ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পশুপাখি রক্ষা করতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ২১ এপ্রিল ২০১৫

পশুপাখি রক্ষা করতে হবে

জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার সবুজ-শ্যামল দেশ বাংলাদেশ। প্রকৃতির ও মানবসৃষ্ট কারণে দেশে পশুপাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বনাঞ্চল ধ্বংস, পাহাড়কাটা, জলাশয় ভরাট, অত্যধিক নগরায়নের ধারা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হচ্ছে বনগুলোর। সুন্দরবন ও লাউয়াছড়া, কাপ্তাই, বান্দরবান, মধুপুরসহ অনেক বনের গাছপালা, পশুপাখি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একসময় গাছে গাছে দেখা যেত বহু প্রজাতির পাখি। কিন্তু দিন দিন বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ায় বহু পশুপাখি প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিশ্বে মোট আট হাজার ৬৫০ থেকে আট হাজার ৭০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে কেবল ভারতীয় উপমহাদেশে রয়েছে এক হাজার ২০০ প্রজাতির পাখি। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বাস করে। অন্যগুলো অতিথি পাখি। গভীর অরণ্য, বনজঙ্গল, জলাশয়, নদ-নদী, চরাঞ্চল ও গ্রামীণ জনপদে প্রায় সারাবছর দেশী প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। আর শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখিরা এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে। এর মধ্যে ৪১ প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে। এগুলোর মধ্যে কালো তিতর, জলার তিতির, কাঠময়ূর, বোঁচা হাঁস, রাজশকুন, বাঘা বক, কোদালি বক, হাড়গিলা, রঙিলা বক, পাঙ্গা, কালো বুক তোতা চঞ্চু ও সাত ভাইসহ ১৯টি প্রজাতি মহাবিপন্ন অবস্থায় এছাড়া। বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে ১৮ প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে মথুরা, কালো গুন্ড্রি, কাঠধনেশ, পুটিয়াল ধনেশ, লাল ট্রোগন, মাছরাঙা, চেরি ঠোঁট মালডোহা, হুতুম পেঁচা, রাতচরা, গইলো হাঁস, হটটিটি, জলখোর, গাংচিল, সাদা ঈগল, মদনটাক, পার্পেল কোচায়া ও রেখাঙ্কিত মাকড়সাভুক পাখি। খাল-বিল কমে যাওয়ায় দ্রুতগতিতে কমছে সাদাকালো মাছরাঙা, ঘুঘু, হরিয়াল, পানকৌড়ি। কীটনাশকের কারণে কোন কোন প্রজাতির পাখি মারা যাচ্ছে। অন্যদিকে অনেক মূল্যবান প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বন্য শূকর, কুমির, চিতাবিড়াল, হরিণ, গুইসাপ হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীও। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণীর প্রজাতির সংখ্যা ৮৮৯টি। গত ১০০ বছরে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে গ-ার, জলার কুমির, হায়েনা, নেকড়েসহ মোট ১৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী। চোরাকারবারিরা ও চোরা শিকারিরা এবং বিষ, করাত, রাইফেল, বন্দুক নিয়ে বনে ঢুকে অগণিত পশুপাখি ও মূল্যবান গাছ বিনাশ করে থাকে। এমনকি সংরক্ষিত বনেও পশুপাখি এভাবে মারা হয়। এভাবে বন্যপ্রাণী নির্দ্বিধায় হত্যা ও তাদের চামড়া, শিং, দাঁত এবং হাড় নিয়ে ব্যবসা করার কারণে অনেক প্রজাতির পশুপাখির বিলুপ্তি ঘটচ্ছে। এসব কারণে প্রাণবৈচিত্র্যের সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। পরিবেশ তথা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গাছপালা, বন, পশুপাখি, নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সবার দায়িত্ব হলো, এ জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এগিয়ে আসা। এর জন্য দরকার সুন্দরবন, মধুপুর বন রক্ষা করা, এসব বনের পশুপাখিকে বাঁচানো। সবাই মিলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পশুপাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখা সম্ভব।
×