ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সামরিক অভিযান ডেকে আনছে বিপজ্জনক পরিস্থিতি

ইয়েমেন সৌদির ভিয়েতনাম!

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১১ এপ্রিল ২০১৫

ইয়েমেন সৌদির ভিয়েতনাম!

ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের দুই সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানে বিমান হামলায় দৃশ্যত বিবদমান উপজাতি ও মিলিশিয়াতে দেশটির বিভাজনই দ্রুততর হয়েছে। অপরদিকে এই সমরিক ব্যবস্থা গ্রহণে অপসারিত ইয়েমেনী প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য সামান্যই অর্জিত হয়েছে। বিশ্লেষক ও বাসিন্দারা এ কথা বলেছেন। বিশ্লেষকদের মতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা তাদের অগ্রাভিযান অব্যাহত রেখেছে এবং জোটের বোমা হামলা থেকে তাদের অনেক অস্ত্র মজুদকে সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে। এই লড়াইয়ে শত শত লোক প্রাণ হারিয়েছে, লক্ষাধিক লোক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় কৌশলগত নগরী এডেনকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের। এই লড়াই ক্রমবর্ধমান সমস্যার জন্ম দিচ্ছে যা প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদির বিরোধী বিদ্রোহী এবং তাঁর অনুগত বাহিনীর মধ্যকার লড়াইয়ের ফলাফলকেও ছাড়িয়ে গেছে। সংঘাতে ইতোমধ্যেই মারাত্মকভাবে অপুষ্টির শিকার দেশটিতে পানি ও খাদ্য সরবরাহে সঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে যা আল-কায়েদা ইন দি এ্যারাবিয়ান পেনিনসুলাকে (একিউএপি) ভূখ- দখলের সুযোগ করে দিয়েছে। হুতি বিদ্রোহীদের অব্যাহত লড়াই এবং আল-কায়েদার সাফল্য অর্জন যুদ্ধবিদীর্ণ দেশটিকে চরম বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি সরকার ও তার মিত্রদের জন্য ইয়েমেনে সামরিক অভিযান কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টডিজ-এর মধ্যপ্রাচ্য কার্যক্রম সংক্রান্ত পরিচালক জন বি, অল্টারম্যান বলেন, এই লড়াইয়ের সম্ভাব্য পরিণতি শুধু লাখ লাখ লোকের বাস্তচ্যুত হওয়াই নয় বরং এতে ব্যাপকভাবে রোগব্যাধির বিস্তার ঘটছে, অনাহারে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এবং পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এমন এক পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্ম দিয়েছে যেখানে চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলো তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে এবং তারা নতুন যোদ্ধা সংগ্রহ করছে। তিনি আরও বলেন, ইয়েমেন লড়াই এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে সেখানে কেউই সঠিক করে বলতে পারবেন না কারা এই লড়াই শুরু করেছে কিংবা কিভাবেই বা এর সমাপ্তি ঘটবে। সুন্নী শক্তিকেন্দ্র সৌদি আরব হুতিদের শিয়াপন্থী ইরানের অনুচর বলে মনে করে। ২৫ মার্চ যে, বিমান হামলা শুরু করা হয় সেটাকে এই অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ইরানের ক্রমপ্রসারমান প্রভাব মোকাবিলায় সৌদিদের একটি প্রয়াসরূপেই দেখা হচ্ছে। ইরান ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননের মতো আরব দেশগুলোতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। এ সপ্তাহে রিয়াদে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে একজন সৌদি সামরিক মুখপাত্র প্রতিবেশী ইয়েমেনে সামরিক অভিযানের এক ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরে বলেন, হুতি মিলিশিয়াদের এডেনে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে এবং হুতিদের অনেক দল লড়াই পরিত্যাগে করছে। সৌদি কর্মকর্তারা যুক্তি দিয়েছেন যে, অভিযানের ফলশ্রুতির বিচার করার জন্য দু’সপ্তাহের সময়সীমা খুবই কম। মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক প্রশ্ন সংক্রান্ত দুবাইভিত্তিক বিশ্লেষক থিওডর কারাসিক বলেন, বিমান হামলা পরিচালনায় সংযুক্ত আরব অমিরাত ও জর্দান সৌদি আরবের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের বোমা হামলার শত্রুপক্ষের বহু সামরিক ঘাঁটি ও অস্ত্রগুদাম ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ইয়েমেনের সমুদ্র উপকূল টহলে সৌদিরা মিসরীয় নৌবাহিনীর সাহায্যও পেয়েছে। তবুও, কারাসিক বলেন, হুতি বিদ্রোহীরা বোমাবর্ষণ থেকে দৃশ্যত সফলভাবে তাদের পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্রের মজুদ লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সম্ভবত বিদ্রোহীদের উত্তরাঞ্চলীয় পার্বত্য শক্ত ঘাঁটি সাআদায় তারা সেগুলো সরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, ওইসব অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস করতে এবং হামলা বন্ধ করে হুতিদের শান্তি আলোচনায় সম্মত করাতে একটি স্থল অভিযান শুরু করা প্রয়োজন। কারাসিক বলেন, দেখা যাচ্ছে কেবল বিমান হামলা শুত্রু স্থল বাহিনীর অস্ত্র ও সক্ষমতা ধ্বংস করতে পারবে না। তারা ছড়িয়ে পড়বে এবং পরবর্তী সময়ের জন্য অস্ত্র লুকিয়ে ফেলার সুযোগ পাবে। সম্ভাব্য অভিযানে স্থল বাহিনী নিশ্চিতভাবে হুতি মিলিশিয়াদের কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে। ঝানু গেরিলা যোদ্ধা হুতিরা ২০০৯-এ এক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে সৌদি আরবের দক্ষিণে কিছু অংশ দখল করে নেয়। সে সময় তারা এক শ’ সৌদি সৈন্যকে হত্যা করে। তিনি উল্লেখ করেন, সৌদি আরব ইয়েমেনকে নিজেদের বাড়ির পেছনের আঙিনা বলে গণ্য করে থাকে। সৌদিদের সম্পর্কে বলতে গেলে, এটা তাদের স্বদেশের লড়াই, তাদের সরকারের অস্তিত্বের প্রশ্ন। একজন ইয়েমেনী বিশেষজ্ঞ এবং কার্নেগি মিডল ইস্ট সেন্টারের ভিজিটিং স্কলার ফারিয়া আল-মুসলিমি বলেছেন, ইয়েমেনকে আবার একত্রিত করা অসম্ভব হতে পারে। সৌদিদের সামনে সুস্পষ্টভাবে কোন সামরিক অথবা কূটনৈতিক নিষ্ককণ্টক পথ নেই। এটা (ইয়েমেন) তাদের জন্য ভিয়েতনাম হয়ে উঠছে।
×