ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুনতাসীর মামুন

মনোজগতে মুক্তিযুদ্ধের আধিপত্য না থাকলে দেশবোধের সৃষ্টি হবে কিভাবে?

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

মনোজগতে মুক্তিযুদ্ধের আধিপত্য না থাকলে দেশবোধের  সৃষ্টি হবে কিভাবে?

বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জিয়াউর রহমান জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করেছেন। একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আরেকজন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের। ফলে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সুদূরপরাহত। যদি প্রজন্ম জানে কেন জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী, তাহলে বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ কম। ১৪ এপ্রিল প্রকাশিত অংশের ধারাবাহিকতায় পড়ুন আজকের অংশটি- আগেই উল্লেখ করেছি, পাকিস্তানে ইতিহাস প্রায় উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যে ইতিহাস পড়ানো হয় তা খণ্ডিত ইতিহাস। বদলে, পাকিস্তান স্টাডিজ নামে একটি পাঁচ মেশালি বই পড়ানো হয়। পাকিস্তানী প্রজন্মের কাছে বিকল্প কম। ফলে, সামরিক শাসনকে তারা স্বাভাবিক মনে করে। শরীয়া আইন মনে করে ঐতিহ্য। ইসলামকে মনে করে বিশ্বের সেরা শক্তি। বাংলাদেশেও খুব সম্ভব খালেদা জিয়ার আমল থেকে পাকিস্তান স্টাইলে বাংলাদেশ স্টাডিজ পড়ানো হচ্ছে। আমরা বলেছি, এক খাবলা ইতিহাস পড়ানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। আওয়ামী লীগ আমলে পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের অংশটুকু শুধু সংস্কার করা হয়েছে। আমাদের স্কুলে ইতিহাস পড়তে হয়েছে। এখন পড়তে হয় না। আমরা দাবি করেছি, সব পর্যায়ে অন্তত জাতীয় ইতিহাস [১৯৪৭-১৯৭৫] পড়ানো হোক। আরও আছে, স্কুল-কলেজে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা এত বেশি যে, খেলাধুলা বা সংস্কৃতি চর্চা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। স্কুল পড়ুয়া প্রায় প্রতিটি ছাত্রকে কোচিং ক্লাস করতে হয়। সাংস্কৃতিক জগত থেকে যদি একজন কৈশোর থেকে সম্পর্কহীন হয়ে পড়ে তা হলে দেশ-কাল সম্পর্কে তো সচেতনতা বাড়বে না। ইন্টারনেট একজনকে সংস্কৃতিবান বা দেশপ্রেমিক করে না। তা হলে, কী হলো? স্বাধীন হলাম বটে। কিন্তু মগজে, খানিকটা ব্রিটিশ, খানিকটা পাকিস্তান রয়ে গেছে। এখন আবার, ‘আধুনিক মনস্ক’ হওয়ার এক চিন্তা ঢুকেছে। আমাকে কয়েকজন শিক্ষক জানালেন, শিক্ষা সচিব বলেছেন, মানববিদ্যাসমূহ বিশেষ করে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান উঠিয়ে দেয়া হোক। সেগুলো অনলাইনে জানা যাবে। শিক্ষামন্ত্রীও অনেক সময় এ ধরনের মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগ আমলে যদি শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবের এই ধারণা হয় ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে তাহলে বলতে হবে কপালে আরও দুর্ভোগ আছে। সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা সীমাহীন। ইসলামী ইতিহাস যে খণ্ডিত ইতিহাস এবং তাও অনলাইনে পড়ান উচিতÑ এ ধরনের উক্তি করার মুরদ অবশ্য তাদের নাই। মনোজগতের কথা বলেছিলাম। ছাত্র যারা বেরোচ্ছে তাদের মনোজগতে এখন প্রগতির আধিপত্য কম। দেশ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা কম। একটাই লক্ষ্য থাকে কিভাবে বিদেশ, বিশেষ করে আমেরিকা চলে যাওয়া যায়। এ অবস্থাটা কিন্তু আগে ছিল না। আজ যে ছাত্র রাজনীতিতে আদর্শ নেই, টেন্ডার আর খুন-খারাবি আছে তার কারণ এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র এখন আর ভাল অর্থে রাজনীতি-সচেতন নয়। এ অবস্থা তো আগে ছিল না, এখন কেন হচ্ছে তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। এর একটা কারণ হতে পারে পাঠ্যবই। গত তিন দশকে পাঠ্যবইয়ে প্রগতির চিন্তা ছিল না, ইতিহাসের বিকৃতায়ন হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, বিশ্ববিদ্যালয় পাস একটি ছেলে বিএনপি-আওয়ামী লীগের কথা জানে; কিন্তু দেশের কথা জানে না, এর ইতিহাস জানে না। ইতিহাস জানলে তো দেশপ্রেম জাগবে, কৌতূহলী হবে। ইতিহাস না জানলে তো আর দেশে শেকড় গাড়বে না। বর্তমানের ভিত্তি তো অতীত, আর ভবিষ্যতের ভিত্তি বর্তমান। মনোজগতে আধিপত্য বিস্তারের জন্য জরুরী মানবিক বিদ্যা। এক সময়ে পাশ্চাত্যে মানবিক বিদ্যার ওপর থেকে গুরুত্ব হ্রাস করা হয়। ফলে শিক্ষাবিদরা অনুভব করেন, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মানবিকতা হ্রাস পাচ্ছে। তারপর, যে শিক্ষার্থী যে শাখাতেই পড়ুক না কেন মানবিক বিদ্যার একটি কোর্স তাকে করতেই হয়Ñ বিশেষ করে নিজের দেশের ইতিহাস পড়াটা বাধ্যতামূলক। আমাদের দেশে কি সব পর্যায়ে সব শাখায় নিজের দেশের ইতিহাস পড়ানো হয়? এর উত্তর না। পাকিস্তানে ইতিহাস পড়ানোটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি, বদলে পাকিস্তান স্টাডিজ চালু করা হয়েছে। এর কারণ, গত তিন দশকে পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা যেন অজানা থাকে। তাহলে, যে প্রজন্ম বেড়ে উঠবে তার পক্ষে দেশের প্রকৃত অবস্থা জানার সুযোগ হবে না। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো, সুফিবাদের কথা না জানলে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সে জানবে না। ফলে, বর্তমান শাসনই দেখবে, তুলনা করতে শিখবে না, বিদ্যমান ব্যবস্থাই তার মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করে থাকবে, বিদ্রোহী হবে না। পাকিস্তানে ১৯৭১ সালের পর যে প্রজন্ম গড়ে উঠছে তাদের মনোজগতে এখন আধিপত্য বিস্তার করে আছে ধর্ম, মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ, প্রতিক্রিয়াশীলতা ইত্যাদি। আমাদের দেশেও সেই প্রবণতা দেখা দিয়েছে। গত দু’দশক আমরা অনেকে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ, ঐতিহাসিক, পেশাজীবী সংস্থার কাছে আবেদন করেছি বিষয়টি বিবেচনার জন্য। কিছু হয়নি। কলেজে কলেজে ইসলামী ইতিহাস খোলার আগ্রহ বরং দেখেছি প্রবল। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যতটুকু ইতিহাস পড়ানো হয় তা ১৯৭১ পর্যন্ত। এরপর পড়াতে দেয়া হয় না, কেননা, তা হলে জিয়া ও এরশাদের নষ্টামির কথা পড়াতে হবে। ছাত্ররা জানবে কিভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বদলে জিয়া আদর্শ মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করানো হয়েছে এবং তা যেন অটুট থাকে সেই প্রচেষ্টাই অব্যাহত এবং দুঃখের বিষয়, এই সরকারও সেই ধারা অনুসরণ করছে। মানবিক বিদ্যার অন্যতম বিষয় ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে ক’টি বিভাগ নিয়ে খোলা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন আর ইতিহাস, আর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপকদের এই তিন বিভাগে আমন্ত্রণ করে আনা হয়েছিল। অমর্ত্য সেন যখন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তখন প্রথমে যে ক’টি বিভাগ খোলা হয়েছিল তার মধ্যে ইতিহাস অন্যতম। আজকের বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০০-এর উপরে। এর মধ্যে পুরনো ৪-৫টি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ইতিহাস বিভাগ নেই। বাংলার অবস্থাও অনুরূপ। বাংলা তো সব বিভাগে থাকা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়, আইন করে হলেও। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববিদ্যার বিষয়াবলী অনুপস্থিত। এবার দেখা যাক কলেজের অবস্থা। ঢাকা শহরে মাত্র ৪টি সরকারী কলেজে ইতিহাস পড়ানো হয়। ৮টি জেলার ৩০টি সরকারি কলেজের কোনটিতে ইতিহাস বিভাগ নেই। কোন সরকারী মাদ্রাসায় ইতিহাস পড়ানো হয় না। দেশের ৪ হাজার ৭৫৭টি বেসরকারী কলেজ ও মাদ্রাসায় ইতিহাস পড়ানো হয় না। ইতিহাস বাদ দিই, চাকরির ক্ষেত্রে আজকাল মানবিক বিভাগের কোন শাখাকে যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। বর্তমান সরকারের সাফল্য হিসেবে নতুন কারিকুলাম চালুকে বিবেচনা করা হয়। বিএনপি-জামায়াত আমলের পাঠ্যবই বিকৃতায়নের পর এই প্রচেষ্টা প্রশংসার্হ। ২০০৮ সালের পরে যখন নতুন পাঠ্যক্রম হলো তখন সরকার ১১১টি পাঠ্যবই প্রকাশ করেছিল, তখন পাঠ্যক্রমে ইচ্ছাপূর্বক ইতিহাসকে বাদ দেয়া হয়েছিল। কেননা, যারা পাঠ্যক্রম কমিটিতে ছিলেন তারা দেশের বরেণ্য ব্যক্তি শুধু নন, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী। তারা যদি এটি করে থাকেন তাহলে জেনেশুনেই করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির সভাপতি। এর সদস্য ২০ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ পদাধিকারবলে। বরেণ্য শিক্ষাবিদদের মধ্যে ছিলেন ড. কাজী শহীদুল্লাহ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপকও, ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাসের ড. মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহীন মাহবুবা কবির। তারা যে পাঠক্রম তৈরি করেছেন তাতে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত থাকছে বাংলাদেশ ও বিশ্ব-পরিচয় (এর সম্পাদকমণ্ডলীতে আমি ছিলাম), এখানে ৬টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত, তার মধ্যে ইতিহাস একটি। এখানে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা আছে ১০০ নম্বরের। ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে আবশ্যিক বিষয়ের অন্যতম ১০০ নম্বরের ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা (১০০ নম্বর) ও ১০০ নম্বরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। ইতিহাস আবশ্যিক নয়। ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর তিনটি শাখা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা। বিজ্ঞান শাখার জন্য ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ আবশ্যিক বিষয়। কিন্তু ব্যবসায় শিক্ষার জন্য ‘বিজ্ঞান’ পাঠ আবশ্যিক হলেও ইতিহাস পড়তে হবে না। এমনকি ঐচ্ছিক হিসেবেও নেই। তবে, মানবিক শাখা থেকে ইতিহাস একেবারে বাদ দেয়া যায়নি। একাদশ ও দ্বাদশ পর্যায়ে ৬টি শাখার জন্য আবশ্যিক হলো বাংলা, ইংরেজী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। এ পর্যায়ে শাখা ৬টি মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসা, ইসলাম শিক্ষা, গার্হস্থ্য ও সঙ্গীত। এসব শাখার কোনটিতে ইতিহাস বাধ্যতামূলক নয়। মানবিক শাখায় আছে ইতিহাস/ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি/ইসলাম শিক্ষা, অন্য দুটি শাখায় ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে হিউম্যান রাইটস ও জেন্ডার স্টাডিজ রাখা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে শিশু অবস্থা থেকে জোর দেয়া হচ্ছে নৈতিক ও ধর্ম শিক্ষা, ইসলাম শিক্ষা ও ইসলামের ইতিহাসের ওপর। এই কারিকুলাম তৈরির ভিত্তি হিসেবে যে ওয়ার্কশপ ও গবেষণা করা হয়েছে সেখানে শিক্ষাক্রম উন্নয়নের নীতিমালা হিসেবে প্রথমেই ঘোষণা করা হয়েছেÑ ‘ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের ভিত্তিতে দেশপ্রেমের বিকাশ।’ সেই পরিপত্রে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০১২-এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ নম্বরে ‘ধর্ম শিক্ষাসহ সকল বিষয়ে নৈতিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান।’ ২ নম্বরে “ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশের মাধ্যমে দেশাত্মবোধ ও জাতীয় ঐক্য বিকাশের ওপর গুরুত্ব প্রদান। দেশাত্মবোধ বিকাশের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকতাবোধ প্রয়াস।” ষষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে ৩ ও ৪ নম্বরে “মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীর মধ্যে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা এবং সম্ভাবনাময় নাগরিক হিসেবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করা।” ৪. “শিক্ষার্থীর মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে সুসংহত জ্ঞানের ভিত রচনা তথা এর ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আর্থ-সামাজিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার প্রতি আগ্রহ ও যোগ্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের প্রগতি ও উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম করে গড়ে তোলা।’ ধর্ম, নৈতিক, ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামী শিক্ষা এবং ধর্মশিক্ষা দিয়ে যদি এই বুদ্ধিজীবীবৃন্দ ও সরকারী কর্তারা মনে করেন উপযুক্ত আদর্শ বাস্তবায়ন সম্ভব তা হলে বলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা হবুচন্দ্র রাজার রাজত্বে বাস করছি। বাধ্যতামূলকভাবে এসব পড়ে আর যাই হোক ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ’, ‘দেশপ্রেম’ এবং ‘গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা’ বোধ জাগবে না। তবে হ্যাঁ, জিয়া চেতনা, সাম্প্রদায়িকতা বোধ, শেকড়হীনতা ও জঙ্গী মৌলবাদের চেতনা জাগ্রতকরণে সহায়ক হবে। দেশপ্রেমহীন জিয়া ও এরশাদ, নিজামী এবং খালেদা মনোজগতে যে আধিপত্য বিস্তার করে গেছেন বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে এই সরকার তার পাল্টা কোন ব্যবস্থা নেয়নি গলাবাজি করা ছাড়া। এইবারে সুযোগটিও তারা হারাচ্ছে। কয়েকদিন আগে কমিউনিস্ট নেতা মঞ্জুরুল আহসান খান ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নের গৌরবময় দিনের সঙ্গে বর্তমানে ছাত্রদের তুলনা করে বলেছিলেন, মুনতাসীর, আমরা হটে যাচ্ছি, কারণ মনোজগতে আমরা আধিপত্যহীন।” অন্য রাজনৈতিক নেতারা যদি গভীরভাবে এটি চিন্তা করতে পারতেন তাহলে তো রাজনীতির মান উন্নত হতো, আমাদের এসব লিখতে হতো না। গত তিন দশকে আমরা হটে গেছি এবং এখন আরও হটে যাচ্ছি। আজ ছাত্রদের টেন্ডারবাজি, রাজনৈতিক বোধহীনতা, আলু-পটলের মতো চিন্তা, শৃঙ্খলাহীনতা দেখে আপনারা দুঃখবোধ করেন কেন? রাজনৈতিক নেতারা তাদের মনোজগত এভাবে নির্মাণে সহায়তা করেছেন। এই সরকারও তাতে সহায়তা করেছে। শুরুতে যেসব সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছি এগুলো স্থায়ী হবে না, ফলদায়কও হবে না, যদি না মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করা যায়। আর মানবিক শাখা বিশেষ করে নিজের দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে যদি বোধ না জন্মানো যায় তাহলে দেশপ্রেমিক মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাবে। ঔপনিবেশিকোত্তর ঔপনিবেশিক মনের উপাদান হবে, ব্রিটিশ, বাংলাদেশী, বাঙালী ও আমেরিকান মানসিকতা বিভ্রান্ত অমানবিক এক মনোজগত। (সমাপ্ত)
×