স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। তাই বাংলা নববর্ষকে বরণের আয়োজনে কমতি নেই কোথাও। শহরের গ-ি পেরিয়ে রাজশাহীর গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছে নানা আয়োজন। পুরনো ঐতিহ্য রক্ষায় গ্রাম পর্যায়ে নানা আয়োজনে নববর্ষ পালনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী মাঠে রবিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বাংলা লোকনাট্য ও বৈশাখী উৎসব। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার পুঠিয়া শাখার আয়োজনে এ উৎসব চলবে প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী কাজী সাঈদ হোসেন দুলাল জানান, গ্রাম্য ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, নাটক, গান, কবিতাসহ বিভিন্ন আয়োজনে সাজানো হয়েছে ৩ দিনব্যাপী লোকনাট্য উৎসব। এ বছর তাদের উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘এসো প্রাণের আলোয় করি দূর কালের অন্ধকার’।
এদিকে বর্ণিল আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বড় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হবে এখান থেকেই। এছাড়া দু’দিনব্যাপী চলবে মনোজ্ঞ সাং¯ৃ‹তিক অনুষ্ঠানসহ নানা উৎসব। চারুকলা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আবদুল মতিন তালুকদার বলেন, বর্ষবরণে আমাদের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, দু’দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলাসহ বেশ কিছু অনুষ্ঠান। এসবের জন্য সব প্রস্তুতি শেষ।
রবিবার সকালে রাবির চারুকলা বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, রং-তুলি হাতে ব্যস্ত তরুণ-তরুণী। তাদের কেউ বানাচ্ছে বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ, কেউ কার্টুন-ফেস্টুন, কেউবা আবার তাতে আলতো করে এঁকে দিচ্ছে রংয়ের শেষ ছোঁয়া। কয়েকজন শিক্ষার্থী বাঁশ ও কাঠ দিয়ে বানানো দোয়েল ও পুতুলের প্রতিকৃতিতে রং-তুলির শেষ আঁচড় দিতে ব্যস্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্ষবরণের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। শেষ মুহূর্তের রংয়ের আঁচড় দিতেই এখন ব্যস্ত তারা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের মূল আয়োজনে থাকছে চারুকলা বিভাগ। এখন শুধু অপেক্ষা। শুধু চারুকলা বিভাগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেই চলছে জোরেশোরে প্রস্তুতি। সরেজমিন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, এরইমধ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নববর্ষকে বরণে অনুষ্ঠানের জন্য স্থান নির্ধারণ করে রেখেছে। চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। স্ব স্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ব্যানার, কার্টুন আর ফেস্টুন তৈরি নিয়ে। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে তাদের এই আয়োজন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা আয়োজিত অনুষ্ঠান সফল করতে ব্যস্ত রিহার্সেলে। নববর্ষকে বরণ করতে শিক্ষার্থীদের মাঝে এখন সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। রাবির সমকাল নাট্যচক্রের পরিবেশনায় বর্ষবরণের আগের দিন আজ সোমবার থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো ফোকলোর চত্বরে শুরু হবে যাত্রাপালা। নাট্যকলা বিভাগ আয়োজন করছে নাট্যোৎসবের। সব মিলিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে এখন প্রস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে এবং প্রাণের আনন্দে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম শেষে উৎসবে মেতে উঠতে এখন মুখিয়ে আছে পুরো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এদিকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে, বর্ণাঢ্য র্যালি ও দিনভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অপরদিকে জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে শুরু হয়েছে বৈশাখ পালনের নানা আয়োজন। জেলার আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে গ্রামে চলছে প্রস্তুতি। চড়কের মেলা ও লাঠি খেলার আয়োজন করেছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।