ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সামসুদ্দিন চেয়ারম্যান হত্যা

প্রধান আসামি বাদ দিয়ে চার্জশীট ॥ তিন কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

প্রধান আসামি বাদ দিয়ে চার্জশীট ॥ তিন কোটি টাকার বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ চাঞ্চল্যকর সামসুদ্দিন চেয়ারম্যান হত্যা মামলার প্রধান আসামিদের বাদ রেখেই চার্জশীট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ। গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের দিন গত বছরের ২৩ মার্চ বালুয়াকান্দি ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন প্রধানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকা- সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। অভিযোগ উঠেছে- প্রায় তিন কোটি টাকা রফায় মামলার প্রধান আসামি গজারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা ও তার অনুসারীদের রক্ষা করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী গজারিয়ার বালুয়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মর্জিনা বেগম এই অভিযোগ করে বলেন, চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে সোমবার আদালতে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, হত্যাকা-ের পর থানায় ৪৮ জনের নামে অভিযোগ করলেও পুলিশ উপজেলা চেয়ারম্যান রেফায়েত উল্লাহ খান তোতা, তার অনুসারী আজিম, টুন্নু, সাত্তার চেয়ারম্যান ও শাহজাহান চেয়ারম্যানসহ ২২ জনকে চার্জশীট থেকে বাদ দেয়। পরবর্তীতে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদপড়া ওই ২২ জনসহ মোট ৪৮ জনের বিরুদ্ধে নিহতের ভাতিজা টিটু প্রধান বাদী হয়ে আরও একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সিআইডি পুলিশ ওই ২২ জনের নামও চার্জশীট হতে বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী। অন্যদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান জানান, থানায় দায়ের করা মামলায় (মর্জিনা বেগম বাদী) ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জন এবং তদন্তে পাওয়া আরও চারজনসহ মোট ২৯ জনকে চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা মামলায় (বাদী নিহতের ভাতিজা ও ঘটনার সময় আহত টিটু প্রধান) এই ২৬ জনের সঙ্গে আরও ২২ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ৪৮ জনকে আসামি করা করলেও ওই মামলার ২২ জনকেই বাদ রাখা হয়েছে এই চার্জশীটে। নিহতের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, সিআইডি পুলিশ অতি গোপনে গত ২৩ এপ্রিল এই বিতর্কিত চার্জশীটটি আদালতে পেশ করে। অভিযোগ রয়েছে- চার্জশীটটি আদালতে গ্রহণের জন্য নানা রকম কৌশলও চলছিল। সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান জানান, টাকার বিনিময়ে চার্জশীট দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করেই এই চার্জশীট দেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে নারাজি দিলে পুনরায় অন্য কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত হবে। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে ॥ প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সামসুদ্দিন হত্যার এক বছরেও প্রকৃত খুনীরা ধরা পড়েনি। বরং চার্জশীট থেকে বাদ দিয়ে খুনীদের রক্ষার চূড়ান্ত অপতৎপরতা চলছে এখন। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দিতে চলছে টাকার ছড়াছড়ি। চেয়ারম্যান সামসুদ্দিনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, তার চাচা মুনসুর আলীকেও নিজ বাড়িতে হামলা চালিয়ে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়। বাড়ির মহিলাদের মারধর ও লাঞ্ছিত করে চিহ্নিত খুনীচক্র। চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন প্রধান ও তার চাচা মনসুর আলী প্রধান হত্যা মামলাটি মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। মর্জিনা বেগম স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁর স্বামীকে যারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। স্বামী হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন মর্জিনা বেগমও। চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েও সন্ত্রাসী ও খুনীদের ভয়ে যথাযথভাবে কাজ করতে পারছেন না। মর্জিনা বেগম জানান, সামসুদ্দিন প্রধান একজন সৎ, আদর্শবান সাহসী ও জনগণের সেবক ছিলেন। তিনি মানুষের ও এলাকার কল্যাণের কথা ভাবতেন সব সময়। এ কারণেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু স্বামীর সেই জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারেনি খুনীচক্র। তাই সামসুদ্দীন চেয়ারম্যানকে হত্যা করে নিজেদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে খুনীরা। ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের আগেই আমার স্বামীকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। আর এই হত্যাকা-ের জন্যে নারায়ণগঞ্জ থেকেও খুনী ভাড়া করা হয়।
×