ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দলে বিদ্রোহের আশঙ্কা

রাহুলই কংগ্রেস প্রধান হবেন

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

রাহুলই কংগ্রেস প্রধান হবেন

ভারতের সরকারবিরোধী কংগ্রেস দলের নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীকে তার মা সোনিয়া গান্ধীর স্থলাভিষিক্ত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দলে বিদ্রোহ দেখা দিতে পারে। কংগ্রেস সহসভাপতি রাহুল গান্ধীকে চলতি বছরের শেষ দিকে দলের শীর্ষ পদে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রায় দু’মাস অজ্ঞাত কারণে রাজনীতি থেকে অনুপস্থিত থাকার পর রাহুল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লী ফিরে আসেন। খবর হিন্দু ও টেলিগ্রাফ অনলাইনের। রাহুলের পদোন্নতি হলে তিনিই হবেন নেহেরু গান্ধী পরিবারের পঞ্চম সদস্য যিনি ভারতের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেবেন। এ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, রাহুলের পিতামহী ইন্দিরা গান্ধী, পিতা রাজীব ও মা সোনিয়া দলটির প্রধান হন। কিন্তু রাহুল দলের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত বলে দলের অনেকেই বিশ্বাস করেন না। রাহুল এমন এক সময় ফিরে এলেন যখন কংগ্রেস নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল এক বিশাল সমাবেশের পরিকল্পনা করছেন। রাহুলের ৫৬ দিনের অনুপস্থিতিকালে ভূমি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে বিরোধী দলকে এক বড় প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে দল এসব চেষ্টায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। এতে দলের কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণে রাহুলের উপযুক্ততা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। তাছাড়া, যখন কংগ্রেস ভূমিনীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করছে তখন পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে রাহুলের অনুপস্থিতিতে সহকর্মীরা বিরক্ত হন। এর আগে তারা তার নেতৃত্বে দল গত বছরের সাধারণ নির্বাচনে সবচেয়ে শোচনীয় ফল করায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এ নির্বাচনে ১৬০ এরও বেশি কংগ্রেস পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) তাদের আসন হারান এবং নিম্নকক্ষ লোকসভায় দলের মাত্র ৪৪ জন সদস্য রয়েছে। পাঞ্জাবের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, দিল্লীর জনপ্রিয় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত এবং তার পুত্র প্রভাবশালী সাবেক এমপি সন্দ্বীপ দীক্ষিত সবাই দলকে নেতৃত্ব দিতে রাহুলের প্রস্তুতি নিয়ে আবার ভেবে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। অমরিন্দর সিং এক সাক্ষাতকারে বলেন, সোনিয়া গান্ধীরই সভানেত্রী হিসেবে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া উচিত এবং সহসভাপতি রাহুলের উচিত সভানেত্রীকে সহায়তা করা। শীলা দীক্ষিত রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে প্রকাশিত খবরের সত্যতা অস্বীকার করেন, কিন্তু তিনি এ কথা নিশ্চিতভাবে বলেন যে, সভানেত্রী হিসেবে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কাজ করে দলের সদস্যরা খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তার পুত্র সন্দ্বীপ রাহুলের একজন এমপি হওয়া সত্ত্বেও তার কৃতিত্বের অভাবের কথা উল্লেখ করেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে সন্দ্বীপ দলের নেতা হিসেবে রাহুলকে নিযুক্ত করা এক বল্গাহীন ঝুঁকিই হবে বলে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, আমরা ৬৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছি। খুব কমসংখ্যক লোকই আমাদের কোন সুযোগ দিচ্ছে। আমরা এখন আগেকার সে কোন সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি দুর্বল। এটি কংগ্রেসের ঝুঁকি নেয়ার সময় নয়। তিনি বলেন, নেতাকে অবশ্যই অনুপ্রেরণাদায়ক হতে হবে এবং সোনিয়া গান্ধী সব সময়েই অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছেন। রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে কোন কোন মহলে প্রশ্ন ওঠা সত্ত্বেও দল চলতি বছরের শেষ দিকে তাকে দলের প্রধান পদে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। রাহুলের ভগিনী প্রিয়াঙ্কাকে দলের নেতৃত্ব পদে আসীন করানোর জন্য সময়ে সময়ে আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ তার পিতামহী ইন্দিরা গান্ধীর কিছু কিছু রাজনৈতিক দক্ষতা আর রয়েছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু নেতৃস্থানীয় ভাষ্যকার বীর সিংভি বলেন, যা কিছুই ঘটুক না কেন, রাহুলকে দলের প্রধান করা হবে বলেই তিনি মনে করেন। ৪৪ বছর বয়স্ক রাহুল ব্যাঙ্কক থেকে এক থাই এয়ারওয়েজ বিমানে বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লী পৌঁছে সরাসরি তার বাসভবনে চলে যান। সেখানে তার মা ও ভগিনী অপেক্ষা করছিলেন।
×