ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উহুম নারে উহুম না... বদলে যাচ্ছে বর কনের বাহন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

উহুম নারে উহুম না... বদলে যাচ্ছে বর কনের বাহন

মোঃ খলিলুর রহমান ॥ পালকি ছিল এক সময়ের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। বর-কনের বাহন। এটা ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সেই ঐতিহ্যবাহী পালকি। এখন আর খুব একটা পালকি চোখে পড়ে না। অনেকের কাছে এখন শুধুই স্মৃতি। বর-কনে বহনে পাল্টেছে যান। পালকির পরিবর্তে এসেছে নানা বাহন। পালকির পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে প্রাইভেটকার, মাইক্রো কিংবা ঘোড়ার গাড়িসহ নানা যানবাহন। বর্ণিল সাজে সাজিয়ে সেই বাহনকে করা হয় আরও আকর্ষণীয়, বাড়ানো হয় সৌন্দর্য। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইদানিং বর-কনের বাহনে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হেলিকপ্টারে চড়ে কনেকে নিয়ে যান ইতালী প্রবাসী এক বর। হেলিকপ্টারে বর-কনে বহনের ঘটনা বেশ আলোচিতও হয়। এক সময়ে গ্রামবাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হতো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেত বরের আত্মীয়-স্বজনরা। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। চার জনে মিলে পালকি বহন করত। সামনে পেছনে দু’জন করে পালকি কাঁধে নিত। প্রথমে বরকে পালকিতে করে তার নিজ বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হতো। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বর-কনেকে একসঙ্গে আবার বরের বাড়িতে নিয়ে আসত। পথে পালকিওয়ালাদের গানের সুরে সুরে মুগ্ধ হতেন আশপাশের মানুষ। পালকিওয়ালাদের সেই বিখ্যাত গান ‘উহুম নারে, উহুম না’ আর নাচ দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত শিশু-কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষ। এভাবেই পালকি দিয়ে বর-কনে বাহনের দৃশ্য ছিল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। পালকি না থাকলেও আছে প্রাইভেটকার, মাইক্রো ও ঘোড়ার গাড়িসহ নানা মোটর যান। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বর-কনে বহনে রিক্সাও ব্যবহার করতে দেখা যায়। মিজমিজির বাসিন্দা আব্দুল মালেক মিয়া (৬২) জানান, ১৯৮০ সালে তিনি পালকিতে চড়ে বিয়ে করেছেন। এখন সেই পালকি তার কাছে শুধুই স্মৃতি। একই এলাকার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম (৩৩) জানান, তিনি বিয়ে করেছেন ঘোড়ার গাড়িতে করে। ঘোড়ার গাড়িতে চড়েই তার বিয়ে করার শখ ছিল। বর্তমানে যোগ হয়েছে হেলিকপ্টারও। যদিও এটি খুবই ব্যয়বহুল। তবে হেলিকপ্টারে চড়ে অনেক বরই বিয়ে করতে শ্বশুরবাড়ি আসছে। এমনি একটি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকায়। বর ফারুক হোসেন ইতালী প্রবাসী। বরের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের পাশের রূপগঞ্জে। আড়াই লাখ টাকা দিয়ে হেলিকপ্টার ভাড়া করে কনেকে নিজ বাড়িতে ধুমধাম করে নিয়ে গেছেন ফারুক হোসেন নামে এক বর। মিজমিজির বাতানপাড়ার পরিত্যক্ত এক সবজি ক্ষেতে অবতরণ করে ওই হেলিকপ্টারটি। হেলিকপ্টারে বর এসেছেÑ খবরটি মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ছুটে আসতে থাকে হাজারো মানুষ। শত শত শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী লোকজন ভিড় করতে থাকে হেলিকপ্টারের চারপাশে। অনেকেই হেলিকপ্টারের সঙ্গে ছবিও তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর ফারুক হোসেন কনে মাকছুদা আক্তার শিখাকে নিয়ে হেলিকপ্টারেই উড়ে যান তার পিত্রালয় রূপগঞ্জে। ফারুক হোসেন বলেন, ছোট বয়স থেকেই তার স্বপ্ন ছিল হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করা। সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়েছে। মিজমিজির বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জে হেলিকপ্টারে বর আসার ঘটনা এটাই প্রথম। পালকিতে করে বিয়ের বর-কনে আসতে দেখেছি। এখন হেলিকপ্টারে চড়ে বর আসার দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হলো। ভবিষ্যতে আরও উন্নত কোন প্রযুক্তির যানে বর-কনে আসতে দেখব জানি না। এটাই এখন দেখার বিষয়।
×