ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে এডিবি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৫ এপ্রিল ২০১৫

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে এডিবি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে অতিরিক্ত অর্থ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি দিচ্ছে ১২ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী-৩ (পিইডিপি-৩) বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। এ অর্থায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যেই নেগোসিয়েশন সম্পন করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এ বিষয়ে এডিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ইআরডির যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ জনকন্ঠকে জানান, এ বিষয়ে এডিবির নেগোসিয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চুক্তি স্বাক্ষর করা যাবে। তার আগে একটি মিশন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সফর করেছিল ওই সময়ই অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে সম্মতি পাওয়া গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে এডিবি সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই অর্থায়ন করছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করণ ও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়াতে ২০১১ এ কর্মসূচী হাতে নেয় সরকার। দাতা গোষ্ঠীর সহায়তা নির্ভর মেগা কর্মসূচী বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করেছিল প্রায় দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়ন করেছিল প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও অর্থায়নে সহায়তা করেছিল ডিএফআইডিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা। এ কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে দিচ্ছে ১২ কোটি মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পিউডিপি-৩ কর্মসূচীর অধীনে দেশব্যাপী ৩ হাজার ৬৮৫টি শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, ২ হাজার ৭০৯টি বিদ্যালয় পুনর্নির্মাণ, একজন শিক্ষকের অনুকূলে ৪০জন ছাত্রের সমন্বয় তথা অনুপাত ১:৪০ তে নামিয়ে আনা, ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৫৫টি টয়লেট স্থাপন, ৪৯ হাজার ৩০০টি নলকূপ, ৫৩ হাজার ৭৫০টি প্রস্রাবখানা নির্মাণ, ১১ হাজার ৬০০টি শ্রেণীকক্ষ মেরামত ও জেলা উপজেলায় রিসোর্স সেন্টার করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী-৩ (পিইডিপি-৩) কর্মসূচীতে একক অডিট সংক্রান্ত জটিলতার সৃষ্টি হলেও তা শেষ পর্যন্ত কেটে গেছে। এতদিন অন্যান্য প্রকল্পে বৈদেশিক সহায়তা ও সরকারী অংশের টাকা আলাদা আলাদা করে অডিট করা হলেও এ কর্মসূচীতে এসে দাতারা দুটি মিলে একটি অডিট প্রতিবেদন চাওয়ায় এ জটিলতা দেখা দেয়। কেননা বৈদেশিক অংশ অডিট করার দায়িত্ব হচ্ছে ফরেন এইড এইডেড প্রজেক্ট অডিট ডিরেক্টরেট (ফাফাত) নামের একািট সংস্থার আর সরকারী অর্থের অডিডের দায়িত্ব হচ্ছে কন্ট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএনজি অফিস)। এক সঙ্গে প্রতিবেদন চাওয়ায় কোন সংস্থা অডিট করবে তা নিয়ে মত দ্বৈততার সৃষ্টি হয়। ফলে অর্থছাড়ের বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়েছিল। অবেশেষে শুধুমাত্র এ কর্মসূচীটির জন্য সিএনজি অফিসের বিশেষ ব্যবস্থায় ফাফাত দুটো অডিট প্রতিবেদন এক সঙ্গে করবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলতে থাকা নয়টি দাতা সংস্থার অর্থায়নে এ কর্মসূচী থেকে অডিট সংক্রান্ত জটিলতা কেটে গেছে। পিইডিপি-৩ কর্মসূচীতে অর্থায়নকারী দাতা সংস্থাগুলো হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), ডিএফআইডি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস এইড, সিডা, জাপান আন্তর্জাতিক সহাযোগিতা সংস্থা (জাইকা), কানাডিয়ান সিডা এবং ইউনিসেফ। সূত্র জানায়, এ কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক দিচ্ছে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সংস্থাটি জানায়, চলমান তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য আরও ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করে প্রাথমিক শিক্ষা মানের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা হবে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় মেধাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ ও শূন্যপদ পূরণের নিশ্চয়তা বিধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। উপরন্তু, শিক্ষা বছরের প্রথম মাসেই ৯০ শতাংশ স্কুলে পাঠ্য বই বিতরণ নিশ্চিত করা হবে। এ কর্মসূচীর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বব্যাংকের টীম লিডার আয়েশা ভাওদা বলেছেন, সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত কর্মসূচীর জন্য অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুকে স্কুলমুখী করা এবং মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করা নিশ্চিত হবে। আরও বেশী সংখ্যক শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা ছাড়াও এ কর্মসূচীর অধীনে বিশেষ করে অনগ্রসর এলাকাসমূহে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখা হবে এবং স্কুলের সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো মান উন্নত করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম জনকন্ঠকে জানান, প্রাথমিক শিক্ষাখাত উন্নয়নে দাতাদের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন মেগা এ কর্মসূচীর জন্য অতিরিক্ত অর্থায়ন হিসেবে বিশ্বব্যাংক এ সহায়তা দিচ্ছে। শুধু বিশ্বব্যাংকই নয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও অতিরিক্ত অর্থায়ন করছে। কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীরা সন্তুষ্ট হয়েছে বলেই অতিরিক্ত অর্থায়ন করছে। আমরা আগামী কয়েক বছর কর্মসূচীটি বাস্তবায়নে অর্থায়নের গ্যাপ নির্ধারণ করেছি। সেখানে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির কাছ থেকে কত টাকা নেয়া হবে এবং সরকারী তহবিলের কত টাকা প্রয়োজন হবে তা নির্ধারণ করেছি। সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে বিশ্বব্যাংকের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল শিক্ষাখাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শিক্ষার প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিগম্যতা ও সমতা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে উপবৃত্তি। সংস্থাটির মতে, উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে অধিক সংখ্যায় নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবারের শিশু ও মেয়েদের ভর্তির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় সর্বজনীন অভিগম্যতা অর্জন করে ফেলেছে। প্রাথমিক স্কুলে মোট ভর্তির হারে শতভাগসহ অন্যান্য শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
×