ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল লাইন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর

আওয়ামী লীগ এলে উন্নয়ন হয়, বিএনপি এলে দুর্ভোগ বাড়ে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

আওয়ামী লীগ এলে উন্নয়ন হয়, বিএনপি এলে দুর্ভোগ বাড়ে

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। সাধারণ মানুষ ভাল থাকে। দেশ দারিদ্র্যমুক্ত হয়। জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর বিএনপি নেত্রীর কিছুই ছিল না। ক্ষমতায় এসে তিনি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে তাঁর পুত্র বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে দেশে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে। বিএনপি মানে উৎপীড়ন, জাতির জন্য একটা যন্ত্রণা। হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ খুন ও আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা তাদের কাজ। তিনি নাকি সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরে যাবেন না। অবশেষে তিনি ঘরে ফিরলেন, তাহলে হরতাল-অবরোধের নামে তিন মাস যাবত অফিসে থেকে কেন তিনি এত মানুষ পুড়িয়ে মারলেন। এখন দুঃস্বপ্ন কেটে গেছে। এখন দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নবনির্মিত কুমিল্লার লাকসাম থেকে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ডাবল লাইনের ট্রেন সার্ভিস ও চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং কাজের উদ্বোধন এবং লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েল গেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ ও বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকেলে লাকসাম রেলওয়ে জংশনে আয়োজিত ভিডিও কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। লাকসামে এ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় এর আগে বক্তব্য রাখেনÑ পরিকল্পনামন্ত্রী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), রেলপথমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মআহ্বায়ক মোঃ মুজিবুল হক, স্থানীয় এমপি তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন প্রমুখ। এ সময় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল, পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ এবং একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলেন এবং রেলব্যবস্থাকে সচল করেন। বর্তমান সরকারও রেললাইন নির্মাণ ও রেলের বগি আমদানি করে আধুনিক ও যাত্রীসেবার উন্নয়নে নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর খালেদা জিয়া ট্রেনে-বাসে আগুন দিয়ে ঘুমন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগে কখনও রেলের এমন সংস্কার ও উন্নয়ন দেখিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি সরকারের উন্নয়ন গতিধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে জনগণের সহায়তা কামনা করেন। রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, শেখ হাসিনার সরকার রেলের উন্নয়ন করছেন আর বিএনপি নেত্রী অবরোধ-হরতালের নামে আগুন দিয়ে রেলের ক্ষতি করছেন। সরকার হটানোর নামে তথাকথিত আন্দোলনে নেমে তিনি এখন বাড়ি ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি এ রেললাইনটি চালু হওয়ায় যাত্রীদের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা সময় কম লাগবে। এছাড়া মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পর্যন্ত আসতে কোথাও থামতে হবে না। তাছাড়া মালবাহী ট্রেন চলাচলে এক নতুন দিগন্ত তৈরি হবে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট আগের চেয়ে অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি ট্রেনে পণ্য পরিবহন আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রেল মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারাদেশের সকল লাইন ডাবল লাইন করা হচ্ছে। এটি চালুর ফলে এই রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে মানুষ রেলপথকেই বেছে নেবে। উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ২০৪ কিলোমিটার রেলপথে সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। সিঙ্গেল লাইন থাকায় এ লাইনে প্রতিদিন ৩৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারত। শনিবার ডাবল লাইন উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এ লাইনে ৭০ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ডাবল লাইনে উন্নীত হওয়ায় এখন থেকে দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে একটি লাইন বন্ধ থাকলেও ট্রেন চলাচল চালু রাখা সম্ভব হবে। সূত্র জানায়, ১৬০৭.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মার্চ। ২০১১ সালের ২ নবেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়। নতুন এ ডাবল লাইনটি চালু হওয়ায় এ রুটের প্রতিটি যাত্রীবাহী ট্রেন আগের চেয়ে কমপক্ষে এক ঘণ্টা কম সময়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পৌঁছতে পারবে।
×