ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাটলেটিকো দেয়াল টপকে সেমিতে রিয়াল মাদ্রিদ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

এ্যাটলেটিকো দেয়াল টপকে সেমিতে  রিয়াল মাদ্রিদ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অবশেষে এ্যাটলেটিকো গেরো খুলতে পেরেছে রিয়াল। চলতি মৌসুমে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে আগের সাতবারের লড়াইয়ে একবারও জয়ের দেখা পায়নি গ্যালাক্টিকোরা। বুধবার রাতে দুর্ভেদ্য সেই দেয়াল টপকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের সেমিফাইনালে উঠে গেছে আসরের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে স্বাগতিক রিয়াল মাদ্রিদ ১-০ গোলে হারায় এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে। এর ফলে গত আট ম্যাচে প্রথমবারের মতো এ্যাটলেটিকোকে হারাতে পারল রিয়াল। ঘরের মাঠ সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে গোল করেন মেক্সিকান ফরোয়ার্ড জ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ। এর আগে ১৪ এপ্রিল ভিসেন্টে ক্যালডেরনে দু’দলের প্রথম লেগের ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। দুই লেগ মিলিয়ে তাই এক গোলের জয় নিয়ে সেরা চারের ছাড়পত্র পেয়েছেন রোনাল্ডো, রামোস, রড্রিগুয়েজরা। ম্যাচ শেষে রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি আরও একবার ফাইনালে খেলার আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন। আর হারলেও দল নিয়ে গর্বের কথা বলেছেন এ্যাটলেটিকোর আর্জেন্টাইন কোচ দিয়াগো সিমিওনে। ম্যাচে এক গোলদাতা হার্নান্দেজ এই জয়ের পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন সতীর্থদের। বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের ইনজুরি ও বহিষ্কারাদেশের দুশ্চিন্তা মাঠে নেমেছিল রিয়াল। এদের মধ্যে অন্যতম মার্সেলো, লুকা মডরিচ, গ্যারেথ বেল ও করিম বেনজেমা। এ কারণে কোচ কার্লো আনচেলত্তি বাধ্য হয়েছেন সার্জিও রামোসকে তার স্থান থেকে সরিয়ে মিডফিল্ড পজিশনে খেলাতে। এবারের মৌসুমে রিয়ালের বিরুদ্ধে সাত ম্যাচ অপরাজিত থাকার সুখস্মৃতি নিয়ে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে নেমেছিল লা লিগার বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের শুরু থেকে আক্রমণের ধার কম থাকলেও বল পায়ে রেখে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের অধীনে রাখে রিয়াল। এ কারণে প্রথম লেগে রোনাল্ডোদের রুখে দেয়া সিমেওনের শিষ্যরা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। এরপরও বেনজেমার পরিবর্তে মাঠে নামা হার্নান্দেজের ও রোনাল্ডোর প্রচেষ্টা ছাড়া প্রথমার্ধে স্বাগতিকরা তেমন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। বিরতির আগে সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন রোনাল্ডো। জেমস রড্রিগুয়েজের পাস থেকে বল পেয়ে অতিথি গোলরক্ষক ওবলাককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি বর্তমান ফিফা সেরা ফুটবলার। প্রথম লেগে ঠিক যেভাবে বেলকে হতাশ করেছিলেন ওবলাক, এবারও তাই করেন সি আর সেভেনের ক্ষেত্রে। বিরতির পর সুযোগটি সৃষ্টি করে স্বাগতিকরাই। ইস্কোর বাড়ানো দারুণ পাস থেকে লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হন হার্নান্দেজ। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে বিস্ময়করভাবে এ্যাটলেটিকো কোচ সিমিওনে দলের হয়ে মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা এ্যান্টোনিও গ্রিয়েজম্যানকে উঠিয়ে নেন। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে রামোসকে অবৈধভাবে ট্যাকেল করার কারণে আরডা টুরান দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে গেলে দশজনের দলে পরিণত হয় সফরকারী এ্যাটলেটিকো। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যায়। দশজনের দলে নেমে যাওয়া এ্যাটলেটিকোর গোলমুখে প্রচ- চাপ সৃষ্টি করতে থাকে গোলের জন্য মরিয়া রিয়াল। কিন্তু ৮০ ও ৮১তম মিনিটে যথাক্রমে ইস্কো ও রড্রিগুয়েজের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। অবশেষে ৮৮ মিনিটে রড্রিগুয়েজ ও রোনাল্ডোর অসাধারণ দক্ষতায় বল পান হার্নান্দেজ। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটের থেকে ধারে রিয়ালে খেলতে আসা মেক্সিকান ফরোয়ার্ড। এই গোলেই দারুণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচ শেষে উচ্ছ্বসিত হার্ন্দাদেজ বলেন, অবশ্যই এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গোল। কারণ আমি বর্তমানেই বিশ্বাস করি, এই গোলে দল জয়ী হয়েছে। দশম ইউরোপিয়ান কাপ জেতার পর থেকে মাদ্রিদ ডার্বিতে আমাদের অভিজ্ঞতা খুব ভাল ছিল না। এই ম্যাচে জয় পাওয়াটা খুব জরুরী ছিল। আমি গোল করলেও এই কৃতিত্বের দাবিদার সবাই। যারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে বিশেষ করে আমার সতীর্থ ও আমার পরিবারের সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। রিয়াল কোচ আনচেলত্তি অবশ্য শিরোপা নিয়ে এখনই কিছু বলেননি। তিনি শুধু একটি স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। বলেন, এই মুহূর্তে আমরা আরেকটি ফাইনাল খেলার স্বপ্নের ঘোরে আছি। এখনও আমাদের সুযোগ আছে, সম্ভাবনা থাকলে আমরা বিপজ্জনক। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে আরেকবার ইউরোপের সেরা আসরে হতাশ হওয়ার পরও এ্যাটলেটিকো কোচ দিয়াগো সিমিওনে তার খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে বলেছেন আমি এই দলটি নিয়ে সত্যিই গর্বিত। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইন এই কোচ বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের মতো কঠিন আসরে আমরা আরেকবার দারুণভাবে খেলেছি। এটা এমন একটি দল যার প্রতি খেলোয়াড় অত্যন্ত পরিশ্রমী। একটা সময় আমরা ভাল খেলি, আবার কখনও বাজে খেলি। কিন্তু আমি খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত।
×