ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রামীণ জনপদের আইনশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ২০ এপ্রিল ২০১৫

গ্রামীণ জনপদের আইনশৃঙ্খলা

হঠাৎ করেই যেন গ্রামীণ জনপদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে শুরু করেছে। দেশের নানা স্থানে ডাকাতি, নারী নির্যাতন, খুন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা আর সন্ত্রাসী ঘটনায় আতঙ্কিত গ্রামীণ জনপদ। অনেকে বলছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতার সুযোগে একটি মহল দেশে এই তৎপরতা চালাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক রিপোর্টে জানা গেছে, গত মার্চ মাসেই ৩৪৫জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৭৯টি। গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২জন, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১১জনকে। শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ১০জন। একই সময়ে ১০টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় ২২টি হিন্দু পরিবার, ১০টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। রিপোর্টে ৩জন এসিডদগ্ধ, অপহরণের ঘটনা ১২টি, নারী ও শিশু পাচার ৪জন, ৪৯জন নারী ও শিশুকে হত্যা, যৌতুকের জন্য ২৬জনকে নির্যাতন, একই কারণে ১৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানের চিত্রটি সারাদেশের হলেও বেশিরভাগ গ্রামীণ জনপদেরই। জামায়াত নেতা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের দুই দিন আগে থেকেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন এবং সন্ত্রাসী কর্মকা- চালায় একটি মহল। দুর্বৃত্তরা কোন কোন এলাকায় এই সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়িঘর, দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে হামলা করে মন্দিরেও। কোন কোন স্থানে ভেঙ্গে ফেলেছে মূর্তি। কোথাও পোস্টার লাগিয়ে হিন্দুদের দেশত্যাগের হুমকি দেয়া হয়েছে। চলছে নীরব চাঁদাবাজিও। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার কারণে এ বছর চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব ও বৈশাখী মেলা অনেক স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হতে পারেনি। এ সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর হামলার কারণ যে তাদের জমি-ভিটেবাড়ি দখল করা সেই বিষয়টি এখন স্পষ্ট। দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করা হলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে বাড়ছে আতঙ্ক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাসহ উল্লেখিত সকল ঘটনাই ভাবিয়ে তোলার মতো। কোন বিবেকসম্পন্ন মানুষ এসব ঘটনা সমর্থন করে না। সচেতন মানুষ এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে চাইলেও অনেক সময় পারছে না দুর্বৃত্তদের ভয়ে। নারী নির্যাতনের ঘটনা দেশে বহুদিন ধরেই চলে আসছে। এসব ঘটনা এখনও পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ ইত্যাদি এখনও অব্যাহত রয়েছে। অনেক সময় আইনশৃংখলা কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা সন্ত্রাসীদের মনে ধারণা সৃষ্টি করে যে, কেউ তাদের কিছু করতে পারবে না। আর সেই ধারণা থেকে অপরাধপ্রবণতা আরও বাড়ে। এসব বন্ধ করতে হলে আইনশৃংখলা কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। নির্লিপ্ততা নয়, দ্রুত অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এসব ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে অপকর্মের হোতারা এই ধরনের আরও অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করবে। এটা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এসব অপরাধ কমবে না, বাড়তেই থাকবে। মানুষ চায় এসব অপরাধ সমাজ থেকে চিরতরে দূরে হোক।
×