ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে শঙ্কা

দাম নেই, ভাবছে না কৃষক ॥ আগে ধান ঘরে তোলা চাই

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩ মে ২০১৫

দাম নেই, ভাবছে না কৃষক ॥ আগে ধান ঘরে তোলা চাই

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ‘যত তাড়াতাড়ি ক্ষেতের ধান ঘরে তোলা যায়- ততই মঙ্গল।’ দাম একটু কম হলেও তা দেখা যাবেনি, আগে ধান উঠুক তারপর দাম নিয়ে ভাবনা।’ ক্ষেত থেকে বোরো ধান তুলে আঙিনায় ওজন দেয়ার সময় এমন কথা বলছিলেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম। তারমতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ঘরে ধান তোলাটাই এখন জরুরী। শুধু শহিদুল নয়, তার মতো হাজারো কৃষক এখন ক্ষেতের ধান ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে ঘরে ধান তোলা ছাড়া আর অন্য কিছু ভাবছে না কৃষক। কালবৈশাখী তা-ব ও শিলাবৃষ্টির শঙ্কায় শ্রমিক সঙ্কটের মুখেই রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন। জেলার বোরো আবাদ নির্ভর তানোর, গোদাগাড়ী ও মোহনপুর ও পবার বিভিন্ন মাঠে মাঠে এখন সোনালী ধানের গন্ধ। কেউ মাঠে ধান কাটছেন, কেউ সেই ধান আঙিনায় তুলে শুরু করেছেন মাড়াই। এসব এলাকায় গেলে এখন ধান কাটা মাড়াইয়ের দৃশ্য মিলবে। কিষাণ-কিষাণী থেকে ধানকাটা শ্রমিক কারো ফুরসৎ নেই। সবাই ব্যস্ত ধান তোলার কাজে। এদিকে কৃষকের আঙিনায় নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে নতুন বোরো ধান। তবে মৌসুমের শুরুতেই দাম নিয়ে খানিকটা হোঁচট খাচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। দাম না থাকায় বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে সোনালী ফসল ঘরে উঠতে শুরু করলেও তৃপ্তি নেই কৃষকের। বোরো আবাদ সেচনির্ভর হওয়ায় খরচ বেশি। সেই অনুপাতে বাজারে দর কমে যাওয়ায় শুরুতেই অস্বস্তিতে রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষক। রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার এ অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীতে ৫৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে এবার। কৃষকরা জানান, বিগত বছরগুলোতে বোরো চাষের শুরুতেই বীজের তীব্র সঙ্কট, বীজতলা নষ্ট হওয়া, প্রয়োজনীয় ধানের বীজ না পাওয়া এবং লোডশেডিং থাকলেও এবার তার কোনটিই ছিল না। খুব ভালভাবেই আবাদ হয়েছে। মোহনপুর উপজেলার তেঘর মাড়িয়া গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন কুমার জানান, তিনি এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধান ঝরে গেছে। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে প্রায় দিগুণ। তার ওপরে বাজারে দাম কম থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কেশরহাট পৌর এলাকার হরিদাগাছি গ্রামের কৃষক আকবর অলী জানান, শ্রমিক সঙ্কটের কারণে তার ধান কাটতে দেরি হচ্ছে। নিচু জমির ধানগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও চেষ্টা করছেন সময়মতো ধান ঘরে তোলার। পবার তেঘর গ্রামের আফাজ উদ্দিন সরকার ও বিলনেপালপাড়া গ্রামের আলতাব হোসেন জানান, ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তবে বোরো আবাদে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই অনুপাতে দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষক। রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বোরোর নতুন ধান ব্যাপকহারে উঠতে শুরু করেছে স্থানীয় হাট বাজারে। অনেকে মাঠেই মাড়াই করে তা বেচে দিচ্ছেন। এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে এখন নতুন ধান বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। কৃষকরা জানান, বাজার দর এ অবস্থায় চলতে থাকলে কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে বর্তমান বাজার দর কম হওয়ার কারণ হিসেবে ধানের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আমদানিকে দায়ী করছেন।
×