ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময়ে ইকবাল সোবহান

মুক্তিযুদ্ধ ও জঙ্গীবাদ প্রশ্নে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ এপ্রিল ২০১৫

মুক্তিযুদ্ধ ও জঙ্গীবাদ প্রশ্নে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধ, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রশ্নে নিরপেক্ষ থাকার সুযোগ নেই। স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে নিরপেক্ষ না থেকে বরং সুদৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। এ সময় বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সিটি নির্বাচনে এমন কাউকে মেয়র নির্বাচিত করা যায় না, যাতে নগর ভবন হেফাজত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের দখলে চলে যায়। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বিএনপি তাদের ভাষায় ‘অবৈধ বর্তমান সরকার’ এর অধীনে আন্দোলনের অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এতে বোঝা যায়, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। কিন্তু এ শুভবুদ্ধি যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে হতো তাহলে এত মানুষ মরত না। সিটি নির্বাচনে বড় একটি দলের শীর্ষ নেত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে নেমেছেন। তিনি দোকানদার ও জনগণের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রায় তিনমাসের সন্ত্রাস ও নাশকতায় ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেননি। যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের পরিবারের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেননি। ইকবাল সোবহান চৌধুরী আরও বলেন, বিএনপি বলছে, তারা আন্দোলনের কৌশল হিসেবে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এ আন্দোলনের কৌশলটি যদি গত বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও করতেন তাহলে দেশে এত ক্ষতি হতো না। বিএনপির সেই আন্দোলন সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থী পড়েছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে। তারা ঠিকভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাংবাদিকদের অবস্থান বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিক হিসেবে আমাদের বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। তবে নাগরিক হিসেবে যখন চিন্তা করব তখন নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। মুক্তিযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতা ও দেশকে উন্নয়নের পথে নেয়ার পক্ষে থাকতে হবে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রশ্নে নিরপেক্ষ না থেকে সাংবাদিকদের বরং দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বর্তমান সরকারের আমলে সাংবাদিকদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পেশায় যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি সে স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে। স্বাধীনতার একক ব্যবহার যেন না হয় সেদিকেও সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা উচিত। বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ঢাকায় সহস্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের দুই মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি। চট্টগ্রামে তিনি নাগরিক কমিটির মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, এমন কাউকে মেয়র নির্বাচিত করা উচিত হবে না যাতে নগর ভবন হেফাজত ইসলাম বা স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গীবাদীদের দখলে চলে যায়। যারা তেঁতুল তত্ত্ব দেয় তাদের হাতে আমরা ঢাকা ও চট্টগ্রামের মেয়র পদ তুলে দিতে পারি না। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হলো কিন্তু বিএনপি এ প্রসঙ্গে কিছুই বলল না। এতে বোঝা যায়, তারা স্বাধীনতাবিরোধীদেরই পক্ষে। চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির প্রসঙ্গে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, তিনি একজন ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা। নগর রক্ষা ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন। কারও কারও দৃষ্টিতে তাঁর দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু তারপরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাঁর পক্ষেই। কারণ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরকে হেফাজত ও আগুন সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা করতে হবে। গত সোমবার ঢাকার কাওরান বাজারে বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা ও ভাংচুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী পুলিশকে না জানিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। যেহেতু তিনি কাউকে অবহিত না করে গণসংযোগে গিয়েছিলেন সেহেতু তাঁর এ কর্মসূচী সম্পর্কে শুধু বিএনপির কর্মী-সমর্থকদেরই জানার কথা। সেখানে হামলার শিকার হওয়ার পর আগে-পিছে পুলিশী প্রহরায় খালেদা জিয়া শাজাহানপুর এলাকায় গেছেন। সেখানে কিন্তু কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ফান্ডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের জন্য এতকিছু করছেন, এখন তাঁর জন্যও আমাদের কিছু করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। মনজুরুল আহসান বুলবুল আসন্ন সিটি নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীর সমর্থনে জনমত সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি এম নাসিরুল হক, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান ও আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি এজাজ ইউসুফী এবং আবু তাহের মোহাম্মদ। মতবিনিময় সভা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী।
×