ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বাজেটেও পদ্মা সেতুর জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

আগামী বাজেটেও পদ্মা সেতুর জন্য সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ থাকবে

এম শাহজাহান ॥ একক প্রকল্প হিসেবে পদ্মা সেতুর জন্য এবারও বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হবে। নির্মাণ কাজ শেষ করে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করতে চায় সরকার। সেতুটি চালু হলে দেশের ১৯ জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। আর এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে দেড় থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত। ইতোপূর্বে যমুনা সেতু চালুর পর দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় দেড় শতাংশ বেড়েছিল। সরকার ঘোষিত ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বড় ভূমিকা রাখবে। এই লক্ষ্য পূরণে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে পদ্মা সেতু বিবেচনায় রাখা হয়েছে। চলতি বাজেটে ৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আসন্ন বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে মূল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা লাগবে নদীশাসন ও এ্যাপ্রোচ সড়কসহ আনুষঙ্গিক কাজে। ২০১৮ সালের মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে মূল অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। তাই সেতু নির্মাণে প্রতিবছর বাজেটে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর সরকার এখন পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে চলতি বাজেট ঘোষণায় জানান, পদ্মা সেতু আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার প্রকল্প। এ সেতু নির্মাণ শেষ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলার সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের সরাসরি যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে এবং তাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। যদিও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে দেড় থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত। তাই সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে এই সেতুর নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এবার স্বপ্ন পূরণের পালা। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতেই হবে। কারণ মধ্যম আয়ের দেশ হতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি থাকতে হবে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেড় থেকে ২ শতাংশ জিডিপি বাড়বে। এই জিডিপিই দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাবে। ইতোপূর্বে যমুনা সেতু চালু হলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়েছিল। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের প্রায় ২১ জেলার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। এতে বাড়বে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন হবে এবং কৃষক তাঁর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাবে। এসব কারণে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। তিনি বলেন, আশা করছি, এবারের বাজেটেও সরকার পদ্মা সেতুর জন্য বড় বরাদ্দ রাখবে। এদিকে, বাজেটে পদ্মা সেতু অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে রাখার পাশাপাশি এই সেতু নির্মাণে স্থানীয় ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করে তা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। এতে ব্যাংক গ্যারান্টির শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে পদ্মা সেতু প্রকল্পে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকগুলো তাদের মূলধনের ২০ শতাংশের বেশি ‘নন-ফান্ডেড’ ঋণ দিতে পারবে। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই সার্কুলার জারি করা হয়। সরকারী-বেসরকারী যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেতু নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের অর্থায়ন সহজ করার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
×