ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে চার দেশের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে চার দেশের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র জমা

ফিরোজ মান্না ॥ দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য চার দেশের পাঁচ প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নেয়ার জন্য আরও তিনটি দেশের কোম্পানি দরপত্রের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। আগামী ২ জুন দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। দরপত্র জমা দেয়া শেষ হলে সব দরপত্র মূল্যায়ন করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হবে। দরপত্র আহ্বান করার পর থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিধিরা বিটিআরসির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের পরিচালক মোঃ গোলাম রাজ্জাক, সিনিয়র সহকারী পরিচালক মোঃ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠকও করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেন, তারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কাজ পেতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা ও ফ্রান্সের পাঁচটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা করেন। এসব দেশের কোন কোন কোম্পানি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দরপত্র জমা দেবেন তাদের নাম প্রকাশ করেনি বিটিআরসি। নাম প্রকাশ করা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিটিআরসি জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এমন সব কোম্পানিই দরপত্র জমা দেয়ার জন্য যোগ্য হবেন। বিটিআরসি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে এ মাসেই। এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হলে দেশসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি দেশ টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেম (৪০টি ট্যান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড)-এর গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা দেবে। দরপত্রের আওতায় স্পেস সিগমেন্ট, লঞ্চ সার্ভিস, গ্রাউন্ড সিগমেন্ট ও উৎক্ষেপণের এক বছর পর্যন্ত বীমা সুবিধা রাখা হয়েছে। বিটিআরসি এ বছরের ১৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল সøট ইজারা নিতে চুক্তি করে। চুক্তির আওতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল সøটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে দুই কোটি ৮০ লাখ দেবে বিটিআরসি। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। দাতা সংস্থা দেবে এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। বিডার্স ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যবস্থা করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংরাদেশ টেলিকমিউনিকেশস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর নিজস্ব জমিতে দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন হলে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকলেও ব্রডকাস্টিং থেকে শুরু করে টেলিযোগাযোগের সব সেক্টর উন্মুক্ত হয়ে যাবে। বিদেশী স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। অন্যদিকে স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত তরঙ্গ ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। বিটিআরসির ২০০৮ সালে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য আইটিইউর কাছে ইলেক্ট্রনিক ফাইলিং দাখিলসহ প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করে। এরপর নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য বিটিআরসি স্যাটেলাইটের বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক আলোচনা করে সর্বশেষ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। জানা গেছে, মহাকাশের বিভিন্ন রেখায় স্থাপন করা ৬৯টি দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট যোগাযোগ ও সম্প্রচার এবং গোয়েন্দাগিরির কাজ করে যাচ্ছে। নিজেদের স্যাটেলাইট না থাকায় বাংলাদেশের ওপর বিদেশী পাঁচটি স্যাটেলাইট ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের ৪৫টি দেশের মহাকাশে নিজস্ব স্পেস রয়েছে। তাদের আকাশে অন্য কোন দেশের স্যাটেলাইট নেই। ৫০টি দেশ অন্য দেশের সহযোগিতায় স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। ১১টি দেশের নিজস্ব ব্যয়ে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এসব দেশের শতাধিক স্যাটেলাইট বিষুবরেখা, মেরুবিন্দু বা ক্রান্তীয় অঞ্চল অথবা বিভিন্ন কৌণিক পথে পরিভ্রমণ করছে। যোগাযোগ মাধ্যমের স্যাটেলাইটগুলো সাধারণত বিষুবরেখার ওপর স্থাপন করা হয়। কক্ষপথের এই স্থানে স্যাটেলাইট স্থাপন করলে পরিচালন ব্যয় অনেক কম। তাই উন্নত দেশগুলো এই কক্ষে একটার পর একটা যোগাযোগ স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে।
×