ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনটি শুধু উৎসবের নয়। বাঙালীর নিজস্ব সংস্কৃতিতে জেগে ওঠার সবচেয়ে বড় উপলক্ষ। অসাম্প্রদায়িক আয়োজনে সবাই, সকলে সমবেত হন। কিন্তু যারা বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না, বাঙালী সংস্কৃতির ধ্বংস কামনা করে তারা এই উৎসবের ঘোর বিরোধী। নানা ফতোয়া দিয়ে বেড়ান। তাতেও কোন কাজ না হওয়ায়, বোমা হামলা চালানো হয় রমনা বটমূলে। তাতেও কাজ হয়নি। এবার তাই অন্য কৌশল। গত পহেলা বৈশাখ টিএসসি এলাকায় নারীদের ওপর হামলে পড়ে একদল হায়েনা। পরিকল্পিত আক্রমণ করে। অনেকেই প্রথম বিশ্বাস করতে পারেননি। তবে সিসিটিভির ফুটেজ দেখার পর হতভম্ব হয়ে গেছেন। রাগে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। অপরাধীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে এখন উত্তাল টিএসসি এলাকা। প্রতিদিনই বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। নারীরা আসছেন। তাঁদের পাশে বন্ধুর মতো দাঁড়াচ্ছেন পুরুষ। বক্তৃতা হচ্ছে। গান কবিতা ও নাটকের ভাষায় জানানো হচ্ছে প্রতিবাদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক সংগঠনের ব্যানারে সমবেত হয়েছেন প্রতিবাদকারীরা। যে যার মতো করে কর্মসূচী পালন করছেন। প্রতিবাদকারীদের একজন ইমা বললেন, নারীদের ওপর সেদিন যে বর্বর আচরণ করা হয়েছে তার নিন্দার কোন ভাষা আমাদের জানা নেই। তবু এসেছি। প্রতিবাদ করছি। কারণ অপরাধীদের কাউকেই এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশকে অথর্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নির্লজ্জ বলেও মন্তব্য করেন আরেক প্রতিবাদকারী রুমান। তিনি বলেন, আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আগামী বৈশাখে আমরা সেটা প্রমাণ করব। এবার ক্রিকেট প্রসঙ্গ। বলা হয়ে থাকেÑ যে কথা সেই কাজ। কিন্তু তা হলো কই? সাকিব বলেছিলেন, বাংলাদেশ ফেবারিট। সাদামাটা ভঙ্গি করেই বলেছিলেন কথাটি। সংবাদ সম্মেলনে রাখা বক্তব্য কেউ আমলে নিয়েছেন। কেউ নেননি। অথচ কী কা-টাই না করল বাংলাদেশ! টাইগাররা যে কথা তারও বেশি কাজ করে দেখাল। তিন তিনটি ওয়ানডে ম্যাচে পাকিস্তানকে গো হারা হারাল। ঝড়ের তা-বে ল- ভ- হয়ে গেল নিয়াজীর বংশধর। সিরিজ জয়ের ট্রফি ঘরে তুলল বাংলাদেশ। বাংলাওয়াশ শুধু নয়, পাকিস্তান ক্রিকেটকে একরকম কফিনবন্দী করে দিল। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা নতুন এই ইতিহাসের সাক্ষী। বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম আনন্দে ভেসেছে। এখন সেই আনন্দ গোটা শহরজুড়ে। যে যার মতো করে উদ্যাপন করছেন। প্রায় সব অলিতে গলিতে পাকি বধ বিষয়ে আলোচনা। বৃহস্পতিবার টিএসসির একাধিক আড্ডায় যোগ দিয়ে বিষয় হিসেবে পাওয়া গেল ক্রিকেট। হাসিব নামের এক তরুণ বললেন, বাংলাদেশ বদলে গেছে। পাকিস্তানকে আগে ঘোষণা দিয়ে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা। এটা উন্নতির সুস্পষ্ট প্রমাণ। বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করার পাশাপাশি অনেকেই পাকিদের মু-ুপাত করছিলেন। পরিহাস করছিলেন ওদের ক্রিকেটারদের নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন সাকলায়েন মুশতাকের ওপর। মজা করে তিনি বললেন, পাকিস্তান কেন গো হারা হারল তার মূল কারণ আবিষ্কার করেছেন সাকলায়েন মুশতাক। পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল পিটিভিকে বৃহস্পতিবার সাবেক ক্রিকেটার বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নেগেটিভ। তারা নিজেদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে উইকেট বানায়। এমন আনাড়ি বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে টাইগারভক্ত কিছুক্ষণ হাসেন। বলেন, আসলেই তো। মিরপুরের উঠোন বাঁকা ছিল। তা না হলে নাচের মুদ্রায় এত ভুল করতে পারে পাকিস্তান! এবার ভোট উৎসবের কথা। আর মাত্র কয়েকদিন। এর পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। উত্তর ও দক্ষিণ অংশের জন্য পছন্দের দুই মেয়র নির্বাচন করবে রাজধানীবাসী। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রচার। শহরের প্রায় প্রতি প্রান্তে ভোটের হাওয়া। পোস্টারে সয়লাব হয়ে গেছে পাড়া মহল্লা। প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। একেবারে হতদরিদ্র মানুষটিকেও জড়িয়ে ধরছেন মেয়রপ্রার্থীরা। ভোট চাইছেন। দোয়া চাইছেন। বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালান ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকন। তাঁর সঙ্গে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক। এখানেই শেষ নয়, মাঠে নেমেছেন সাঈদের স্ত্রী ফারহানা সাঈদ। স্বামীর জন্য ভোট চাইছেন তিনি। বলেন, আমার স্বামী সৎ লোক। আপনারা একবার সুযোগ দিন। তিনি তার বাবার মতো ঢাকাবাসীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন। এই সিটি কর্পোরেশনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাস। নাশকতাসহ কয়েকটি মামলার আসামি হওয়ায় পলাতক তিনি। তার পক্ষে ভোট চাইছেন স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। বৃহস্পতিবার ইস্কাটন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচার চালান তিনি। হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে শুরু করেন। এরপর তিনি যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। দেখা করেন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন জানিয়ে উপাচার্যের ভোট ও দেয়া চান তিনি। এ সময় হেসে ফেলেন উপাচার্য। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় প্রচার চালান আফরোজা আব্বাস। একই দৃশ্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে। এ অংশের মেয়র হতে লড়ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত আনিসুল হক ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত তাবিথ আওয়াল। দুজনই কঠোর পরিশ্রম করছেন। বৃহস্পতিবার আনিসুল হক প্রচার চালিয়েছেন হাজী ক্যাম্প, কড়াইল বস্তি, বনানী বাজার, তেজগাঁও, উত্তরা ও মিরপুর এলাকায়। একইদিন তাবিথ প্রচার চালান, গুলশান লিঙ্ক রোড, মধ্য বাড্ডা, পূর্ব রামপুরাসহ বেশকিছু জায়গায়। এর বাইরে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড সব সময় সরগরম করে রেখেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিনয়ী ভদ্র ভোট প্রার্থীদের দেখে মন কিছু সময়ের জন্য হলেও ভাল হয়ে যায়!
×