ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখীর ছোবলে উত্তরাঞ্চলে ৯ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৩ এপ্রিল ২০১৫

কালবৈশাখীর ছোবলে উত্তরাঞ্চলে ৯ জনের প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘন ঘন কালবৈশাখীর ছোবলে দেশে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছর ঝড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে সত্তর ছাড়িয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতেও ঝড়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে ৯ জনের মৃত্যু ঘটে, আহত হয় ৬০ জনের বেশি। বগুড়ায় দেয়াল চাপায় দু’জন, কিশোরগঞ্জে গাছ চাপায় এক শিশু, দিনাজপুরে দু’জন, শেরপুর জেলায় গাছ চাপায় এক বৃদ্ধ শ্রমিক, হবিগঞ্জে ৩ জন এবং গাইবান্ধায় গাছ চাপায় একজনের মৃত্যু হয়। লণ্ড ভণ্ড হয়েছে দেড় হাজারের বেশি বসতবাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গৃহহীন হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত একর জমির উঠতি বোরো ফসল। মঙ্গলবার অনেক জেলায় ঝড়ের সঙ্গে নেমে আসে শিলাবৃষ্টি। আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা, আবহাওয়া অফিস ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, ঝড়ে আবারও প্রাণহানি ঘটেছে বগুড়ায়। গত প্রথম দফা ঝড়ে এ জেলায় ১৯ জনের মৃত্যু ঘটে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে বগুড়ার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তিরা হলেনÑ বেলাল হোসেন (৬৫) ও বাদল (৫০)। ঝড়ে বহু গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে। আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে উত্তর পশ্চিম দিক থেকে ৫৬ থেকে ৭২ কিলোমিটার বেগে এ ঝড় বয়ে যায়। এর স্থায়িত্ব ছিল ৩ মিনিট। ঝড়ে বগুড়া সদর, গাবতলি, সোনাতলা ও শিবগঞ্জ উপজেলার বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে হয়ে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। বাড়িঘরের টিনের চাল উড়ে যাওয়াসহ উঠতি বোরো ফসলেরও ক্ষতি হয়। ঝড়ের সময় বগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়নের ঘাসুয়াপাড়া এলাকায় দেয়াল চাপায় বেলাল হোসেন নামে এক বৃদ্ধ এবং সোনাতলা উপজেলার নিশ্চিন্তপুরে বাদল নামের এক ব্যক্তি মারা যায়। বেলাল হোসেন বাড়ির পাশের বাঙালী নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে। সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কৃষিবিভাগ জানিয়েছে, ঝড়ে অনেক এলাকায় উঠতি বোরো ধান জমিতে পড়ে যাওয়ায় বেশ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জের যশোদল ও বৌলাই ইউনিয়নে কালবৈশাখীর ঝড়ের কবলে পড়ে গাছ চাপায় বাবুল মিয়া নামে ১ম শ্রেণীর ছাত্রের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু ঘটে। সে সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের আমাটি শিবপুর গ্রামের দিনমজুর হারুন মিয়ার ছেলে। শিশুটির বাবা হারুন মিয়া, মা গোলেছা এবং দু’ ভাই হাফিজুল ও শফিকুল আহত হয়। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা পার্বতীপুর থেকে জানান, ঝড়ে শহরের বাবুপাড়া মহল্যায় নূরজাহান বেগম (৫০) নামে এক মহিলা মারা যান। একই মহল্লার মোজাফ্ফর (৪৫) নামে রেল কর্মচারীর ১০ বছরের মেয়ে ফারজানা গাছের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টার ঝড়ে শহরে ও ১০ ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৯ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৈদ্যুতিক তার ও পোল ল-ভ- হয়ে অনেক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকে। নিজস্ব সংবাদদাতা শেরপুর থেকে জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ চাপায় হায়দার আলী (৫৫) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের তারাকান্দি গ্রামের কাসেম মিয়ার বাড়িতে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত হায়দার শ্রীবরদী উপজেলার হেরুয়া চরহাবর গ্রামের মৃত আলীমদ্দিনের ছেলে। জেলায় মঙ্গলবার রাতের কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে শেরপুর সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কাঁচা ঘর-বাড়ি, গাছপালা ও বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বুধবার দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুত ছিল না। স্টাফ রিপোর্টার ময়মনসিংহ থেকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে মঙ্গলবার রাতে জেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ল-ভ- হয়ে গেছে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পাড়াইল গ্রামে ঝড়ের তা-বে উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা, বিধ্বস্ত হয়ে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উঠতি বোরো ধান। স্টাফ রিপোর্টার রংপুর থেকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে রংপুরের তিন উপজেলার তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ল-ভ- হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে ফসলের। উপড়ে পড়েছে শত শত গাছ। ভেঙ্গে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। এতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুতবিহীন ছিল বেশকিছু এলাকা। নিজস্ব সংবাদদাতা ঝিনাইদহ থেকে জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দ্বিতীয় দফা কালবৈশাখী ঝড়ে ৩টি গ্রামের প্রায় ২০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাতে এ ঝড় আঘাত হানে। গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে, নবগ্রাম, বড় মৌকুড়ি ও তেঘোরি। এর আগে গত ৬ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়ে এ উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক বাড়িঘর ল-ভ- হয়ে যায়। সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান মামুন জানান, ৬ এপ্রিল ভোর রাতের ঝড়ে তার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই মঙ্গলবার মধ্যরাতে ফের ঝড়ে ৩টি গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কারও কারও মাথার ওপর ছাউনিটুকুও নেই। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, ঝড়ে গোটা জেলা ল-ভ- হয়ে গেছে। উপড়ে পড়েছে বিভিন্ন রকমের হাজার হাজার গাছ। বিচ্ছিন্ন রয়েছে গোটা জেলার বিদ্যুত সংযোগ। ঝড়ে জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাতে নওগাঁ অঞ্চলে তৃতীয়বারের মতো আবারও কালবৈশাখী হানা দেয়। জেলার বিপুলসংখ্যক গাছপালা ও ঘরের টিনের চালা উড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাঠে উঠতি বোরো ধানের গাছ ক্ষেতে শুয়ে পড়েছে। অধিকাংশ এলাকায় ঝরে পড়েছে গাছের আমের গুটি। নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে কলাপাড়ার গোটা উপকূলজুড়ে বইছে পূর্ব-দক্ষিণ কোণের মাঝারি বাতাস। কখনও তা দমকা হাওয়ায় পরিণত হচ্ছে। আকাশ মেঘলা রয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা জয়পুরহাট থেকে জানান, বুধবার গভীর রাতে জয়পুরহাটে প্রচ- ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গাছ উপড়ে পড়ে। টিনের চালা উড়ে যায়। জয়পুরহাটে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বোরো ধানসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, মঙ্গলবার রাতে দিনাজপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে ল-ভ- হয়েছে ৫টি উপজেলার অসংখ্য বাড়িঘর। উপড়ে পড়েছে অগণিত গাছপালা। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ধান, ভুট্টা ও আম-লিচুর। শিশু ও নারী নিহত তিন এবং ৩ জন আহত হয়েছেন। ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুত ছিল না। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টায় প্রচ- বেগে দিনাজপুর সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যায় কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়ের সঙ্গে প্রবল বর্ষণ হয়। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ের রাতে চিরিরবন্দর উপজেলার জয়পুর গ্রামের মতিউর রহমানের আড়াই বছরের শিশু পুত্র আল সাইদী দেয়াল চাপায় ঘটনাস্থলে মারা যায়। পার্বতীপুর উপজেলার সাহেদপাড়ার নাসিমের স্ত্রী নূরজাহান (৩২) ঝড়ের সময় আতঙ্কে মারা যান। একই উপজেলার কুলিপট্টির মোজাফ্ফরের মেয়ে ফারজানা (১০) ও আরিফ (২০) এবং রামরাইপুর ফরিদপাড়ার আব্দুল্লাহ (২২) গাছ চাপায় আহত হন। আহত ৩ জনকে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা হবিগঞ্জ থেকে জানান, কালবৈশাখী ঝড়ের আড়াই ঘণ্টার তা-বে হবিগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগুলোর বাড়িঘর, ফসলি জমি ও বিদ্যুত-টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা ল-ভ- হয়ে গেছে। নিহত হয়েছেন মা-ছেলেসহ ৩ জন। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের স্বীকার হয়ে সহায়সম্বল হারা বহু মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বয়ে যাওয়া ওই কালবৈশাখী ঝড়ে হবিগঞ্জের উপজেলা নবীগঞ্জের পল্লী তিমিরপুরে নিজ বাড়ির ওপর পড়ে যাওয়া গাছ চাপায় রমজান আলী ওরফে লাল মিয়া (৪১) এবং একই সময় বানিয়াচঙ্গ উপজেলাধীন বাদাউড়ি গ্রামে নিজ বাড়ির একইভাবে গাছ চাপায় ফজল মিয়ার ৮ মাসের অন্তঃস্বত্বা স্ত্রী নূরজাহান বেগম (২৩) ও তার ছেলে রবিন মিয়া (৪) এর মৃত্যু ঘটে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ৩১ জন।
×