ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসির যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন ;###;ঢাকা উত্তরে ১৬, দক্ষিণে ২ ও চট্টগ্রামে ১২ মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায়;###;আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত

রাত পোহালেই ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ॥ প্রচার শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৫

রাত পোহালেই ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন ॥ প্রচার শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। ইতোমধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তিন সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইসির পক্ষ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে রবিবার রাত বারোটা থেকেই প্রার্থীদের সকল প্রকার প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভোটের সব ধরনের সরঞ্জাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছে গেছে। আজকের মধ্যে সব ভোট কেন্দ্রে ব্যালট ও সরঞ্জামাদি পৌঁছে যাবে। সন্ধ্যা থেকেই ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা চলে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের ভোট প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়পত্র দাখিল করেন। গত ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক, বিএনপি সমর্থিত তাবিথ আউয়ালসহ মোট ১৬ প্রার্থী শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হন। অপর দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন ও বিএনপির সমর্থিত মির্জা আব্বাসসহ মোট ২০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির ও বিএনপি সমর্থিত মনজুর আলমসহ ১২ প্রার্থী নির্বাচনের চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছেন। গত ৭ এপ্রিল থেকে মেয়র কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরতে অবিরাম প্রচার চালিয়ে গেছেন। দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। দিনরাত খেয়ে না খেয়ে ঘুম হারাম করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করেছেন। এছাড়া প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নানা ধরনের প্রচার চালানো হয়েছে। নির্বাচনের প্রার্থীর সব ধরনের প্রচার শেষ হয়েছে। এখন শুধু দেখার পালা ভোটার কোন প্রার্থীকে গ্রহণ করছেন। মঙ্গলবার ব্যালটেই হবে ভোটের ফয়সালা। সিটি নির্বাচন দলীয় না হলে নির্বাচনী প্রচারে দলীয় দলসমর্থিত প্রার্থীদের বেশি সক্রিয় দেখা গেছে। ভোটার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। নির্বাচনী প্রচারেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে যেমন প্রচার চালিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা, তেমনি আওয়ামী লীগসমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে দলের নেতাদের যাদের নির্বাচনী প্রচারের কোন বাধা নেই এমন নেতাদের সক্রিয় দেখা গেছে। এ কারণে ভোটাররা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে বড় দুই দলের প্রার্থীকে এগিয়ে রাখছেন। তবে কারা হবেন তিন সিটির জনপ্রতিনিধি তা শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ হবে ভোটারদের ভোটের মাধ্যমে। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ৪৮ প্রার্থী অংশ নিলেও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর বাইরে অন্য প্রার্থীদের প্রচারে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল খুবই কম। এ কারণেই ভোটাররা ধারণা করছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন এলাকাধীন সব সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারী অফিস/প্রতিষ্ঠান/সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোটগ্রহণের সুবিধার্থে ওইসব এলাকায় মঙ্গলবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো। তবে নির্বাচনের ওইসব এলাকায় কোন পাবলিক পরীক্ষা থাকলে পরীক্ষা কেন্দ্র এবং পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবারের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কোন ধরনের গোলযোগের আশঙ্কা নেই। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিন-চার গুণ বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। তিনি বলেন, ভোটারদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি নির্বাচনে কোন ধরনের গোলমাল হবে না। গোলমাল হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও প্রস্তুত থাকবে। তিনি বলেন, ভোটারদের অনুরোধ তারা যেন ভোট কেন্দ্রে এসে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন। রবিবার রাত বারোটার পরে নির্বাচনে যে কোন প্রচারে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে। প্রার্থীদের প্রচার বিষয়টি নজরে রাখা হবে। কেউ যেন বেআইনীভাবে প্রচার না করেন। এছাড়া জরুরী প্রয়োজন ছাড়া যে কোন ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও শাহ নেওয়াজ জানান। নির্বাচনী এলাকায় যাদের কোন কাজ নেই, যারা বসবাসও করেন না, তাদের নির্বাচনী এলাকার বাইরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে রবিবার দুপুরে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান। এদিকে রবিবার ১৪ দলের প্রকটি প্রতিনিধি দল সিটি নির্বাচন উপলক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সাক্ষাত শেষে দলের পক্ষ থেকে এ নির্বাচনে বিএনপির নাশকতার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত কয়েকদিন ধরে সহস্র নাগরিক কমিটির সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। রাজপথ বন্ধ করে সভা-সমাবেশ করছেন। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে এ সব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়াসহ খালেদা জিয়া যেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ১৪ দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে। ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, খালেদা জিয়া গত কয়েকদিন ধরে সহস্র নাগরিক কমিটি সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া বেআইনীভাবে মোটরশোভাযাত্রা নিয়ে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম পরিচালনাসহ নির্বাচনী আইন ও বিধিমালা বহির্ভূত কর্মকা-ে লিপ্ত রয়েছেন যা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিঘিœত করার প্ররোচনা ও উস্কানিমূলক কর্মকা-ের নামান্তর। তাই ১৪ দল ধারাবাহিকভাবে খালেদার সকল কর্মকা-ে প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছে। এ সময় জাসদ নেতা শিরিন আকতার, গণতন্ত্রী পার্টির নেতা ড. শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের নেতা ইসমাঈল হোসেন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের নেতা ড. ওয়াজেদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে তিন সিটিতে নির্বাচন উপলক্ষে কমিশনের পক্ষ থেকে রবিবার রাত বারোটা থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোন প্রকার জনসভা আহ্বান, এতে যোগদান, কোন প্রকার মিছিল বা শোভাযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার রাত বারোটা থেকে নির্বাচনী এলাকায় যান চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনে প্রার্থী, প্রশাসনের অনুমোদিত ব্যক্তি এবং মহাসড়কে কয়েকটি ক্ষেত্রে যান চলাচলের ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কথা বলা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে শনিবার রাত বারোটা থেকে নির্বাচনের দিন দিবাগত রাত বারোটা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্যের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকছে সেনাবাহিনী। আগামীকাল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকছে বলে জানানো হয়েছে।
×