ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জে এ্যাসিডদগ্ধ ৫ বেনাপোলে গাছ কাটা নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ২

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

সিরাজগঞ্জে এ্যাসিডদগ্ধ ৫ বেনাপোলে গাছ কাটা নিয়ে  সংঘর্ষে নিহত ২

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যশোরের বেনাপোলে গাছ কাটা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। শার্শা উপজেলার বেনাপোলের রঘুনাথপুর গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে আহত হয়েছেন ৩২ জন। এছাড়া সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার তামাই বাজারে দুই সুতা রং ব্যবসায়ীর মধ্যে সংঘর্ষে তিন ভাইসহ পাঁচজন এ্যাসিডদগ্ধ হয়েছে। মাদারীপুর সদরের চরমুগরিয়া বন্দর এলাকায় দফায় দফায় হাজরাপুর গ্রামবাসীর হামলায় সময় তিন পুলিশসহ ১৪ জন আহত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে দুই ভাইয়ের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহতসহ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণ লুট হয়েছে। অন্যদিকে ভোলার চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ গ্রামে শুক্রবার দুপুরে বিরোধীয় জমিতে ঘর তুলতে বাঁধা দেয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। যশোরের বেনাপোলে গাছ কাটা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছে। শুক্রবার সকালে শার্শা উপজেলার বেনাপোলের রঘুনাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেনÑ রঘুনাথপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে সাবেক মেম্বার আব্দুল্লাহ (৫২) ও একই গ্রামের মৃত খলিলের ছেলে বুদো (৫৫)। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া গাছ কাটা নিয়ে শুক্রবার সকালে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে একই গ্রামের প্রতিপক্ষ নাসির, আলাউদ্দিনসহ তাদের লোকজনের সঙ্গে আব্দুল্লাহ ও তার পক্ষের লোকজন বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নিলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত বুদোকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। আরও অন্তত পাঁচজন আহত হয়। এদের মধ্যে নিহত আব্দুল্লাহর ছেলে সুমন, একই গ্রামের তসির উদ্দিনের ছেলে আজগর আলী ও শাইজুলের ছেলে আব্দুল্লাহকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ ॥ সিরাজদিখানে দুই ভাইয়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ১০ জন আহতসহ দুই লাখ টাকা ও স্বর্ণ লুট হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে রামদা দিয়ে কোপানো মৃত হাফিজদ্দিনের ছেলে মোঃ আক্রাম হোসেন (৪৫), আক্রাম হোসেনের ছেলে আবু রায়হান (২৫), সায়হান হোসেন (২০), নাদিয়া আক্তার (১৮), ছিব্বির (৮), আক্রাম হোসেনের স্ত্রী রুবিয়া বেগমকে (৪২) প্রথমে সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আহত অন্যদের উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আহত আবু রায়হান বলেন, এক শতাংশ জায়গার জন্য দ্বীন ইসলাম, রমজান মিঞা, চঞ্চল, আবু, হুমায়ুন, রকিব শুক্রবার সকালে পরিকল্পিতভাবে আমাদের ১০-১২ জনকে লোহার রড, রামদা ও চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। এলাকার লোকজন এগিয়ে না এলে হয়ত মরে যেতাম। ওরা আমার বাড়িতে ঘরদোর ভাংচুর করে নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা ও স্বর্ণের চেন লুট করে নিয়ে যায়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজানগর ইউনিয়নের ফুলহার গ্রামের এক শতাংশ জমি নিয়ে মোঃ আক্রাম হোসেন ও তার আপন ভাই দ্বীন ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। শুক্রবার সকালে ওই জায়গা নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দ্বীন ইসলামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দেয়ার একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। সিরাজদিখান থানার ওসি (প্রশাসন) মোঃ ইয়ারদৌস হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সিরাজদিখান থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ ॥ বেলকুচি উপজেলার তামাই বাজারে শুক্রবার সকালে দুই সুতা রং ব্যবসায়ীর মধ্যে সংঘর্ষে তিন ভাইসহ পাঁচজন এ্যাসিডদগ্ধ হয়েছে। এদের মধ্যে চারজনকে বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং স্থানীয় বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কজনক। আহতরা হলেনÑ উপজেলার নাগগাঁতী গ্রামের মৃত হারুনার রশিদ সরকারের ছেলে অসীম সরকার (৩৭), তামাই গ্রামের মৃত মন্নাফ প্রামাণিকের ছেলে হেলাল প্রামাণিক (৪৫), একই গ্রামের হাজী উমর আলীর তিন ছেলে হজরত আলী (৩০), মাহবুব হোসেন (৩৫), গফুর আলী (৪৫)। পরে তাদের সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুক্রবার বেলা ১১টায় তামাই বাজারের সুতা রং ব্যবসায়ী লতিফ ফকিরের সঙ্গে পাশের আরেক সুতা রং ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেনের ব্যবসা নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। এ সময় উভয়ের লোকজন উপস্থিত হলে লতিফ ফকির ও তার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর দোকানে রাখা এ্যাসিড ছোড়ে। এতে দুই পথচারী এবং মাহবুব হোসেনসহ তার দুই ভাই এ্যাসিডে দগ্ধ হয়। তাদের হাত-পা, মুখ, বুক, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। দ্রুত এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করে। মাদারীপুর ॥ সদরের চরমুগরিয়া বন্দর এলাকায় শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় পার্শ্ববর্তী হাজরাপুর গ্রামবাসীর হামলা এবং অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তিন পুলিশসহ ১৪ জন আহত হয়েছে। আহতদের মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫২ রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চরমুগরিয়া বন্দরের সরকারী জায়গার একটি আমগাছ থেকে আম পাড়তে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। আহতদের মধ্যে চরমুগরিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ভীষ্ম কুমার দেবনাথ বিশ্বজিৎ, পুলিশ কনস্টেবল তৌফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল অনিমেষ বিশ্বাস এবং ইসমাইল তালুকদার, মরিয়ম বেগম, রানা তালুকদার, সজিব তালুকদার, মনির কবিরাজ, নাহিদ খোন্দকারের নাম পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সজিব মাতুব্বর, হাসান মাতুব্বর, উজ্জ্বল বেপারী, আরিব কবিরাজ, হাবিব কবিরাজ, ওয়াসিম মাতুব্বর, রুবেল হাওলাদার, ইমন খান, জাফর ইকবাল, রাসেল বেপারী, সজল মুন্সী ও শাহাদাত হোসেনকে আটক করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, চরমুগরিয়া বন্দরের অধিবাসী মাদারীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক আবু মুন্সীর ইন্ধনে এই হামলা করা হয়েছে। হামলায় যেসব বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়েছে তার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫২ রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভোলার চরফ্যাশনের হাজারীগঞ্জ গ্রামে শুক্রবার দুপুরে বিরোধীয় জমিতে ঘর তুলতে বাধা দেয়ায় প্রতিপক্ষের হামলায় পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেনÑ আজিজুল (৬০), নুরজাহান (৫০), নুর ইসলাম (৩৫), নুরে আলম (৩০) ও মিনারা (২৫)। তাদের চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করার পর আজিজুল ও নুরজাহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল প্রেরণ করেছেন। আহত নুরুল ইসলাম জানান, হাজারীগঞ্জ গ্রামে জমি বন্দোবস্ত নিয়ে দীর্ঘ ১৫-২০ বছর যাবৎ ঘরবাড়ি করে বসবাস করেন। ওই বাড়িতে ৪ শতাংশ জমি পাবে দাবি করে একই এলাকার নান্নু বেপারীর ছেলে লোকমান বিরোধ করে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ওই জমিতে লোকমান ইটবালি এনে ঘর তোলার চেষ্টা করার সময় বাধা দিলে লোকমানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন লোহার রড নিয়ে হামলা চালায়। এতে পাঁচজন গুরুতর আহত হয়।
×