ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন মাপক যন্ত্র ৩৮ মাস অচল

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৯ এপ্রিল ২০১৫

দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন মাপক যন্ত্র ৩৮ মাস অচল

খোকন আহমেদ হীরা, বরিশাল ও মোখলেছুর রহমান, পটুয়াখালী ॥ মাত্র একটি সেন্সরের অভাবে সচল করা যাচ্ছে না পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) স্থাপিত ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র সিসমোগ্রাফ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়কারী একমাত্র এই মেশিনটি দীর্ঘ ৩৮ মাস ধরে অচল রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে গত ২৫ এপ্রিলের শক্তিশালী ভূমিকম্পের মাত্রা জানা সম্ভব হয়নি। অথচ ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ২০১০ সালের অক্টোবরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের এই মেশিনটি স্থাপন করা হয়েছিল। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সম্পাদিত চুক্তির আওতায় দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অপর দুটি জেলা শহরে ২০০৩ সাল থেকে স্থায়ীভাবে এই সিসমোগ্রাফি মেশিন স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের আওতায় অস্থায়ী আরো ছয়টি সিসমোগ্রাফি মেশিন রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ঢাবির ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আকতার জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ২০০০ সালে এই চুক্তি হয়। চুক্তির আওতায় অনুদান হিসেবে পাওয়া একটি সিসমোগ্রাফি মেশিন ২০০৩ সালে প্রথম ঢাবি ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট ও কাপ্তাইয়ে স্থাপন করা হয়’। পবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সিসমোগ্রাফি মেশিনের তদারকির দায়িত্বে ইলেকট্রিক এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুনিবুর রহমান জানান, ‘২০১০ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ মেশিনটি স্থাপন করা হয়। স্থাপনের পর দু’বার ভূমিকম্পনের মাত্রা নির্ণয় করি। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতে মেশিনটিতে সমস্যা দেখা দিলে একাডেমিক ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের সঙ্গে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে সংযোগসহ ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটির চালু করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি চালুর এক বছর না যেতেই সেন্সর নষ্ট হয়ে যায়। গত ৩৮ মাস যাবৎ যন্ত্রটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, ‘ভূমিকম্পের চারটি স্টেজ। প্রাইমারি ওয়েভ, সেকেন্ডারি ওয়েভ, সার্ফেস ওয়েভ এবং রিলে ওয়েভ। চারটি ওয়েভ একসঙ্গে বের হলেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ পাওয়ার এক-দুই মিনিট আগে এই সতর্কবার্তা পাওয়া সম্ভব, যদি ২৪ ঘণ্টা এই মেশিন মনিটর করা হয়। তাহলে জনগণকে ভূমিকম্প সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি অনেক কম হবে’। পবিপ্রবির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল হোসেন জানান, ‘সিসমোগ্রাফি মেশিনটি তিন ভাগে বিভক্ত। এর সেন্সর সেন্স করে, রিসিভার রিসিভ করে, আর সফটওয়্যারের সাহায্যে কম্পিউটার মনিটরের মাত্রা এবং দূরত্ব নির্ণয় করা হয়। এ ছাড়া এই মেশিনের অংশ বিশেষ (প্লেট) মাটির নিচে থাকে। এই প্লেটের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ ভূমির অবস্থান ওপরে উঠছে, নাকি নিচে নামছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়’। এদিকে বরিশালের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি ৩৮ মাস ধরে অচল থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ। অবিলম্বে যন্ত্রটি সচল করার দাবি জানিয়েছে তারা।
×