ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশবান্ধব কারখানা

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৮ এপ্রিল ২০১৫

পরিবেশবান্ধব কারখানা

বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব নিটওয়্যার কারখানা স্থাপনের কৃতিত্ব এখন বাংলাদেশের। নারায়ণগঞ্জের নরসিংহপুরে স্থাপিত কারখানাটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও মডেল হিসেবে অবস্থান নিতে যাচ্ছে। ৫ দশমিক ৫ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা কারখানাটি অতি সত্বর চালু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের কারখানা স্থাপনে প্রথম এগিয়ে এসেছে। ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানের আগ্রহে ও আর্থিক সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসার ফসল এই কারখানা। এই নতুন পরিবেশবান্ধব কারখানাটি কম খরচে পরিচালিত হবে। ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুত প্যানেল এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে পানি ও বিদ্যুত খাতে ব্যয় অর্ধেকে নেমে আসবে। ২৮ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ছিমছাম পরিবেশে সব সময় কাজ করবে প্রায় দু’হাজার শ্রমিক। ভবনের ওপর তলায় কাজ চলবে সূর্যের আলোয়। আকাশ মেঘলা হলে বাতি আপনাআপনি জ্বলে উঠবে। ইস্পাতের তৈরি দ্বিতল মূল কারখানা ভবনটির তিন পাশে লম্বা বারান্দা-আলো-বাতাস চলাচল করতে পারবে। ওঠানামার সিঁড়ি ৫টি হলেও বেরুবার সিঁড়ি ১১টি। অতএব হুড়োহুড়ি করে বের হতে হবে না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবনে শ্রমিকরা একই তাপমাত্রায় কাজ করতে পারবে। ফলে শরীরের ওপর চাপ পড়বে না। দুই লাখ লিটার ধারণক্ষমতার পানির ট্যাংক, যাতে বৃষ্টির পানিও জমা হবে। সৌর প্যানেলের কারণে বিদ্যুত সাশ্রয় হবে ৭০ কিলোওয়াট। ভবন নির্মাণের নব্বই শতাংশই দেশীয় উপকরণ। কারখানার ৫ শত বর্গমিটারের মধ্যে রয়েছে শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস ও টেম্পোস্ট্যান্ড। শ্রমিকদের দূর হতে আসা-যাওয়া করতে হবে না। এতে শ্রমঘণ্টা, সময় অপচয় যেমন হবে না, তেমনি জ্বালানি ব্যয়ের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কম হবে। শ্রমিকদের যাতায়াত ব্যয় হবে না। ভবনে রয়েছে শিশু কেয়ার সেন্টার ও ডাইনিং হলও। প্রশিক্ষণ কক্ষ করা হয়েছে একসঙ্গে ২শ’ শ্রমিককে প্রশিক্ষণদানের জন্য। গুদামের জন্য পৃথক তিনতলা ভবন। ডায়িং কারখানাও আলাদা। সর্বশেষ প্রযুক্তির সেলাই মেশিন বসানো হয়েছে যা বিদ্যুত সাশ্রয়ী ও ধুলোবালি শোষক। মূল কারখানা ভবনের সামনে রোপিত হয়েছে দেশীয় গাছপালা। কারখানা চত্বরে খোলা জায়গা ৫২ শতাংশ- যা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ লাখ ২০ হাজার পিস পোশাক। বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রীন তহবিল সবুজ শিল্পকারখানা বিনির্মাণে অর্থায়ন করে আসছে। বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর পরিবেশ নিয়ে এন্তার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে বিদেশী ক্রেতারা যেমন তেমনি শ্রমিকরাও। যথাযথ বিধিবিধান মেনে অনেক কারখানার ভবন নির্মাণ করা হয়নি। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ন্যূনতম। বিদ্যুত ব্যবস্থা দুর্বল। দুর্ঘটনা ঘটার পেছনে এসব কারণই মুখ্য। দুর্বল ভবনের কারণে ও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ থাকায় রানা প্লাজাসহ আরও অনেক কারখানায় বহু শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। অনেক শ্রমিক পঙ্গু হয়েছে। বিদেশী ক্রেতারা সরেজমিন পরিদর্শন করে অনেক কারখানার বিষয়ে আপত্তিও জানিয়েছেন। মোদ্দাকথা, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাতটির পরিবেশ যদি যুগোপযোগী না হয়, তবে তা উৎপাদক ও ক্রেতার জন্য সন্তোষজনক অবস্থা তৈরি করতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের পথ ধরে দেশের অন্য পোশাক কারখানাগুলোও পরিবেশবান্ধব, কম বিদ্যুতসহ অন্যান্য ব্যয় হ্রাস করে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশা ভোক্তা ও শ্রমিকদের মতো সাধারণ জনগণেরও।
×