স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে সেই এগিয়ে যাওয়ার ফলও মিলেছে। সামনে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলেই বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের বিশ্বাস। এখন আইপিএল খেলতে ভারতেই আছেন সাকিব। আজই তার দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে। এর আগে ইন্ডিয়া উইজডেনকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এমনটিই জানিয়েছেন সাকিব। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।’
অবশ্য সেই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে কিছু কাজও করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মতো দেশে গিয়ে খেলতে হবে। সাকিবই যেমন বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে সফর? না করলে সেরা পর্যায়ে খেলার জন্য আমরা কখনই তৈরি হব না। অবশ্য পরিস্থিতি এখন কিছুটা বদলাচ্ছে। ক’দিন পর পাকিস্তান আসছে বাংলাদেশে, এরপর ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া আসবে। এই মুহূর্তে বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমাদের ঠাসা সূচী। আশা করি বড় দলগুলো অন্তত নিয়মিতই সফরে আসবে। কিন্তু এই দেশগুলোতে সফর না করলে বুঝতে পারব না আসলেই আমরা কতটা ভাল বা খারাপ।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। সবার মন জয় করেছে। সাকিবের মতে, এটা নতুন বাংলাদেশের উঠে আসার সূচনালগ্ন মাত্র। সামনে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। আইপিএল খেলতে যাওয়ার আগে হুঙ্কার ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, ‘এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরাই ফেবারিট। এবারই তাদের হারানোর সেরা সুযোগ।’ সাকিবের হুঙ্কার যে কাজে লেগেছে তা পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুসের মন্তব্যেই পরিষ্কার। ওয়াকার জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে এবার সফরটা বেশ কঠিনই হবে। কঠিন এক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে।’ বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে ভয় যে কোন দেশেরই। বিশেষ করে বিশ্বকাপে এ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডকে যেভাবে হারিয়েছে এবং এর পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে বাংলাদেশ, তাতে টাইগারদের প্রতি সমীহ বেড়ে গেছে।
দলের ব্যাটসম্যান-বোলাররাও চমক দেখাচ্ছেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যেমন টানা দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছেন। পেসার রুবেল হোসেন তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে ‘হিরো’ই হয়ে গেছেন। মাহমুদুল্লাহ সম্পর্কে সাকিব বলেন, ‘আমাদের সবার প্রত্যাশাই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। আমি কেন, দলের কেউই ভাবেনি যে মাহমুদ এতটা ভাল করে বসতে পারে বিশ্বকাপে। অবশ্যই যোগ্যতাবলে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি। কারণ, তিনি একজন অভিজ্ঞ এবং যোগ্যতম ক্রিকেটারই। তবে, বিশ্বসেরা দুটি দলের বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি করাÑ রীতিমতো অবিশ্বাস্য। অসাধারণ। সত্যিই এটা কঠিন ব্যাপার এবং সবার জন্যই অনুপ্রেরণা দায়ী।’
পেসারদের নিয়ে সাকিব বলেন, ‘শুধু রুবেল আর তাসকিনই নন। বাংলাদেশে আরও ভাল মানের পেসার উঠে আসছে। বড় টুর্নামেন্ট ছাড়া তো এভাবে নিজেদের প্রদর্শন করার সুযোগ পাচ্ছে না তারা। শফিউল ইসলাম ১৪৫ কি.মিটারের ওপর বোলিং করে থাকেন। একইভাবে শাহাদাত হোসেনও। তারা সবাই ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করছেন নিয়মিত।’ সাকিব আরও জানান, ‘বাংলাদেশ কিংবা আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো বিশ্বকাপে এসে ভালোকরে এবং এটাই সবার চোখে পড়ছে। অথচ এখানে যারা ভাল করছে, গত দুই তিন বছরে কিন্তু এরা নিয়মিত পারফর্মার। স্থানীয় মিডিয়ায় এ পরিবর্তনগুলো উঠে আসছে। কিন্তু বাইরের মিডিয়ায় এসব আসে না বলে, অন্যদেরও চোখে পড়ে না।’
নিজ দেশের ক্রিকেট কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছেÑ তা নিয়ে সাকিব বলেন, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেক দিন ধরেই আমরা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলছি। বয়সভিত্তিক দলগুলোর কাঠামোও শক্তিশালী করা হয়েছে। এখন আমরা তাই আগের চেয়ে বেশি ভাল মানের খেলোয়াড় পাচ্ছি। অনেক বেশি খেলোয়াড় থেকে দল বেছে নেয়ার সুযোগ হচ্ছে। তরুণরাও দলে আসার পর ভাল খেলছে। বিশ্বকাপে আপনারা সৌম্য-তাসকিনদের দেখেছেন। দলে আসার পর দ্রুত তাদের ভাল খেলাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত। বিশ্বকাপে যেমন খেলেছি, তরুণরাও যদি ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে যায় এ ধরনের খেলা আমরা নিয়মিতই খেলতে পারব। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রা আগের চেয়ে ভাল মানের। রনি তালুকদার যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রাখা হলো। লিটন দাসও ভালা ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এখন দলে জায়গা পাওয়ার জন্য ইতিবাচক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এটা আমাদের আরও উন্নতি করতে সাহায্য করবে।’ সঙ্গে সাকিব যোগ করেন, ‘এবার যেমন বিশ্বকাপের আগে আমাদের দলের বেশিরভাগই আগে কখনও অস্ট্রেলিয়ায় খেলেনি। আমরা তাই রোমাঞ্চিত ছিলাম। সেখানে ভাল খেলায় দেশেও একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। সবার মধ্যে এখন অনেক আত্মবিশ্বাস। এখন আরও বেশি সফর করলে সেটা আমাদের উন্নতিতে আরও সাহায্য করবে।’ সেই উন্নতিতে বাংলাদেশ আরও অনেকদূর এগিয়েও যাবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: