ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বকী হত্যা তদন্তে নতুন মোড়, সামনে আসছে নতুন প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২১ এপ্রিল ২০১৫

ত্বকী হত্যা তদন্তে নতুন মোড়, সামনে আসছে নতুন প্রশ্ন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত স্কুলছাত্র মেধাবী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে প্রকৃতপক্ষে খুন করা হয়েছে কোথায়? আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে ইউসুফ হোসেন লিটন ও সুলতান শওকত ভ্রমর নামে দুই আসামি। ইউসুফ হোসেন লিটন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে সালেহ রহমান সীমান্ত নামের এক আসামির জামতলা ধোপাপট্টির বাড়িতে। অপরদিকে সুলতান শওকত ভ্রমর তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমিরী ওসমানের অফিসে। শুধু হত্যাকা-ের স্থানই নয়, হত্যাকা-ের বর্ণনার সঙ্গেও কেন মিল নেই দুই আসামির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে। অগণিত প্রশ্নের উত্তর মিলছে না তদন্তে। এ কারণে গত দুই বছরেও খুনের জট খুলতে পারছেন না তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। ত্বকী হত্যার মামলার নথি পর্যালোচনায় জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেল চারটার দিকে নিখোঁজ হয় তানভীর মুহম্মদ ত্বকী। ত্বকীর বাবা ও আত্মীয়স্বজনরা চারদিক খোঁজাখুঁজি করেন। তাকে না পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বী। দুদিন পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায় কুমুদিনী জোড়া খালে। বাবা রাফিউর রাব্বী বাদী হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে একটি হত্যা মামলা করেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে গলা টিপে। প্রথমে এই মামলাটি তদন্ত করে পুলিশ। ত্বকীর বাবা হত্যা মামলাটি তদন্তের ভার র‌্যাবের কাছে ন্যস্ত করার জন্য আবেদন করেন হাইকোর্টে। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার দেয়া হয় র‌্যাবকে। র‌্যাব তদন্ত হাতে নিয়ে গ্রেফতার করে চারজনকে। গ্রেফতারকৃত চারজন হচ্ছে- ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ভ্রমর, তায়েব উদ্দীন জ্যাকি ও সালেহ রহমান সীমান্ত নামে চারজনকে গ্রেফতার করে। এর আগে পুলিশ গ্রেফতার করে রিফাত বিন ওসমান নামে আরও একজনকে। গ্রেফতারকৃত এই পাঁচজনের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও শওকত হোসেন ভ্রমর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট র‌্যাবের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসে। চার্জশীট দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এরই মধ্যে তদন্তে ধরা পড়ে দুই আসামির দুই ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, যার সঙ্গে খুনের স্থানটির কোন মিল নেই, দুইজনের জবানবন্দীতে দুইটি স্থান উল্লেখ করেছে, হত্যাকা-ের বর্ণনার সাদৃশ্য নেই, তথ্যের গরমিল। এই ধরনের তদন্তের মাধ্যমে চার্জশীট দেয়া হলে আদালতে গিয়ে মামলাটি তো টিকবেই না, এমনকি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে রীতিমতো ভৎসনা শুনাসহ শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। তাই তদন্ত শেষ হয়েও শেষ হলো না, আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করতে হচ্ছে। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ইউসুফ হোসেন লিটন তার ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দীতে বলেছে, সালেহ রহমান সীমান্ত নামের এক যুবকের জামতলা ধোপাপট্টির বাড়িতে ত্বকীকে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে শীতলক্ষ্যার শাখা খালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বস্তা থেকে লাশ বের করে ফেলে দেয়া হয়। অপরদিকে শওকত হোসেন ভ্রমর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ থারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমিরী ওসমানের অফিসে নিয়ে নির্যাতনের পর ত্বকীকে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়া হয়। ইউসুফ হোসেন লিটন ও শওকত হোসেন ভ্রমর দুজনই বলেছে, হত্যাকা-ের পর লাশ বস্তাবন্দী করে ফেলা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, লাশ উদ্ধারের সময়ে কোন বস্তা পাওয়া যায়নি। তাহলে বস্তাটি গেল কোথায়? বস্তাটি হত্যাকা-ের একটি আলামত। এই আলামতের বিষয়ে বিচারের সময়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা হতে পারে। ত্বকীর লাশ উদ্ধারের সময়ে বস্তা তো পাওয়া গেলই না, পাওয়া গেল তার পায়ে স্যান্ডেল। অন্যত্র খুন হলে তার পায়ে স্যান্ডেল থাকে কিভাবে? অন্যত্র খুন হলে স্যান্ডেল পায়ে দেয়া লাশ নিয়ে আসার কথা নয়? আর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার হলে বস্তাটি গেল কোথায়? ত্বকীর লাশ যখন উদ্ধার হয় তখন তার পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট। কিন্তু র‌্যাব যখন অভিযান চালায় তখন আজমিরী ওসমানের অফিস থেকে উদ্ধার করা হয় রক্তমাখা প্যান্ট। ত্বকীর পরনে জিন্সের প্যান্ট ছিল অথচ আজমিরী ওসমানের অফিস থেকে জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার হলো? লাশের সঙ্গে জিন্সের প্যান্ট থাকলে অফিস থেকে উদ্ধার করা জিন্সের প্যান্টটি কার? দুই আসামি লিটন ও ভ্রমরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ব্যাপক গরমিল ধরা পড়েছে তদন্তে। আমার ও ছেলের কোন শত্রু নেই ॥ বাবা রাফিউর রহমান রাব্বি ২০১৩ সালের ৬ মার্চ সন্ধ্যায় তার ছেলে ত্বকী নিখোঁজ হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ থানায় দায়ের করা জেনারেল ডায়েরিতে বলেছেন, ‘আমার ও তার ছেলের কোন শত্রু নেই’। শুধু তাই নয়, ওইদিনই শহীদ মিনারে ত্বকীর লাশের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকেই এই হত্যাকা-ের জন্য যুদ্ধাপরাধী জামায়াত শিবিরকে দায়ী করেন বক্তারা। একদিন পর ৮ মার্চ শুক্রবার ২০১৩ শহরের চারারগোপ এলাকায় শীতলক্ষ্যার শাখা খালে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায়। গত ৮ মার্চ ২০১৩ সালের রাতে সদর থানায় হত্যাকা-ের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন রাফিউর রহমান রাব্বি। রাব্বি বাদী হয়ে থানায় যে মামলা করেন তাকে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী সরাসরি ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘২০১১ সালে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে রাফিউর রাব্বি আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব থাকার কারণে ক্ষোভ মেটাতে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে’। তারপর থেকেই ত্বকী হত্যাকা-ের রাজনীতিকরণ হতে শুরু করে। তারপর থেকেই এই হত্যার জন্য সিটি মেয়র আইভী, ত্বকীর পিতা রাফিউর রাব্বিসহ দেশের প্রথম সারির বাম রাজনীতিকগণ, এমনকি বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারকে সরাসরি দায়ী করতে থাকেন। হত্যাকা-ের ঘটনাটি রাজনীতিকরণের ফলে মামলাটির তদন্তের স্বাভাবিক গতি পরিবর্তন হয়ে তার ব্যাপক রাজনীতির প্রভাব পড়তে শুরু করে, যা এখনও অব্যাহত আছে। রাজনীতিকরণের ধারাবাহিকতায় কিলিং মিশন ॥ ত্বকী হত্যাকা-ের অন্তত ১০ দিন পর গত ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি অবগতিকরণ পত্র দেন ত্বকীর পিতা ও মামলার বাদী রাফিউর রাব্বি। অবগিতপত্রে এই হত্যাকা-ে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ছেলেসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগের ৭ জনের নাম দিয়ে দাবি করেছিলেন তারা কিলিং মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল। ওই বছরের ২৪ মার্চ শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে পাসপোর্ট দেখিয়ে প্রমাণ করেন হত্যাকা-ের সময় তিনি ও তার ছেলে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। অপরদিকে গত ২০১৩ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় ঘটে যায় আরেক ঘটনা। দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হতে থাকে ত্বকীর আপন চাচাত ভাই অর্নব ওয়াহিদকে গুলি করা হয়েছে এবং রাব্বি সংবাদ মাধ্যমে দাবি করে, যারা ত্বকীকে হত্যা করেছে, তারাই অর্নবকে গুলি করেছে। এই ঘটনায় অর্নবের বাবা ওয়াহিদ রেজা সদর থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু গত বছরের ১৯ মে ২শ’ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা তত্ত্বাবধায়ক প্রেরিত ওই মামলার মেডিক্যাল রিপোর্টে (স্মারক নং-৫৭৫৫) বলা হয়েছে অর্নবের আঘাত ছিল অত্যন্ত সামান্য এবং গুলির কোন আলামত চিকিৎসকরা পাননি। ওই রিপোর্টের বরাত দিয়ে পুরো ঘটনাকে মিথ্যা ঘটনা উল্লেখ করে ইতোমধ্যে আদালতে ফাইনাল রিপোর্টও দিয়েছে। ভ্রমর সাড়ে তিন মাস কোথায় ছিল? গত বছরের ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন নামের একজন আসামি সর্বপ্রথম এই মামলায় আদালতে জবানবন্দী দেয়। লিটন নিহত ত্বকী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করে সালেহ রহমান সীমান্ত নামে এক যুবকের (জামতলা ধোপাপট্টির) বাড়িতে সংঘটিত হত্যাকা-ের স্থান কাল পাত্র সকল কিছুর বর্ণনা করে। সেখানে কোথাও ওসমান পরিবারের কোন সদস্যের নাম ছিল না। কিন্তু র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর সুলতান শওকত ভ্রমর নামের অপর এক আসামি ৩ মাস ১৪ দিন নিখোঁজ থেকে গত বছরের ১২ নবেম্বর আদালতে জবানবন্দী দিয়ে জানায়, ত্বকীকে প্রয়াত নাসিম ওসমানের ব্যবসায়ী ছেলে আজমেরী ওসমানের অফিসে হত্যা করে লাশ বস্তাবন্দী অবস্থায় নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছিল। সেখানে আগের দেয়া জবানবন্দীতে হত্যাকা-ের স্থান অর্থাৎ সীমান্তের নামই ছিল না। তারপর আবার ভ্রমর গত বছরেরই ২৮ নবেম্বর নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে স্বহস্তে লিখিত আবেদন করে তার জাবনবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন জানায়। ওই আবেদনে ভ্রমর দাবি করেন, জবানবন্দীটি তার স্বেচ্ছায় দেয়া জবানবন্দী ছিল না। গত বছরের ১৫ জুলাই কেরানীগঞ্জ থেকে সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটে র‌্যাব পরিচয়ে ভ্রমরকে অজানা ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর প্রায় ৪ মাস সেখানে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় লোহার প্লাস দিয়ে আঙুলের নখ তুলে ফেলার চেষ্টা করা হয় এবং নখের ভিতর দিয়ে মোটা সুঁচ ফোটানো হয়, তাকে পা ওপরে বেঁধে মাথা নিচের দিকে দিয়ে পানিতে ডুবিয়ে শ্বাস রোধ করে নির্যাতন চালানো হয়। এসব নির্যাতনের চিহ্ন এখনও তার শরীরে আছে। এরপর প্রাণ ভয়ে ভ্রমর জবানবন্দী দিতে রাজি হলে দুদিন ধরে তাকে ক্যাম্পে রেখে জবানবন্দী শেখানো হয়। সাত খুনের সেই র‌্যাবের আসামিরা ॥ নারায়ণগঞ্জের সাত খুন হওয়ার আগে, ত্বকী হত্যাকা-ের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের অভিযুক্ত মেজর (অব) আরিফ, লে: কমা. (অব) এম এম রানা এবং সাবেক সিও জাহাঙ্গীর, এএসপি সাদিয়া খাতুন, মামলার আইও এএসপি রবিউল ইসলামসহ র‌্যাবের কয়েকজন বিতর্কিত অফিসার অভিযান চালায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমিরী ওসমানের অফিসে। গত বছরের ৭ আগস্ট বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তারা প্রায় অর্ধশত র‌্যাব সদস্য বিপুলসংখ্যক মিডিয়া কর্মী নিয়ে কলেজ রোডে অবস্থিত শামীম ওসমানের ভাতিজার মালিকানাধীন উইনার ফ্যাশন কার্যালয়ে তদন্তের নামে ব্যাপক অভিযান চালান। কিন্তু কোন মামলার তদন্তে গেলে ব্যাপকভাবে গণমাধ্যমকে সংবাদ দিয়ে তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার নজির নেই। সেখান থেকে তারা একটি পুরানো জিন্স প্যান্ট আবিষ্কার করেন এবং কোন ফরেনসিক পরীক্ষা ছাড়াই সেটিকে রক্তমাখা প্যান্ট বলে মিডিয়ার সামনে প্রচার করেন। এমনভাবে মিডিয়ায় প্রচার করে পারসেপশন তৈরি করা হয় যাতে সাধারণ মানুষ ধারণা করে সেখান থেকে ত্বকীর রক্তমাখা প্যান্ট পাওয়া গেছে। অথচ ত্বকীর লাশের সঙ্গে তার প্যান্ট ছিল। অভিযোগ ওঠেছে, ভ্রমরের দেয়া জবানবন্দীর সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতার মিল ঘটানোর জন্য আজমেরী ওসমানের অফিসে র‌্যাবের সেই অভিযান চালানো হয়েছিল। কেননা, ভ্রমর তার দেয়া জবানবন্দীতে বলেছিল সে অফিসের সিসি ক্যামেরায় কালাম শিকদারসহ একজনকে বের হতে এবং ত্বকীকে নিয়ে ফিরে আসতে দেখেছে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে সেই সিসি ক্যামেরায় তা রেকর্ড হয়ে থাকার কথা। কিন্তু সেই রেকর্ড আদৌ প্রকাশ বা এ ব্যাপারে কোন সময় কোন বক্তব্য দেয়নি র‌্যাব। সেদিনের অভিযানের সময়ে রহস্যজনকভাব আজমেরীর অফিসের সিসি ক্যামেরা গায়েব হয়ে যায়। র‌্যাবের সেই অফিসারদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ ॥ ত্বকী নিখোঁজ হওয়ার দিন (২০১৩ সালের ৬ মার্চ) বিকেলে শহরের চারারগোপ এলাকায় একটি মেয়ে ও কয়েকজন ছেলের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল বলে দেখতে পান একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ২ কর্মচারী। এ সময় তাদের মধ্যে বাগ্বিত-া চলছিল। ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা ২ দিন পর ত্বকীর ব্যানার দেখে ত্বকীকে শনাক্ত করেন এবং বিষয়টি তৎকালীন র‌্যাবের কোম্পানী কমান্ডার লে. কমান্ডার এম এম রানা ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি রবিউল ইসলাম, এএসপি সাদিয়ার কাছে জানাতে আদমজী ক্যাম্পে যান। সেখানে তাদের উল্টো এমনভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় যে, তারা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনায় এমএম রানা গ্রেফতারের পর ওই প্রত্যক্ষদর্শীরা ফিরে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শীর ফিরে আসার খবরসহ তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য সামনে চলে আসায় চাঞ্চল্যকর ত্বকী হত্যাকা-ের তদন্তে নাটকীয় মোড় নিতে পারে বলে জানা গেছে।
×