ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী প্রত্যাহার, তৃণমূলে আক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ মে ২০১৫

চট্টগ্রামে বিএনপির প্রার্থী প্রত্যাহার, তৃণমূলে আক্ষেপ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ফল ঘোষিত হওয়ার পর আক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে। ভোট শুরুর মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম। এরপরও তিনি পেয়েছেন ৩ লক্ষাধিক ভোট। এতে তৃণমূলের অনেকেরই ধারণা নির্বাচন বর্জন না করলে ফল উল্টোও হতে পারত। এজন্য তারা দলের নেতাদের দুষছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন জয়ী হন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনজুর আলম পান ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট। কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে সরে দাঁড়ানোর পরও ঘোষিত ফলে মনজুর আলমের এত ভোট দেখে চোখ কপালে ওঠার অবস্থা বিএনপি সমর্থকদেরও। তাদের অনেকেরই দৃঢ় বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকলে তারাই জয়ী হতেন। নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি মনজুর আলম রাজনীতি থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়ায় এক ধরনের বিব্রতকর অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছে। মনজুর আলম নিজের ইচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন নাকি তাকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়েছে তা নিয়েও নানা কথা ভাসছে চট্টগ্রামে। কেননা, বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও সকাল সোয়া এগারোটার মধ্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে, প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্তে মনজুর আলমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচন থেকে সরানো হয়েছে বলে অভিযোগ আছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে। বিশেষ করে একইসঙ্গে রাজনীতি থেকেও সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ায় বিষয়টি আরও বদ্ধমূল হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে বিভিন্ন কেন্দ্রে যা কিছু অনিয়ম হয়েছে তার বেশিরভাগই বেলা বারোটার পর। ততক্ষণে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম তাঁর সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন। এ ঘোষণা ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন তাঁর সমর্থক ভোটাররা। ফলে অনেকেই আর ঘর ছেড়ে কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ দেখাননি। ফলে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সরকার দলীয় সমর্থকদের প্রাধান্য ছিল একচ্ছত্র। এরপরও পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিতে আসা ভোটারদের ভোট পড়েছে মনজুরের প্রতীকে। মূলত সাড়ে এগারোটার পর থেকেই মনজুর আলমের ভোটারদের ভাটা পড়ে। বিএনপির অনেকেরই অভিমত, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট ও ব্যালট বাক্সে সিলমারা সত্ত্বেও সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে এভাবে জয়লাভ করা অতটা সহজ হতো না। বিশেষ করে বিএনপির ভোটাররা মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মীদের সুবিধা হয়েছে। যদি ওই ঘোষণাটি না আসত তাহলে বিএনপির ভোটাররা বিভিন্ন কেন্দ্রে থাকত। ফলে শত চেষ্টা সত্ত্বেও নিরঙ্কুশ প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হতো না। এদিকে, মনজুর আলম স্বেচ্ছায় স্বাধীনভাবে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রার্থীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রায় একমাসের প্রচার এবং মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের পর ঠিক নির্বাচনের দিনে এসে ভোট থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা মনজুর আলমের ছিল না। এক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য ছিল না। বরং তিনি হয়েছেন দলের বড় নেতাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার করুণ শিকার। ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাঁকে ভোট থেকে সরতে হয়েছে বলেই মনজুর আলম রাজনীতি থেকেও নিজকে গুটিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন- এমনই মনে করছেন বিএনপিরই তৃণমূলের অনেক নেতা, কর্মী ও সমর্থক।
×