ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ভারতের নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি’র কানেকশন খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা

কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর কলকাতায় জঙ্গী নেতাদের গোপন বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

কামারুজ্জামানের ফাঁসির পর কলকাতায় জঙ্গী নেতাদের গোপন বৈঠক

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ভারতের নিষিদ্ধ স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার (সিমি) কানেকশন পেয়েছে গোয়েন্দারা। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি হওয়ার পর সক্রিয় হয়ে উঠেছে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নিষিদ্ধ সিমি সংগঠনটি। সিমি সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা কামারুজ্জামানের। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কামারুজ্জামানের ফাঁসি হওয়ার ঘটনায় তার রুহের মাগফেরাত কামনা করার জন্য এক মিলাদ ও দোয়ার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কলকাতায়। কলকাতার এই অনুষ্ঠানে সিমি সংগঠনের সাবেক নেতারা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নিষিদ্ধ সিমি সংগঠনের সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াত-শিবির কানেকশনের গোপন তৎপরতার বিষয়ে খতিয়ে দেখা শুরু করেছে গোয়েন্দারা। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও। গোয়েন্দা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করার ঘটনায় ভারতের নিষিদ্ধ স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভভেন্ট অব ইন্ডিয়ার (সিমি) সাবেক নেতারা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। কলকাতার পার্ক সার্কাসের ব্রাইট এলাকার সাবেক এক সিমি নেতার বাড়িতে কামারুজ্জানের মৃত্যুদ- কার্যকর করার ঘটনায় তার রুহের মাগফেরাত কামনা, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শনিবার রাতে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সিমি নেতারা। জঙ্গী বিষয়ক তৎপরতায় নিষিদ্ধ সিমি সংগঠনটির সাবেক নেতাদের সক্রিয় হওয়ার ঘটনাটির বিষয়ে খতিয়ে দেখা শুরু করেছে কলকাতার গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, কলকাতার পার্ক সার্কাস, দরগা রোড ও রিপন স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা কয়েকজন সাবেক সিমি নেতার ডেরায় নিয়মিত আনাগোনা ছিল কামারুজ্জামানের। পশ্চিমবঙ্গের সিমির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা একটি উর্দু সংবাদপত্রের বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে কামারুজ্জামানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কামারুজ্জামানের গ্রেফতারের পরেও একাধিকবার ওই জামায়াত নেতার সমর্থনে ওই পত্রিকাটিতে নানা খবর ছাপা হয়েছে। এই ধরনের খবরের কথা জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক সিমি নেতাদের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। গত অক্টোবরে বর্ধমানের খাগড়াগড় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশ জামা‘আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সংশ্লিষ্টতা পায় গোয়েন্দারা। বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলেই নিহত জেএমবির দুই জঙ্গীর বাড়ি বাংলাদেশে এবং ঘটনার তদন্ত শেষে যে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দেয়া হয়েছে তাতে চার বাংলাদেশী জঙ্গীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে জামায়াতের পাশাপাশি সাবেক সিমি নেতাদেরও যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। আদালতে পেশ করা চার্জশীটে এনআইএর দাবি, বাংলাদেশে হামলার জন্যই জামায়াত নেতারা খাগড়াগড় ও শিমুলিয়ায় জঙ্গী শিবির তৈরি করেছিল। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর দাবি, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতুদ- কার্যকর করার আগে বাংলাদেশের জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের মাধ্যমে বর্ধমানের খাগড়াগড় ও শিমুলিয়া এলাকার জামায়াত নেতারা সংগঠিত হচ্ছিল। কলকাতার সাবেক সিমি নেতাদের মাধ্যমেই কামারুজ্জামান যোগাযোগ রক্ষা করে সেখানকার জামায়াত নেতাদের সহায়তা করেছে। কলকাতায় গ্রেফতারকৃত বেশ কয়েকজন জেএমবির জঙ্গী ও জামায়াত নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কামারুজ্জামানের মাধ্যমে বাংলাদেশের জামায়াতের সঙ্গে কলকাতার সিমি সংগঠনের যোগাযোগের বিষয়টি আবার নতুন করে খতিয়ে দেখার বিষয়টি তদন্তের সামনে চলে এসেছে। বাংলাদেশের বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কলকাতায় যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের রুহের মাগফেরাত কামনাসহ আলোচনা সভার আয়োজন এবং সেখানকার নিষিদ্ধ সিমি সংগঠনের উপস্থিতির মাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার ঘটনাটির বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী তৎপরতার মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে তৎপরতার খবর পাওয়া গেলেও আতঙ্ক বা উদ্বেগের কিছুই নেই। রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহতসহ সতর্ক নজরদারি করা হচ্ছে।
×