ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

সচেতন মানুষ বিএনপি জামায়াতকে সমর্থন করতে পারে না

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১১ এপ্রিল ২০১৫

সচেতন মানুষ বিএনপি জামায়াতকে সমর্থন করতে পারে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া চরম ব্যর্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। তাঁর শিক্ষা হয়েছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরে আন্দোলন হয় না। আমার প্রশ্ন- যারা বিবেকবান, শিক্ষিত, সচেতন, তারা কী ভাবে বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দেবে, ভোট দেবে? শিক্ষিত-সচেতন মানুষ কখনই যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের সমর্থন দিতে পারে না, ভোট দিতে পারে না। শুক্রবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী-নাশকতাকারীদের কোন প্রকার ছাড় না দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যাতে নাশকতা-সহিংস ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যখন যাকে পাওয়া যাবে তখনই তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, পুড়িয়ে মারার হুকুম দিয়েছে, অর্থ-অস্ত্রের যোগান দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাশকতা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কেননা মানুষের জানমাল রক্ষা সরকারের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে যা যা করার তাই করা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রশ্ববিদ্ধ কর্মকা-ের সমালোচনা করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে এত মানুষকে পুড়িয়ে মারল! কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে কোন কথা বলতে শুনিনি। এই সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে নিশ্চুপ কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর ছাড়াও সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ে বেশ কিছু সুপারিশ সভানেত্রীর কাছে পেশ করেন দলটির উপদেষ্টারা। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আন্দোলনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এই ব্যর্থতার গ্লানি নিয়েই তিনি ঘরে ফিরে গেছেন, আদালতেও হাজিরা দিয়েছেন। তাহলে তিনি কেন এভাবে মানুষ হত্যা করলেন? তবে তাঁর শিক্ষা হয়েছে যে মানুষ হত্যা করে আন্দোলন সফল করা যায় না। ভবিষ্যতে সবাই এখান থেকে যেন শিক্ষা নেয়। তিনি আরও বলেন, সরকার উৎখাতের আন্দোলন নামে বিএনপি-জামায়াত গত তিন মাস ধরে অমানবিক কর্মকা- চালিয়েছে। তারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে। আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য। সেই মানুষকে হত্যা করে এভাবে হত্যা ও মানুষের ক্ষতি করে তারা কী অর্জন করল? তাদের আন্দোলনে কোন জনসম্পৃক্ততাও ছিল না। আন্দোলনের নামে আগুনে দগ্ধ মানুষের যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, একটি জ্বলন্ত মোমবাতির ওপর এক মিনিট হাত রেখে পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে পোড়া মানুষের যন্ত্রণা কী? যারা আগুনে পুড়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বেঁচে আছে, তাদের সারা জীবন এই অমানুষিক যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত তিন মাস ধরে যেসব ঘৃণ্য কাজ করেছে- ন্যূনতম মনুষ্যত্ব ও বিবেক থাকলে কেউই তাদের সমর্থন করতে পারে না। ভোট দিতে পারে না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী কর্মকা-ে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াতের পাশে কেউ থাকতে পারে না। খালেদা জিয়ার উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী তাঁর ঘর ছেড়ে অফিসে ৬৫ জনকে নিয়ে দীর্ঘ ৯২ দিন কাটালেন। এই নোংরামির মানে কী? আর যারা সেখানে ছিলেন, তাদেরও কী ঘর-বাড়ি নেই। তারা বের হলেন না কেন? মানুষের ক্ষতি করে তারা কী অর্জনই বা করলেন? অফিসে বসে থেকে হুকুম দিয়ে তিনি নির্বিচারে মানুষ হত্যা করালেন! এত মানুষ হত্যার দায় কে নেবে? এত মানুষ হত্যা করে, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করে বিএনপি নেত্রী কী অর্জন করলেন? এর জবাব একদিন তাঁকে দিতে হবে। উপদেষ্টাদের সিটি নির্বাচনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান ॥ পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। সূত্র জানায়, বৈঠকে উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যে যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত হতে হবে। এই নির্বাচনকে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের অপপ্রচার ও সন্ত্রাস-নাশকতার জবাব দিতে হবে। প্রমাণ করতে হবে আমাদের সঙ্গেই জনগণ রয়েছে, নাশকতা-সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীদের সঙ্গে নয়। তারা সন্ত্রাস-নাশকতা ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধেই ভোট দেবে। সূত্র জানায়, বৈঠকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়টিই প্রধান্য পায়। বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অধ্যাপিকা ড. সুলতানা শফি বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীদের ‘শত নাগরিক কমিটি’র অনুরূপ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে ‘সহস্র নাগরিক কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিলে তা গৃহীত হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক দলের কেন্দ্রীয় নেতা ড. আবদুর রাজ্জাক দুই-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে বলে জানান। উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আঞ্চলিক সম্মেলন করার প্রস্তাব দেন। বৈঠক সূত্রগুলো আরও জানান, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যত অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে, আদালতের রায়ও কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আবারও সভা-সমাবেশ কিংবা সিটি নির্বাচনে ভোট চাইতে নামলে আমাদেরও জনগণের কাছে তাঁর ৯২ দিনের সন্ত্রাস, নাশকতা ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যার ভয়াল-বীভৎস্য কর্মকা-গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। জঙ্গীনেত্রী খালেদা জিয়াকে ভোট দিলে তিনি যে আবারও সন্ত্রাস-নাশকতার সুযোগ পাবেন, সে বিষয়েও মানুষকে সচেতন করতে হবে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভূমিকার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা চরম সুবিধাভোগী সংগঠন। একটি কিছু হলেই তারা অনেক কথা বলে। আমরা আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইটসের জ্বালায় অস্থির থাকি। হিউম্যান ওয়াচ, রাইটস, অমুক-সমুক সংগঠনে তোলপাড়। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করল এ নিয়ে একটি সংগঠনের তো কোন কথা শুনলাম না? এত মানুষ পুড়িয়ে মারল, পেট্রোল ঢেলে মানুষ পুড়িয়ে মারছে সেটা নিয়ে তারা কোন কথা বা বিবৃতি দেয়নি। সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মেজর জেনারেল (অব) কেএম শফিউল্লাহ বীরউত্তম, অধ্যাপক ড. আবদুল খালেক, অধ্যাপক ডাঃ এম এ মান্নান এমপি, এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী প্রমুখ।
×