ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাঙালীর উৎসবে বন্ধ হোক ভুভুজেলা উৎপাত

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

বাঙালীর উৎসবে বন্ধ হোক ভুভুজেলা উৎপাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালী সংস্কৃতির নিজস্ব বাদ্য বাজনার মধ্যে নতুন এক আপদ এসে যোগ হয়েছে। এক কথায় যাকে উপদ্রব বলা যায়। এ কেমন বাঁশি, সুর যার বিষের মতো। কান ফাটা, বিকট আওয়াজ। যা পরিবেশ দূষণের দিক থেকেও ওস্তাদ। অসহ্য এই যন্ত্রের নাম ভুভুজেলা। বাণিজ্যিক স্বার্থে এই সংস্কৃতি ধারণ করার চেষ্টায় একটি মহল তৎপর। যার মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও চলছে সমানতালে। ইদানীং এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যে কোন উৎসবে বাঙালী মহানন্দে এক ধরনের বাঁশি বাজাচ্ছে। পহেলা বৈশাখ তো বটেই, ষোলোই ডিসেম্বর, ছাব্বিশে মার্চ, এমনকি একুশে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় যে কোন উৎসব পার্বণে! বড়, ছোট, মাঝারি এই বাঁশিগুলোতে আস্তে করে ফুঁ দিলেই তৈরি হয় বিরাট-বিকট আওয়াজ। কর্কট এই ধ্বনী হৃদযন্ত্র কাঁপিয়ে তোলে। মস্তিষ্কের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। ভুভুজেলা নামক অদ্ভুত এ বাদ্যযন্ত্রটি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময়। বাহারি রং-ঢঙের বিরাট লম্বা একখানা বাঁশি যে যার মতো বাজাচ্ছে, বিকট আওয়াজ হচ্ছে, তাতেই যেন পূর্ণতা পাচ্ছে সবার আনন্দ! দক্ষিণ আফ্রিকান এই ফুটবলীয়-সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে আত্তীকরণ করতে বাঙালী বেশি দিন দেরি করেনি! চট করেই নিজের সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রধান উপাদান বানিয়ে ফেলেছে ভিনদেশি এই বাদ্যযন্ত্রটাকে! বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ভুভুজেলার প্রসার হয়েছিল ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময়। এরপর থেকেই এর বাড়বাড়ন্ত। এবারের পহেলা বৈশাখে এর ব্যাপকতা ছিল অনেক। ভুভুজেলার বিকট শব্দে রাস্তা দিয়ে চলাই দায় ছিল। খোদ রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে গেছে এই বাঁশি। পহেলা বৈশাখ আমাদের নিজস্ব উৎসব; একান্তই বাঙালীর। বাংলার আবহমানকালের ঐতিহ্য আর পরম্পরাই এ উৎসবের প্রধান উপাদান। সকল নাগরিক ব্যস্ততা, যান্ত্রিকতা আর অস্থিরতা ভুলে গিয়ে আমরা যেতে চেষ্টা করি শিকড়ের খুব কাছাকাছি। উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি আমার ঐতিহ্য, আমার সংস্কৃতি, আমার বাঙালিত্ব। বাঁশের বাঁশি, ডুগডুগি, ঢোল, একতারা-দোতারা, নাগরদোলা, লোকজ গান, মাটি-বেত-বাঁশের তৈরি শৌখিন দ্রব্যাদি বৈশাখী আয়োজনে ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয়। কিন্তু অপরূপ সৌন্দর্যম-িত আমাদের এ বর্ণিল উৎসবে হঠাৎ করেই আবির্ভাব এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভিনদেশি এক উপকরণ, ভুভুজেলা। গ্রাস করে ফেলছে আমাদের প্রাণের উৎসবের জৌলুস। আনন্দোৎসবকে করে তুলছে বিষাদময়, যন্ত্রণাময়। ভুভুজেলার এ বিকট উৎপাতে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে স্বাভাবিক পথচলা, কথাবার্তা, আড্ডা। উৎসবস্থলগুলোতে আনন্দ উপভোগের চেয়ে কান চেপে ধরে রাখা বা কোনমতে ‘নিরাপদ স্থানে’ পৌঁছানোটাই যেন এখন প্রধান দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। সুষ্ঠু-সুন্দর উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় রাখতে হলে ভুভুজেলা নামক দানবীয় দাপাদাপিকে এবার না থামালেই নয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় উৎসবে এই উৎপীড়ক যন্ত্রণাময় আপদটির গলা চেপে ধরা এখন সময়ের দাবি। মনে রাখতে হবে, ভুভুজেলা বাজানো আমাদের সংস্কৃতির কোন
×