ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান তৃতীয়, শেষ ওয়ানডে আজ

বাংলাওয়াশের সঙ্গে ইতিহাসের হাতছানি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২২ এপ্রিল ২০১৫

বাংলাওয়াশের সঙ্গে ইতিহাসের হাতছানি

মিথুন আশরাফ ॥ ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং অনুশীলন শুরুর আগে ১০ মিনিট ফুটবল খেলে গা গরম করে নিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। বেলা সাড়ে তিনটায় দুই ভাগ হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করলেন। একটি গোলই হলো। গোলরক্ষক তামিম ইকবালকে ফাঁকি দিয়ে গোলটি করলেন সাকিব আল হাসান। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে কি সাকিব এমনই কিছু একটা করবেন? সবার চাহিদা একই, পাকিস্তানকে তৃতীয় ওয়ানডেতেও হারাক বাংলাদেশ। বাংলাওয়াশ করুক। সঙ্গে এখন পর্যন্ত যে টানা দুই সিরিজে টেস্ট খেলুড়ে দলকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাওয়াশ করার ইতিহাসটি হয়নি, তাও গড়ুক বাংলাদেশ। সেই বাংলাওয়াশের সঙ্গে ইতিহাস গড়া আবার হোক তামিম, সাকিব দুইজনেরই অবদানে। সঙ্গে মুশফিকের ভূমিকাও যেন থাকে। তবে সাকিবের বিশেষ নৈপুণ্য কিন্তু এখনও মেলেনি। তৃতীয় ওয়ানডেতে তাই সাকিবের কাছ থেকেই বিশেষ কিছুর চাওয়া থাকছে। টানা দুই ওয়ানডে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে নিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৯ রানে ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ। সহজভাবে জয় তুলে নিয়েছে। দুই ওয়ানডেতে সাকিব খুব বেশি কিছু করে দেখাতে পারেননি। আসলে করার তেমন সুযোগই পাননি। শুরুতেই ব্যাট হাতে নেমে দুই ম্যাচেই তামিম ইকবাল শতক করেছেন। তাঁর সঙ্গে মুশফিকুর রহীমও ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে চলেছেন। তাতে সাকিব ব্যাটিং করার সুযোগই পাচ্ছেন না! প্রথম ওয়ানডেতে নেমে ৩১ রান করেছেন। আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ রান করার সঙ্গে সাকিবের ব্যাট থেকেই ম্যাচ উইনিং রানটি আসে। ম্যাচ উইনিং শট যখন খেলেন, তখন তামিমই ছিলেন সাকিবের সঙ্গী। ব্যাটিং করার সুযোগ না পেলেও বল করার সুযোগ ঠিকই পাচ্ছেন সাকিব। কিন্তু সেই রকম ঝলক দেখাতে পারছেন না। প্রথম ওয়ানডেতে ৯.২ ওভার বল করে ৪৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১০ ওভার বল করে ৫১ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। কিন্তু সাকিবের কাছ থেকে এর চেয়েও বেশি কিছু আশা করা হয়। যা দিতে পারছেন না এ অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে রুবেল ও মাহমুদুল্লাহ এতটাই আলো ঝলমলে ছিলেন যে সাকিবকে চেনাই যায়নি। এবার তামিম ও মুশফিক সব আলো নিজেদের দিকে নিয়ে ফেলেছেন। যে আলোয় অন্ধকারেই পড়ে গেছেন যেন সাকিব। সবারই জানা, এ অলরাউন্ডার যথাসময়ে দলের হাল ঠিকই ধরবেন। প্রয়োজনের সময় সাকিব ঠিকই নিজেকে মেলে ধরবেন। আজ যেন সেই প্রয়োজনের দিন! তামিম ইকবাল, মুশফিক টানা দুই ম্যাচে ভাল খেলেছেন। দুই ব্যাটসম্যান আজও ভাল খেলুক, সেটিই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু এত ভাল খেলা কী সম্ভব? তা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাকিবকেই হাল ধরতে হবে। যদি তামিম, মুশফিকের পর সাকিব হাল ধরেন, আর পাকিস্তান আবারও হেরে যায়; তাহলে পাকিস্তানকে বাংলাওয়াশ করার স্বপ্নই পূরণ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নতুন ইতিহাসও রচনা হবে। যে ইতিহাস এর আগে কখনই বাংলাদেশ গড়তে পারেনি। এর আগে টানা দুই সিরিজে টেস্ট খেলুড়ে কোন দলকে বাংলাওয়াশ করার রেকর্ড গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। তবে টানা তিন সিরিজে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার রেকর্ড আছে। সেটি ২০০৬ সালে। আগস্টে কেনিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারানোর পর নবেম্বরে জিম্বাবুইয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। এরপর ডিসেম্বরে স্কটল্যান্ডকেও ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে। কিন্তু তিন দলের একটিও তখন টেস্ট খেলত না। কেনিয়া, স্কটল্যান্ড তো কোনদিনই টেস্ট খেলেনি। জিম্বাবুইয়ে ২০০৫ সালে টেস্ট খেলা থেকে নির্বাসনে যায়। এবার বাংলাদেশ সেই কৃতিত্ব গড়বে। যদি আজকের ম্যাচটি জিতে যায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়েকে গত বছরের শেষদিকে ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। মাঝখানে বিশ্বকাপ খেললেও দ্বিপক্ষীয় কোন সিরিজ খেলেনি বাংলাদেশ। এবার খেলছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রথম দুটি ওয়ানডে জিতেও গেছে। আজ যদি জিতে যায় বাংলাদেশ, তাহলে পাকিস্তান বাংলাওয়াশ হবে। সঙ্গে টানা দুই সিরিজে টেস্ট খেলুড়ে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরবও অর্জন করবে বাংলাদেশ। এমন অর্জন এখন পর্যন্ত ভারতের ইতিহাসেও যুক্ত হয়নি। ১৯৭৪ সাল থেকে ভারত ওয়ানডে সিরিজ খেলে। এখন পর্যন্ত কোন টানা দুই সিরিজে টেস্ট খেলুড়ে দলকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগ ধরা দিয়েছে। সেই সুযোগটি ভালভাবেই কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররাও। মাশরাফি যেমন বলেছেন, ‘প্রথম ওয়ানডে জেতার পর দ্বিতীয় ওয়ানডেও জিততে চেয়েছি। জিতেছি। সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হয়েছে। একটি ওয়ানডেই বাকি। সেই ওয়ানডেতেও জিততে চাই।’ প্রথম ওয়ানডেতে নেতৃত্বে ছিলেন সাকিব। সিরিজ জয়ের শুরুটা সাকিবের হাত ধরেই হয়। এরপর মাশরাফি এসে সিরিজ জয়ই নিশ্চিত করে ফেলেন। আজও মাশরাফিই থাকছেন নেতৃত্বে এবং জিতলে দ্বিতীয়বারের মতো তার মুকুটেও টেস্ট খেলুড়ে দলকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব যুক্ত হবে। সেটিও পরপর দুই সিরিজেই হবে। বাংলাদেশ দল হোয়াইটওয়াশ করা মানে, মাশরাফির মুকুটেও সেই রেকর্ড যুক্ত হবে। আর টানা দুই সিরিজেই টেস্ট খেলুড়ে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার ইতিহাস গড়া মানে মাশরাফিও সেই ইতিহাস গড়বেন। একসঙ্গে অনেক প্রাপ্তি মিলবে। শুধু আজ জিতলেই হয়ে যায়। বাংলাওয়াশের সঙ্গে তাই ইতিহাস গড়ার হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে।
×