলাদেশী খুন ও দুজনকে ছুরি মেরে আহত করার প্রতিবাদ করায় পুলিশ বাংলাদেশীদের ওপর এই দমন অভিযানে নামে। মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছে, খুনের ঘটনা নিয়ে আর কোন প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলে ভিসা বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশী নাগরিক খুন হওয়ার পর থেকেই দেশটিতে কর্মীদের ওপর নেমে আসে নানা হুমকি। একদিকে স্থানীয়রা অন্যদিকে পুলিশ। দুই পক্ষই মালদ্বীপে বাংলাদেশীদের ওপর মারমুখী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশটিতে বাংলাদেশীরা গ্রেফতার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। পুলিশের ভয়ে অনেকে মুখ বন্ধ করে থেকেও পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হচ্ছেন। তবে অনেকেই খুনের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন। তারা মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। কিন্তু খুনী গ্রেফতার হয়নি। উল্টো পুলিশী হয়রানি বেড়েছে। খুনের ঘটনাটিকে হাইকমিশন গুরুত্ব না দেয়ায় বাংলাদেশীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তবে হাইকমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। মালদ্বীপে বর্তমানে বৈধ-অবৈধ মিলে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বাংলাদেশী কাজ করেন। এদিকে মালদ্বীপ থেকে রাজিব নামের এক কর্মী টেলিফোনে জানান, বাংলাদেশী কর্মীদের ওপর দেশটির পুলিশ দমন-পীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। মুখোশধারীর হামলায় বাংলাদেশী শাহীন মিয়া খুন হন। শাহীন মালের সাউথ-ওয়েস্ট হারবার এলাকায় ‘লিয়ানু ক্যাফে’তে কাজ করতেন। আর ‘আলিফ আলিফ আতোল থড্ডু’ দ্বীপ থেকে বিলাল নামে অন্য এক বাংলাদেশীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে পরে কর্মীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিলালের ঘরে তার চাকরিদাতা হোসেইন হাসান লাশটি দেখতে পান। ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ সেখান থেকে বিলালের লাশ উদ্ধার করে। বিলালের সঙ্গে ওই বাসায় আরও তিন প্রবাসী থাকতেন। মালদ্বীপ থেকে কয়েকজন টেলিফোনে অভিযোগ করেন, দেশটির পুলিশ মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোন কথাই বলেনি। এছাড়া এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারও করেনি। অন্যদিকে শাহীন মিয়া খুনের বিষয়েও পুলিশ কাউকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে না। মালদ্বীপে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশীদের ওপর আরও তিনটি আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ‘হাভিরি হিংগুনের টেপকন হার্ডওয়্যার’ নামে একটি স্থানে অজ্ঞাত কয়েকজন এক বাংলাদেশীর ওপর আক্রমণ করে। এতে ওই কর্মী মারাত্মক আহত হন। এ ঘটনার একটু পরেই একই এলাকায় আরেক বাংলাদেশী কর্মীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করে। একই দিন এক ভারতীয় কর্মীকে ছুরি মারা হয়। এসব ঘটনায় কোন প্রকার ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ক্ষোভে ফঁসে ওঠে। তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনে কয়েক দফা ঘটনার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দিয়েছেন। হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। হাইকমিশনের এমন ভূমিকায় বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়ে। কর্মীরা পৃথক ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করলে পুলিশ বাংলাদেশী কর্মীদের ওপর কঠোর অবস্থান নেয়। পুলিশ বাংলাদেশী কর্মীদের ভিসা বাতিলসহ দেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয়। এ বিষয়ে মালদ্বীপে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও দায়িত্বশীল কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। দেশটির এক পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ওই তিন প্রবাসীর ওপর হামলার সঙ্গে শাহীন মিয়া হত্যাকা-ের কোন যোগাযোগ আছে কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। শাহীনকে হত্যার আগের দিন রাতে একদল যুবক ওই ক্যাফেতে গিয়ে বিনা পয়সায় কফি চাইলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে ওই যুবকরা ক্যাফেতে ভাংচুর চালায়। এ ঘটনার পরেরদিন শাহীন মিয়া খুন হন। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হামলার ঘটনায় সেখানে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের দশজনের মতো কর্মী খুন হয়েছেন। মালদ্বীপ প্রবাসী রাজিব জানিয়েছেন, নিরাপত্তার দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচী ঘোষণা করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে তা স্থগিত করার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়। এর পর বাংলাদেশী কর্মীরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন স্থগিত করে দেয়। এর পরও পুলিশ বাংলাদেশীদের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। খুনের ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত হয়রানি চালিয়ে যাচ্ছে।
×