ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব সংকটে রাজশাহী বিএনপি

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২২ এপ্রিল ২০১৫

অস্তিত্ব সংকটে রাজশাহী বিএনপি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ চরম সাংগঠনিক অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি। তিন মাসের বেশি সময় ধরে নগর ও জেলার শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে থাকায় এখন দলীয় কার্যালয়ের তালা খোলারও লোকজন নেই বিএনপিতে। ফলে টানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে দলীয় কার্যালয়। এতে কর্মীরাও হতাশ হয়ে পড়েছে। দলের কথা ভুলে এখন নিজেদের সংসার সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক কর্মী দল ছেড়েছে অন্য দলে ভেড়ার সুযোগ খুঁজছে। পলাতক শীর্ষ নেতাদের দীর্ঘ আত্মগোপনে থাকা এবং কর্মীদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়ায় তৃণমূলের কর্মীরা এখন চরম হতাশার সাগরে ডুবছে। জানা গেছে, গত জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী নগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন এখনও আত্মগোপনে রয়েছে। এছাড়া জেলা সভাপতি নাদিম মোস্তফা জেলে আর সাধারণ সম্পাদক কামরুল মনিরও আত্মগোপনে রয়েছে। নেতারা আত্মগোপনে থাকায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে দলীয় কার্যালয়ে ঝুলছে তালা। ফলে সাংগঠনিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে বিএনপি। এ প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের খোঁজ নেই রাজশাহীকে নিয়ে। তাই দিশেহারা কর্মীরা দলের কার্যক্রম ছেড়ে ইতোমধ্যেই অনেকে পেটের ধান্ধায় বিভিন্ন কাজে নেমে পড়েছেন। এদিকে শীর্ষ নেতাদের আত্মোগোপনে থাকায় রাজশাহী মহানগরী বিএনপির কার্যক্রম মাঝে মাঝে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মধ্যে সীমাবন্ধ হয়ে পড়েছে। মাঠে দলের কোনো কার্যক্রম নেই। মাঝে মাঝে দলের পক্ষ থেকে দায়সারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে উপস্থিতির জানান দেয়া হচ্ছে মাত্র। দলীয় কর্মীরা জানান, ৫ জানুয়ারি সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু সর্বশেষ ১০ জানুয়ারি নগরীর সাহেব বাজার ভুবনমোহন পার্কে বিএনপি’র প্রতিবাদ মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তব্য দেন। ওই বক্তব্যে ঢাকাকে অচল করে দেয়ার জন্য অবরোধে পণ্য পরিবহন যে কোনভাবে আটকে দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। উস্কানিমূলক এ বক্তব্যে দেয়ার অভিযোগে ১২ জানুয়ারি গভীর রাতে মিনুর বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেই থেকে আত্মগোপনে আছে মিনু। তারপর রাজশাহী বিএনপির হাল ধরেন রাসিক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলন। কিন্তু তার কয়েকদিন পরে বাস পোড়ানোসহ নাশকতার মামলায় জড়িয়ে তারা দুই জনও আত্মোগোপনে চলে যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মহানগর যুবদলের এক নেতা জানান, স্থানীয় নেতারা গা ঢাকা দিয়ে আছে। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। দলের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এতে করে অনেকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকার বিএনপির কর্মী আকবর শেখ জানান, যেখানে জেল খাটার ভয়ে নেতারাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সেখানে আন্দোলনে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনে লাভ কি। তার চেয়ে নিজের পেটের চিন্তা করাই অনেক ভাল। আকবর শেখের মতো অনেক নেতাকর্মীরএখন দল ছেড়ে পেটের চিন্তায় ছুটছে। বিএনপি কর্মী জমশেদ আলী জানান, আন্দোলন নিয়ে শীর্ষ নেতাদেরই মাথাব্যথা নেই। সেখানে তাদের নাক গলিয়ে লাভ কি। সে কারণে দল ছেড়ে তিনি নিজের চিন্তা করা শুরু করেছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাদের অনেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মিনু, বুলবুল আর মিলন মিলে নগর বিএনপি আর নাদিম কামরুলে জেলা বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। তাদের মেয়েলি স্বভাবের কারণে কর্মীরা আর তাদের প্রতি বিশ্বাস করতে পারছে না। দেশের বিভিন্ন জেলা ও নগরে দলীয় কার্যক্রম শুরু হলেও রাজশাহীর শীর্ষ নেতাদের আত্মগোপনে থাকার কারণে ভবিষ্যতে রাজশাহী বিএনপি ফের মাথাচাড়া দিতে পারবে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।
×