ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসায় গুরুত্বপ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসায় গুরুত্বপ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা আজ বৃহস্পতিবার সতেরো বছর পূর্ণ হল। আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ১৮তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ‘বিএসএমএমইউ’। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নাম পরিবর্তনসহ বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের পাঁয়তারা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেডিক্যাল উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও মেডিক্যাল চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান জনকণ্ঠকে জানান, যৌবনপ্রাপ্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশ ও জাতির সম্পদ। মেডিক্যাল শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসাসেবায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেশি। এখানে ভর্তি হওয়া সকল রোগীর এমনভাবে দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালে রোগীকে রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। এটা নিশ্চিত করতে পারলে হাসপাতালে আসা অতিরিক্ত ভিজিটরদের চাপ কমে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী এবং সাংবাদিকদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ১৮তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকের নিচতলায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বটতলা থেকে র‌্যালি বের হবে এবং সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডাঃ মিলন হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পায়রা ও বেলুন উড়ানো, স্মরণিকা প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসিক মুখপত্র বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদ প্রকাশ, সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিলন হলে আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় ¯œাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষায় রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। দেশের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৩০০ জন বিদেশী রেসিডেন্ট-ছাত্র-ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। রিউমাটোলজি বিভাগ, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, পাবলিক হেলথ এ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ চালু করা হয়েছে। সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন, পেলিয়েটিভ কেয়ার উইং, রেসপিটেরি মেডিসিন উইং প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে প্রায় ৪শ’টি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যে ছয়টি বাস সংগ্রহ করা হয়েছে। সেন্টার অব এক্সিলেন্সে রূপান্তরকরণের কার্যক্রম প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাফল্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহায়তায় কেবিন-ব্লকের উত্তর দিকে ১২ বিঘা জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে বেতার ভবনের জায়গা রেজিস্ট্রেশন করে বুঝে নেয়ার পর্যায়ে রয়েছে। নিজস্ব আয় থেকে প্রায় ১শ’ কোটি টাকা বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। কোরিয়ার সহজ শর্তের ঋণ সহযোগিতায় ৭শ’ শয্যার একটি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল গড়তে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। পঙ্গু ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৫ কোটি টাকার আয় থেকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা এবং বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫শ’ বেডে উন্নীত, কেবিনের সংখ্যা ১২৪-এ উন্নীত, অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা ৫৬-এ উন্নীত, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের শয্যা সংখ্যা ৩৭-এ উন্নীত, করোনারি কেয়ার ইউনিটের শয্যা সংখ্যা ৩৫-এ উন্নীত, আউটডোরে আগত রোগীর দৈনিক গড় সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজারে উন্নীত এবং বছরে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণকে আরও আস্থাশীল করার উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিক সকল চিকিৎসা সুবিধাদি সংবলিত পূর্ণাঙ্গ ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স, আউটডোর কমপ্লেক্স, অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স, নার্সিং অনুষদ প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক মানসম্মত মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার, বিভিন্ন রকমের গবেষণা পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ল্যাবরেটরি ভবনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে রূপান্তরকরণের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।
×