ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুজিবনগর দিবস

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

মুজিবনগর দিবস

বাঙালী জাতির ইতিহাসের এক মহত্তম দিবস আজ ১৭ এপ্রিল। সহস্র বছরের সাধনা শেষে জাতি হিসেবে প্রথম বাঙালীদের সমন্বয়ে গঠিত সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণের দিন। বাঙালীর স্বাধীনতা অর্জনের ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের অনন্য দিন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি রচনার দিন। ইতিহাসের পাতায় দিবসটি ‘মুজিবনগর দিবস’ হিসেবে চিরস্মরণীয়। জাতির বীরত্বগাথা সৃষ্টির এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল দিনটি। কত শত সংগ্রাম, আন্দোলন, ত্যাগ-তিতিক্ষা, বিদেশী ও ঔপনিবেশিক এবং দখলদার শাসকের জেল-জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, ত্রাসন সয়ে বাঙালী যে তার স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল- এই দিনটি সেই আনুষ্ঠানিকতাকে ধারণ করে মুক্তির লড়াইকে ত্বরান্বিত করেছিল মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে। ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে। স্থানটির নামকরণ হয় মুজিবনগর। এর আগে ১০ এপ্রিল সরকার ঘোষণা করা হয়। যাকে প্রবাসী সরকার, অস্থায়ী সরকার, মুজিবনগর সরকার, যুদ্ধকালীন সরকার বা বিপ্লবী সরকার নামে অভিহিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক করে ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা হয়। যার ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশ, পরবর্তীকালে যা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং মন্ত্রী হিসেবে এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান প্রমুখ শপথ নেন। এই সরকারের নেতৃত্বে নয় মাস যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। রাজনৈতিক কর্মকা-, কূটনৈতিক ও প্রচার ক্ষেত্রে বিশ্বজনমত গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল অস্থায়ী সরকার। এই সরকারের দক্ষতার ফলেই মাত্র নয় মাসে বাংলাদেশ হানাদার পাকিস্তানীদের দখলমুক্ত হতে পেরেছিল। পঁচাত্তর-পরবর্তী সময় থেকে দেশে যে ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসব শুরু হয়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে সে বিকৃতির চূড়ান্তরূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সরকারের অংশ বানিয়ে জাতীয় ইতিহাসের প্রকৃত নায়কদের কৃতিত্ব মুছে ফেলার অপপ্রয়াস অব্যাহত রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এর রয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতা। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন ছিল অবিচল রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সেই সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধের নয় মাস তিনি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষের সত্তায়, ছিলেন মূল চালিকাশক্তিস্বরূপ। সেই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে। যেখানে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে নেতৃত্বে নিয়ে গঠিত হয় বিপ্লবী সরকার। শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ধারণ করেই সেই সরকার হয় মুজিব নগর সরকার। মুজিবনগর সরকারের তাৎপর্য এখানেই। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা শুধু নয়, ৩ নবেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ১৫ আগস্ট হত্যার বিচার হয়েছে, তবে হত্যাকারীদের অনেকেই পলাতক। এবার এমন এক সময়ে মুজিবনগর দিবস পালন করা হচ্ছে যখন দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের বিচার ও সাজাপ্রদানের কাজ চলছে। স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পর মুজিবনগর দিবস পালন হচ্ছে নতুন আলোকে, নতুন প্রজন্মের চেতনাকে শাণিত করার লক্ষ্য নিয়ে। জাতি স্মরণ করবে তার মহান নেতাদের। যাঁদের শ্রমে, কর্মে, নিষ্ঠায় বাঙালী পেয়েছে স্বাধীন স্বদেশ।
×